কাওসার রহমান, মাদ্রিদ (স্পেন) থেকে ॥ স্থবির হয়ে পড়া জলবায়ু আলোচনায় প্রাণ ফেরাতে নানা উদ্যোগের মাঝেই বাংলাদেশ জলবাযু অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলেছে, কোন মার্কেট ম্যাকানিজম থেকে নয়, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন হতে হবে সরকারী অর্থে।
বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে জলবায়ু আলোচনার হাই লেভেল সেগমেন্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ দাবি জানান। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন মার্কেট ম্যাকানিজমের ওপর চাপাতে চাইছে। মার্কেট ম্যাকানিজম হলে মুনাফার বিষয় থাকবে। মুনাফা না হলে মার্কেট ম্যাকানিজম থেকে থেকে কোন অর্থ আসবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন হতে হবে সরকারী অর্থ। অন্য কোন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো মেনে নেবে না।
গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডে এ পর্যন্ত ৯৫০ কোটি ডলারের কিছু বেশি জমা হয়ছে। অথচ বাংলাদেশ এই তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ডলার পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলো সামরিক খাতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। অথচ গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র এ ফান্ডে ৩০০ কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু একশ’ কোটি ডলার প্রদানের পর বাকি ২০০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা হতাশাজনক।
তিনি বলেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড গঠন করা হয়েছে তাতে ক্ষতিপূরণ হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ পাচ্ছে না। মূলত অর্থপ্রদান প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ পাচ্ছে না। তাই আমরা অর্থ প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্ষম বলেই এ পর্যন্ত গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ৯ কোটি ডলার পেয়েছে। শুধু সক্ষমই নয়, বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম দেশ যারা জলবায়ুু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাকশনপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। নিজের বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এ ফান্ড থেকে এ পর্যন্ত ৭২০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে সক্ষমতার প্রশ্ন নয়, জটিল প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশ গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ পাচ্ছে না। আমরা এই জটিল প্রক্রিয়ার সহজীকরণ চাই।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের নেতৃত্বে স্থবির হয়ে পড়া জলবায়ু আলোচনায় গতি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যাতে মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফল বের করে আনা যায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিযার সিভিল সোসাইটিও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জলবায়ু আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা আগামী বছর থেকে প্যারিস চুক্তি কার্যকর করতে সব কাজ মাদ্রিদে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন কোস্ট ট্রাস্ট এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। যৌথ আয়োজক চিলি এবং স্পেনও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মাদ্রিদ জলবায়ু আলোচনাকে সফল করতে।