অনলাইন ডেস্ক ॥ গত মাসে অলি আহমদের ঘোষিত এলডিপির কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম।
সোমবার সকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাদ পড়া আরেক নেতা আবদুল করীম আব্বাসীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
সেলিম বলেন, “কর্নেল অলির সাথে রাজনীতি করা যায় না। সেজন্য আমরা আবদুল করীম আব্বাসীকে সভাপতি করে সাত সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করছি।”
কমিটিতে সাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব হিসেবে এবং আবদুল গনি, এম এ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার ও কাজী মতিউর রহমান সদস্য হিসেবে থাকবেন।
সমন্বয় কমিটি সারা দেশে এলডিপির নেতা-কর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নেবে বলে সেলিম জানান।
তিনি বলেন, “এই সমন্বয়ক কমিটির মাধ্যমে বিএনপির সাথে যুক্ত থাকবে এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে থাকবে।”
এই দুই নেতার নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গঠিত এলডিপি দ্বিতীয় বারে মতো ভাঙলো।
সংবাদ সম্মেলন সাবেক হুইপ আবদুল করীম আব্বাসী বলেন, অলি আহমদ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কোনো কিছু চিন্তা করেন না। উনি একবার ছাতা এদিকে ধরেন, আরেকবার ছাতা ওদিকে ধরেন।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কেউ জানে না। এই বিএনপি ছাড়লাম, এবার এলডিপি ছাড়তে চলেছি, বলতে পারেন ছেড়েই দিয়েছি।”
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অলির সঙ্গে একজন (রেদোয়ান আহমদ) ছাড়া আর কেউ নেই। তার কমিটি অকার্য্কর, তাতে ২০/২৫ সক্রিয় নেতা-কর্মী আছে।
আপনারা কি এলডিপিতে আছেন প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেন, “আমরাই এলডিপি, আমরা এলডিপি নিয়েই আছি। আমাদের এলডিপির সভাপতি পদ রয়েছে। সেই পদে এখন সভাপতি হচ্ছেন আবদুল করীম আব্বাসী।”
‘তার সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না’
অলির বিষয়ে এলডিপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “তার সাথে এখন আমাদের রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। উনার প্রতি আমাদের অনাস্থা বলেই তাকে বাদ দিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি।
“তবে তাকে বহিষ্কার করা হবে কিনা তা আমরা বর্ধিত সভা আহ্ববান করে এ বিষয়ে পরে আপনাদের জানাব।”
অলি আহমদের সঙ্গে বিভেদ নিয়ে জানতে চাইলে সেলিম বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যেভাবে অকুণ্ঠভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিচ্ছেন, যেভাবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, তা তিনি দিতে পারেন না- এটা উনাকে আমরা মুখের উপরে বলেছি। এজন্য আমাদের সাথে তার বিভেদ তৈরি হয়েছে।
“একে পুঁজি করে উনি (অলি আহমদ) কোনো দলীয় মিটিং বা সভা ছাড়া একটা কমিটি গঠন করেছেন- এটা হতে পারে না। তিনি এলডিপিকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছেন। একটা রাজনৈতিক দল চলবে সাংগঠনিক নিয়মে, কারো পৈত্রিক সম্পত্তি হতে পারে না। সেজন্য আমরাই এলডিপির বৈধ দাবিদার।”
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ গত ৯ অক্টোবর ২০৩ সদস্যের যে কমিটি ঘোষণা করেন, তাতে আগের কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্বাসী ও যুগ্ম মহাসচিব সেলিমকে বাদ দেওয়া হয়।
চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু কিছুদিন পরেই দলের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে মতভিন্নতা সৃষ্টি হলে তাকে রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়তে হয়। ২০০৪ সালে তিনি বিকল্পধারা নামে রাজনৈতিক দল দল গঠন করেন।
২০০৬ সালে ২৬ মার্চ তিনি নিজের দল বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বিলুপ্ত করে অলি আহমেদসহ বিএনপি ছেড়ে আসা একদল নেতাকে গিয়ে এলডিপি গঠন করেছিলেন।
বি চৌধুরীকে সভাপতি, অলিকে নির্বাহী সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ মান্নানকে মহাসচিব করে গঠিত ওই দলে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদকে নিয়ে বিএনপিনেতা সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী যোগ দিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
কিন্তু পরের বছর ২৬ জুন অলি ও রাজ্জাকসহ ১৩ সদস্যকে বাদ দিয়ে বি চৌধুরী এলডিপির সভাপতিমণ্ডলী পুর্নগঠনের ঘোষণা দিলে পরের মাসেই অলিকে সভাপতি, রাজ্জাককে নির্বাহী সভাপতি ও অধ্যাপিকা জাহানারা বেগমকে মহাসচিব করে এলডিপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ওই বছরই ১ অক্টোবর বিলুপ্ত করা ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ পুনরুজ্জীবিত করে নিজের নেতৃত্বাধীন এলডিপির নাম বদলে ফেলেন বি চৌধুরী। তারপর ২০০৮ সালে অলি ও রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বাধীন একমাত্র এলডিপি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়।
সেলিম বলেন, “২০০৬ সালে আমরা এলডিপি গঠন করে যে অন্যায় করেছি, যে পাপ করেছি বিএনপি আমাদের সেই অন্যায় ও পাপকে প্রায়শ্চিত্ত করার একটা সুযোগ দেবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে এই সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে লেখা ছিলো ‘সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ এলডিপির সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির গত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গণি,সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আলম আনোয়ার এবং দফতর সম্পাদক কাজী মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।