অনলাইন রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে শনিবার দিনের মধ্যেই ১৮ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন লাখ লোক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালযয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে একথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার আগে বাগেরহাটের মোংলা ও পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ঝূকিপূর্ণ এলাকায় ইতোমধ্যে তিন লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ দিনের মধ্যেই ১৮ লাখ লোককে ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে। শুক্রবার থেকেই লোকজন স্থানান্তর শুরু হয়েছে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড সবাই মিলে সমুদ্র থেকে নৌযান ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
শনিবার দিনের মধ্যেই বাকি ১৫ লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে একটা প্রবণতা হচ্ছে, আঘাত হানার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ বাড়িতে থাকতে চায়। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, বলপ্রয়োগ করে হলেও সবাইকে নিয়ে আসার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় যোগাযোগ রাখছেন জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, শুক্রবার সারাদিন এক ঘণ্টা পর পর তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো শুনেছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, আমরা যেন এসওডি (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী) অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ১৮ ঘণ্টা আগে সব উপকূলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এ মুহূর্তে মোংলা বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০-১৫০ কিলোমিটার। ঝড়টি ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে এগিয়ে আসছে। রাত ৮টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়টি আঘাত হানতে পারে। এসময় পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে দুই হাজার প্যাকেট করে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে একটি পরিবার সাতদিন খেতে পারবে। উপকূলীয় সাতটি জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও পিরোজপুরে দুই হাজার করে মোট ১৪ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং নগদ ১০ লাখ করে মোট ৭০ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন করে ১৪শ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় পাঁচ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন করে মোট ৬০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও বাগেরহাটের নয়টি জেলায় এক লাখ টাকা করে গোখাদ্য বাবদ এবং এক লাখ টাকা করে শিশু খাদ্য বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
অবস্থা মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৫০০ মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রেখেছে। প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন ও তাদের গবাদিপশু যেন নিরাপদে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সংশ্লিষ্ট ১৩টি উপকূলীয় জেলা ও এর অন্তর্ভুক্ত উপজেলায় কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা-উপজেলায় এ বিষয়ে সর্তকতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
এনামুর রহমান বলেন, উপকূলীয় ১৩টি জেলায় সাতটি জোনের ৪১টি উপজেলার ৩৫০টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬৮৪টি ইউনিটে মোট ৫৫ হাজার ৫১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা প্রচার শুরু হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুর্গম এলাকা থেকে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকা, ট্রলারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ, ফসল, গবাদিপশু, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অধিদপ্তর ও সিপিপির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দিনদিনের ছুটি ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত বুলেটিন ও সংকেতগুলো সরকারি-বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বারবার প্রচারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।