ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আয়তনের তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফলতা পাচ্ছে না। সরকারের নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরও দেশের জনসংখ্যাকে প্রত্যাশিত মাত্রায় জনশক্তিতে রূপ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০ শতাংশ যুবক কোন ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ গ্রহণ অথবা কর্মের মধ্যে নেই। তারা পড়াশোনা যতটুকু করার করেছেন এবং বসে আছেন। জীবনের কোন পরিকল্পনা নেই, প্রচেষ্টা নেই কর্ম সুযোগ তৈরি করার। একটাই পরিকল্পনা, একটাই প্রত্যাশা যে কবে চাকরি হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, জনশক্তি পরিকল্পনা, মানবসম্পদ রফতানি ও কর্মসংস্থানের স্থায়ী ক্ষেত্র তৈরি করার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আদমশুমারির মধ্যবর্তী অবস্থা তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৮ কোটি ২৪ লাখ পুরুষ এবং নারী ৮ কোটি ২২ লাখ। বর্তমানে গড় আয় বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর তিন মাস। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর। এরমধ্যে পুরুষের আয়ু ৭০ দশমিক ৮ বছর আর নারীর আয়ু হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। সূত্রটি আরও জানায়, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮-তে বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে ২০১৪ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৮ লাখ, ২০১৫-তে ১৫ কোটি ৮৯ লাখ, ২০১৬-তে ১৬ কোটি ৮ লাখ এবং ২০১৭-তে ছিল ১৬ কোটি ২৭ লাখ। ফলে ২০১৮ সালে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৯ লাখ। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ২০১৮ সালে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ কমেছে বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ প্রজনন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৮০-র দশকে ও তার পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। কিন্তু সেই সঙ্গে সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়। উচ্চ প্রজননশীলতা হ্রাস, মাতৃমৃত্য হ্রাস , শিশুমৃত্যু হ্রাস, মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি ও গড় আয়ু যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই তুলনায় কর্মক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠী দেশের শ্রম বাজাওে যোগ হয়নি। ২০১৭ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৩২ লাখ যুবক আছে। কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠীকে দেশের মোট নির্বাচনী এলাকা (৩৫০) দিয়ে ভাগ করলে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গড়ে ৯ লাখ ৩০ হাজার কর্মক্ষম যুবক কর্ম চায়। দেশের কোন কোন খাতে ওই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হবে, তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আমিনুল হক জানান, কিভাবে এই নতুন প্রজন্মকে কাজে লাগান যাবে, কে কি কি ধরনের কাজ করবে, কার কি কি ধরনের দক্ষতা ও শিক্ষা দরকার, কোন কোন খাতে কতজন কাজ করবে বা কোন কোন ক্ষেত্রে কতজন লোক কাজ পাবে তা জানা দরকার।
×