স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদী পুনরুদ্ধারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন। তারা বলেন নদীর দখলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণে সি এস কিংবা আর এস ভিত্তিক জরিপের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান বন্ধ করতে হবে। খননের নামে দেশের সব নদীকে নালা বা খালে পরিণত করার চলমান কর্মকান্ড বন্ধ করার আহ্বান জানান।
শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের, জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ‘সরকারের নদী উদ্ধারে সাম্প্রতিক তৎপরতা ঃ আদি বুড়িগঙ্গা ও সোনাই নদীর বাস্তবতা-শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্য জরিপের মাধ্যমে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে, সব ধরনের অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত সাপেক্ষে স্থাপনা স্থ’ানান্তর, শাস্তি নিশ্চিত করে উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে তা সংরক্ষণ এবং সবুজায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সংসবাদ সম্মেলনে বাপার শরীফ জামিল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ঢাকার চারপাশে, বিশেষভাবে বুড়িগঙ্গার পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য এক বিশেষ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। বুড়িগঙ্গা ২য় চ্যানেল বা আদি বুড়িগঙ্গাকে ‘আরেকটি হাতিরঝিল’-এর মতো দৃষ্টিনন্দন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত উদ্ধার তৎপরতা এবং নদীকে ঝিলে রূপান্তরের একটি প্রক্রিয়া এটি। নদীর জায়গায় উদ্ধারকাজ পরিচালনার আগে কতটুকু আসলে নদীর জায়গা, কি কি ধরনের দখলি স্থাপনা, কি উপায়ে উদ্ধার এবং উদ্ধারের পর তা সংরক্ষণসহ সামগ্রিক বিষয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যক।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আদি বুড়িগঙ্গা, যাকে বিভিন্ন সময়ে বুড়িগঙ্গা ২য় চ্যনেল বলা হয় তা পুনরুদ্ধারের নানা সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে আদি বুড়িগঙ্গায় এক স্থায়ী ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এমনকি বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন সময়ের মানচিত্র পর্যালোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে নদীর প্রবাহ ও নদীর আকার নির্ধারণে চলতি আইন ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে আদি বুড়িগঙ্গা ও তৎসংলগ্ন তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার বিস্তীর্ণ প্লাবন অঞ্চল শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। নদীর নক্সা ও প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নদী এবং নদী সমূহের বিস্তীর্ণ প্লাবন অঞ্চল ভরাট করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাসমূহের দখলকে অপরিকল্পিত উচ্ছেদ, আংশিক খনন, ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে তাদের বৈধতা দেবার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি, দখলদারদের উল্টা ক্ষতিপূরণ দেবার বিষযটি বিবেচনা করার কারণে অবশিষ্ট অংশেও বেপরোয়া দখল প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে সোনাই নদী দখলের কারণে মাধবপুর ও সংলগ্ন এলাকায় বন্যা ও জলমগ্নতা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, স্থানীয় কিছু দুর্বল দখলদারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করতে দেখা যায় কিন্তু সোনাই নদীর পানির প্রবাহে বাধাদানকারী বৃহত্তম দখল সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স অপসারণে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নেই।
সংবাদ সম্মেলনে শারমীন মুরশিদ বলেন, বর্তমানে দেশের নদীর দখল এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে নদী রক্ষা করার কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এটা রক্ষা করা এককভাবে কোন সংগঠনের পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য চাই সরকারের সদিচ্ছা, দৃঢ় মনোবল ও আইনের বাস্তবায়ন। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দখলদারদের মুখোশ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নদীরক্ষা কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। নদীরক্ষা কমিশনকে রিভিউ করা হচ্ছে। এটা বাস্তবায়িত হলে নদী কমিশন হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।
মিহির বিশ^াস বলেন, নদী ও মানুষের সঙ্গে তামাশা করা চলবে না, নদীর জমি নদীকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। একদল স্বার্থান্বেষী নদী খেকোরা নদী ভরাটের মতো নিন্দনীয় কাজ করে যাচ্ছে। সোয়ারি ঘাটের কিছুটা পশ্চিমে চাঁদনি ঘাট থেকে লালবাগের দিকে যে শাখাটি অগ্রসর হয়েছে সেটিই আদি বুড়িগঙ্গা বা দ্বিতীয় চ্যানেল যা শেষ পর্যন্ত তুরাগ নদীতে যুক্ত ছিল। এমনকি চ্যানেলের দুই পাড় ও নদীর ভেতরে গড়ে তোলা অবৈধ দোকানপাট ও স্থায়ী কারখানা। সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এ জঘন্য কাজ সংগঠিত হয়ছে। আমরা এর বিচার দাবি করি। সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, নদী রক্ষায় দেশের আপামর মানুষের প্রবল দাবি, নদী-আন্দোলন কর্মীদের অবারিত সংগ্রাম, উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট রায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ থাকার পরও আমাদের নদীরক্ষা হচ্ছে না বরং নদী দখল দূষণ চলছেই। এসব কিছুই ক্ষমতাশালী লোভী স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কাছে আজ অসহায় ও পরাজিত হচ্ছে। এটি আজ একটি জাতীয় ব্যর্থতা, দেশ রক্ষায় বৃহৎ চ্যালেঞ্জ।