স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বাচনকেন্দ্রিক নির্যাতন ও সহিংসতারোধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি সংযুক্ত রাখার পাশাপাশি তা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্যাতনরোধে রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকলেও দেশের প্রধান প্রধান দলগুলোকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কোন না কোন দলের ছত্রছায়াতেই নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। বিগত সময়ের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করায় নির্যাতনকারীরা বারবার সহিংস ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হয়ে আসছে। এই প্রবণতারোধ করা না গেলে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। উন্নয়নের সঙ্গে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মানুষের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা। তাহলেই সার্থক হবে উন্নয়ন এবং দেশের মানুষ তা নিরাপদে ভোগ করে হাসিখুশিতে থাকবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মানবাধিকার সংস্থা ‘শারির’ ‘জাতীয় নির্বাচন ’১৮ ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন। ‘শারি’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয়বালা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাড. সুলতানা কামাল, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদ এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ। আলোচক ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন রিইবের নির্বাহী প্রধান ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, দৈনিক সংবাদ সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, দৈনিক আমাদের সময়ের যুগ্ম সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার ও বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
নির্বাচনকালীন সহিংসতারোধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। তবে এখন জনগণ এ বিষয়ে বেশ সচেতন হয়েছে। মানসিকতা এখন অনেক সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে। অনেক সময় সামাজিক গণমাধ্যমে বিশেষ করে মোবাইলে অপপ্রচার চালিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। শুধু ভোট আদায়ের কৌশল ভাবলেই হবে না, নির্বাচনে সংখ্যালঘু নির্যাতনরোধে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিষয়টি বোধের মধ্যে না রাখলে এমন ঘটনা আবার ঘটবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারে আনতে হবে, পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সংখ্যালঘু নয়, সকলকে বাঙালী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। একত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দুর্গ গড়তে হবে। যেসব জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে, সে সব জেলা ও এলাকাগুলোতে এ বিষয়ে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
সকলের সমান অধিকার উল্লেখ করে মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, কাউকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সকলেই যুদ্ধ করেছি। সংবিধানে সকলের সমান অধিকারের বিষয়টি লিপিবদ্ধ রয়েছে। বৈষম্য বিলোপ আইন তৈরি করা দরকার বলে মনে করেন মানবাধিকার চেয়ারম্যান।
দেশে আইন লংঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সংবিধান ও আইনে নিরাপত্তার বিষয়টি সংরক্ষিত থাকার পরও দেশে নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় আইন বাস্তবায়িত হয় না। নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতারোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোট প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে।
দেশের উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরে মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মানুষের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা। তাহলেই সার্থক হবে উন্নয়ন এবং দেশের মানুষ তা ভোগ করে হাসি খুশিতে থাকবে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াই চলে, আর নির্যাতনের শিকার হতে হয় সংখ্যালঘুদের। এমনটি চলতে দেয়া যাবে না। বিএনপির নির্বাচনী ইসতেহারে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার সময়ে ২০১৪ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, অত্যাচারের ঘটনা কীভাবে ঘটে? সরেজমিন ঘুরে আমি নিজে এমন অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অনুসারীরা এমন কাজ করতে পারেন না। দল ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলকারীরা তথাকথিত কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে থাকে। সরকারকে বিষয়টি ভালভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। রাষ্ট্রকে নির্যাতিত মানুষের পাশে দেখতে চাই।