শংকর কুমার দে ॥ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে বছরে ৪শ’ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতি অর্জন করছে তারা। প্রতি বছরই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়ে চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রাখছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের বেশিরভাগ সদস্যই জাতিসংঘ মিশনে যেতে আগ্রহী। দেশে থেকে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যে বেতন পান তা থেকে অনেক বেশি বেতন মিশনে। এ জন্য জাতিসংঘ মিশনে যেতে সবাই আগ্রহ। তারা জাতিসংঘ মিশনে যাওয়ার জন্য চেষ্টা তদ্বির করে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তা। এক পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে দেড়/দুই বছর কাজ করলে প্রায় আধা কোটি টাকা উপার্জন করেন। এটা একটা আর্থিক নিরাপত্তা। একজন মানুষের ৫০ লাখ টাকা থাকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ভালভাবে দিনাতিপাত করতে পারেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, জাতিসংঘ মিশনে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা যেভাবে ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারে সেভাবে বাংলাদেশে কর্মরত অবস্থায় পারে না। কারণ বাংলাদেশে সেভাবে ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে পুলিশের বেতন, ভাতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও তারা যে বেতন পান, ওই টাকা দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তাদের খরচ করে ফেলতে হয়। বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংসার চালানো, বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়া ইত্যাদি খরচ চালানো অনেক কঠিন। যেমন একজন সাব ইন্সপেক্টরকে সোর্স নিয়োগ করতে হলেও তিনি দেখা যায় কোন সোর্সমানি পান না। অথচ তাকে নানা কাজে সোর্স নিয়োগ করতে হয়। মামলা তদন্তে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। সেখানে যাতায়াত খরচসহ নানাবিধ খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। ফলে তাদের বাড়তি আয় করতে হয় এবং সেটা মামলার বাদী, বিবাদীর কাছ থেকে তারা নেন। ফলে সংশ্লিষ্টদের কাছে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, বাংলাদেশ পুলিশের ১৮ হাজার ৪১৯ সদস্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। এর মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন ১ হাজার ১৮৪। বর্তমানে দারফুর, কঙ্গো, হাইতি, মালি, দক্ষিণ সুদান, লাইবেরিয়া, থাইল্যান্ড ও জাতিসংঘ সদর দফতরে ৮১৫ পুলিশ কাজ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে কাজ করতে গিয়ে ২০ পুলিশ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন ১০ জন। ১৯৮৯ সাল থেকে নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের জাতিসংঘ মিশনে যাত্রা শুরু। আগামী বছরগুলোয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণে বৈদেশিক মুদ্রা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের ইউএন ডেস্কে কর্মরত কর্মকর্তারা জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। পুলিশের অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতি থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন যাতে বাড়ে সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সদর দফতরের ইউএন ডেস্ক সূত্র জানায়, শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ভাড়া দেয়া হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশ থেকে নিয়ে যায় আর্মাড কার, জলকামান, গাড়ি, মর্টারশেল, এসএমজি, রাইফেল, পিস্তল, গুলি, বোমা ও সরঞ্জামাদি। এমনকি বাংলাদেশ থেকে তারা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতিও নিয়ে যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য বুলডোজার, ভারি রোলার মেশিন, মাটি খননের স্কেপার মেশিন ও ট্রলি ট্রাক নিয়ে যাওয়া হয়। এসব অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ভাড়ায় ব্যবহারের জন্য সেসব দেশে নিয়ে যাওয়া হয় সেসব দেশ থেকে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতি বছর এসব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতের সূত্র মতে, আগামী বছরগুলোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা স্বাবলম্বী হওয়ার পথকে প্রশস্ত করেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি পুলিশের পরিবারগুলোও স্বাবলম্বী হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য পুলিশ পুরস্কৃত হচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শান্তিরক্ষা মিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরকে অবহিত করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ই-মেইল বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।