স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মরহুম আনিসুল হকের মরদেহ যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে আজ। বেলা সাড়ে ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (নম্বর বিজি-০০২) দেশে আনা হবে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ বিকেল তিনটা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা হবে। পরে বিকেল চারটায় আছরের নামাজের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে ডিএনসিসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্কের সেন্ট্রাল মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
ডিএনসিসির তিন দিনব্যাপী শোক ও একদিনের ছুটি ঘোষণা ॥ মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ১ ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল রবিবার ডিএনসিসির সেবা খাত ছাড়া সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা। এদিকে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এই শোক প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, আনিসুল হক ছিলেন আধুনিক মানুষ, উদ্যমী মানুষ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে ঢাকা সিটিকে ‘গ্রীন এবং ক্লিন সিটি’ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন অথচ আমাদের সেই প্রিয় মানুষ আনিসুল হক আজ আমাদের মাঝে নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
ডিএনসিসির মেয়র মরহুম আনিসুল হককে স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে তার যে কোন অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ছোট ভাই হিসেবে নগরের মানুষদের কাছে ক্ষমাও চাইলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে মেয়র সাঈদ খোকনের বনানীর বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সাঈদ খোকন বলেন, আনিসুল হকের মৃত্যুটা আমাদের জন্য অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে যাবেন এটা কল্পনাও করতে পারিনি। মেয়র বলেন, আমার সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রতিদিন সকালে আমরা কুশল বিনিময় করতাম। নগরীর সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তার উদ্যোগ নিতাম। তার বিভিন্ন কর্মকা-ে আমি অনুপ্রাণিত হই। আবার আমার বিভিন্ন কর্মকা-ে তিনি অনুপ্রাণিত হতেন। দু’জনে মিলেই দুই-আড়াই বছর সময়ে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছি। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। হঠাৎই এমন একটা ঘটনা ঘটবে এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি অত্যন্ত ব্যথিত।
আনিসুল হকের শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না বলেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সাঈদ খোকন। বলেন, তিনি বলিষ্ঠ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। আনিসুল হকের মতো মানুষ প্রতিদিন জন্মাবে না। তারপরও আমরা আশা করি, যারা দায়িত্বে থাকবেন তারা এ শূন্যতাকে পূরণ করার চেষ্টা করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা থাকবে। তার যদি কোন ভুল হয়ে থাকে আপনারা তা ক্ষমা করে দেবেন। আমি তার ছোট ভাই হিসেবে তার হয়ে ক্ষমা চাইছি।
চসিক মেয়রের শোক ॥ মেয়র আনিসুল হকের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মেয়র আনিসুল হক সদালাপী, বন্ধুবৎসল, নির্লোভ, সৎ, সাহসী, নিষ্ঠাবান এবং সদাহাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সফল মানুষ ছিলেন। এই মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর নগরবাসী তার সেবা থেকে বঞ্চিত হলো। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে আনিসুল হকের মৃত্যুতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বিজিএমইএ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মেয়র আনিসুল হক ছিলেন নন্দিত টিভি ব্যক্তিত্ব, এরপর ব্যবসায়ী, তারপর রাজনীতিবিদ। সব ক্ষেত্রেই তিনি সফল। তার জনপ্রিয়তা ছিল সর্বক্ষেত্রে। ঢাকা উত্তরের মেয়র হিসেবে নগরবাসীর কাছে নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে তিনি একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার মৃত্যুর পর দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।