ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে বিএনপি নেতাদের পদত্যাগ অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১২ আগস্ট ২০১৬

প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে বিএনপি নেতাদের পদত্যাগ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে বিএনপি নেতাদের পদত্যাগ অব্যাহত রয়েছে। সদ্য ঘোষিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী সালিমুল হক কামালের পথ অনুসরণ করে এবার বিএনপির রংপুর জেলা ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী। পদত্যাগের আগে পরিতোষ চক্রবর্তী রংপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবং বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার পদত্যাগের খবর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কমিটি ঘোষণার আগে পরিতোষ চক্রবর্তীকে দলীয় হাইকমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়ার আশ্বাস দিয়েও তা থেকে বঞ্চিত করায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে তিনি ২১ বছর পর বিএনপি ত্যাগ করলেন। বৃহস্পতিবার সকালেই পদত্যাগপত্র দলের রংপুর জেলা সভাপতি এমদাদুল হক ভরসার কাছে পাঠিয়েছেন বলে বর্ষীয়ান নেতা অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। আর বিকেলে তিনি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানতে চাইলে রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা বলেন, পরিতোষ চক্রবর্তীর কোন পদত্যাগপত্র এখনও পাওয়া যায়নি। তার পদত্যাগপত্র পাওয়ার পর দলীয় সভা ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রয়োজনে বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পদত্যাগপত্রে শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করলেও বিএনপির সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সমালোচনা করেন ওই কমিটিতে স্থান না পাওয়া পরিতোষ চক্রবর্তী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পাওয়ার ক্ষোভে পদত্যাগ করেছেন কিনাÑ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে বিএনপিতে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র ও নিয়মনীতির বালাই নেই। দলের গঠনতন্ত্র কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরাই মানেন না। তিনি বলেন, দলের ত্যাগী নেতারা উপেক্ষিত। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে থাকেন, মামলা-হামলার শিকার হন তাদের মূল্যায়ন নেই। পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করে এসেছি। দলের যে কোন বিপদে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আশা করেছিলাম জীবনের শেষ বয়সে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে নাম থাকবে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় সদ্য ঘোষিত বিএনপির এতবড় জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে রংপুর থেকে মাত্র ৩ জনকে রাখা হয়েছে। অথচ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে ১১ জন, টাঙ্গাইল জেলা থেকে ১৫ জন ও চাঁদপুর জেলা থেকে ১৩ জনকে রাখা হয়েছে। পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, দল যদি আমার ত্যাগের মূল্যায়ন না করে, সিনিয়রিটির গুরুত্ব না দেয়, তবে পদত্যাগ করা ছাড়া তো উপায় নেই। তাই নিজের মান বাঁচাতে পদত্যাগ করেছি। এখন বয়স হয়েছে। তাই বাকি দিনগুলো বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত থাকতে চাই। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে রংপুর থেকে যে ৩ জন নেতা স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ দলের রংপুর মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্পাদক এবং জেলা সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ ম-ল ও সাহিদা রহমান জোৎস্না নির্বাহী কমিটির সদস্য। রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগরের সাধারণ সম্পাদককেও নতুন নির্বাহী কমিটিতে রাখা হয়নি। উল্লেখ্য, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পরিতোষ চক্রবর্তী। ১৯৯৫ সালে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। তখন থেকে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্থানীয় বিএনপির সকল কর্মকা-ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদিত দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে আরও ক’জন নেতা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করবেন এমন গুঞ্জন আগেই ছিল। এরই অংশ হিসেবে বিতর্কিত লোকদের স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান দেয়ার অভিযোগ তুলে ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন বিএনপির সদ্য ঘোষিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ‘ইকোনো কামাল’ হিসেবে পরিচিত জিকিউ গ্রুপের মালিক মাগুরার কাজী সালিমুল হক কামাল। আর সর্বশেষ বুধবার রংপুর জেলা ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী। এরপর বিএনপি থেকে কে পদত্যাগ করেন, তা এখন দেখার বিষয়।
×