ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির তীব্র নিন্দা ;###;জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর ইতিবাচক সাফল্য

অপারেশন থান্ডারবোল্ট ॥ গুলশানে শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি উদ্ধার অভিযান ১২ মিনিটেই শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ জুলাই ২০১৬

অপারেশন থান্ডারবোল্ট ॥ গুলশানে শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি উদ্ধার অভিযান ১২ মিনিটেই শেষ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ যৌথবাহিনী পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের মধ্যদিয়ে রাজধানীর গুলশানে জিম্মি সঙ্কটের রক্তাক্ত সমাধান হয়েছে। জঙ্গীরা দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ২০ জন ছাড়াও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। শুক্রবার রাত পৌনে নটায় গুলশানের আর্টিজেন রেস্তরাঁ ও বেকারিতে বন্দুকধারী জঙ্গীরা খদ্দের সেজে ঢুকে পড়ে। এরপর তারা ফাঁকা গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সকলকে জিম্মি করে। শনিবার সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৬ বন্দুকধারী নিহত হয়েছে। সন্দেহভাজন একজনকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যাদের মধ্যে দুই জন শ্রীলঙ্কার এবং একজন জাপানী নাগরিক রয়েছেন। ঘটনার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল কায়েদা বিবৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার দিনের বেলায় গুলশান কূটনৈতিক পাড়ায় হামলার হুমকি দিয়ে টুইট করে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বনা জানিয়েছেন। ঘটনার পর শুক্রবার রাত থেকে গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক পাড়াসহ রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। মোদি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশের এই শোকের সময় ভারত বাংলাদেশী ভাই এবং বোনদের সঙ্গে আছে। এ সময় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। ঘটনার পর পর জাপান সন্ত্রাসবাদ মোবাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে রাতেই হোয়াট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘটনাটি অবহিত রয়েছেন। রাতেই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিষয়টি দেশটির পররাষ্ট্র দফতরকে অবহিত করে। এদিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গুলশানের ঘটনায় নিহত ওসি সালাউদ্দিন এবং ডিবির এসি রবিউল ইসলামের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক জানান, নিহত ছয় জঙ্গীর প্রত্যেকে বাংলাদেশী। এদের মধ্যে পাঁচ জন পুলিশের তালিকাভুক্ত। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। সারারাতের শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার পর শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের রেস্তরাঁয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের নেতৃত্বে নৌবাহিনীর কমান্ড দল, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও বিশেষ বাহিনী সোয়াতের সমন্বয়ে অভিযান চালানো হয়। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রেস্তরাঁর ভেতরে প্রবেশ করলে দু’পক্ষের ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ সময় নারী এবং শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। এক জনকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। যৌথ বাহিনী ৮টা ৫৫ মিনিট ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর ২০ মিনিট পর অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ১২ ঘণ্টার জম্মি দশার অবসান হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং রেস্তরাঁর কর্মীরা বলছেন, অন্যদিনের মতো শুক্রবার সন্ধ্যায় হলি আর্টিজানের সবুজ লনে পোশা কুকুরের সঙ্গে খেলা করছিল কয়েকজন শিশু। পাশেই কফির পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছিলেন দেশী-বিদেশী কেউ কেউ। কূটনৈতিক পাড়া হওয়ায় এখানে রাতের খাবার খেতে অনেক বিদেশী আসতেন। গুলশানেরও অনেকে এখানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। যেমনটি গতকালও গিয়েছিলেন জন্মদিন পালন কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার জন্য অনেকে। এমন এক শান্ত পরিবেশ হঠাৎই বদলে যায় বন্দুকধারীদের হামলায়। শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ৭ থেকে ৮ জন যুবক রেস্তরাঁয় ঢুকে। এরপর সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। ঠিক এমন সময়ই রেস্তরার ম্যানেজার সুমন সন্ত্রাসীদের চোখ এড়িয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে আসেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমেই অস্ত্রধারীরা দেশী ও বিদেশীদের আলাদা আলাদা করে ফেলে। যে যে তলায় রয়েছে তাদের সেই তলায়ই দেশীদের বিভিন্ন বাথরুম, রান্নাঘর ও অন্যান্য রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। আর বিদেশীদের নিচে একটি একটি বড় কক্ষে অস্ত্রের মুখে নিয়ে জিম্মি করে। জিম্মিকারীদের কাছে পিস্তল ও গ্রেনেড দেখা গেছে। অনেকের কাছে ভারি ব্যাগও ছিল। রাতেই জিম্মিদের দু’জনের বোন পুতুল জানান, তার ভাই সমীর ও রিন্টুকে দোতলার একটি বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের একই সঙ্গে আটজনকে ওই বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছে। মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় রাত ১১টায় এ খবর ভেতর থেকে জানানো হয়েছে বলে জানান পুতুল। খবর পেয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বনানী এবং গুলশান থানা পুলিশ সেখানে পৌঁছান। কাকতালীয়ভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়াও গুলশান এলাকায়ই ছিলেন। তিনিও খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন। এরপর বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খান নিজের বুলেট প্রুফ জ্যাকেটটি খুলে ডিএমপি কমিশনারকে পরিয়ে দেন। এরপর ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামসহ অন্য পুলিশদের সঙ্গে নিয়ে সেই রেস্তয়াঁয় ঢুকতে উদ্যত হন। ঢোকার সময়ই বাঁধার মুখে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা। এ সময় জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা প্রথমে গ্রেনেড চার্জ করে। শক্তিশালী গ্রেনেড বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসানের পায়ে, ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল আহাদের শরীরে, অপর একজন ডিবি কর্মকর্তার বাম চোখের উপর স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়। এ সময় ওসি সালাউদ্দিনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। হামলাকারীরাও এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। চোখের পলকে হামলাকারীরা ওসি সালাউদ্দিনের গলায় আর সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলামকে বুকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই ওসির মৃত্যু হয়। এরপর শুরু হয় গোলাগুলি। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা নিরাপদে আশ্রয় নেন। আহত সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান। অন্যদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে পুলিশের সমস্ত ইউনিটকে সেখানে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ আর্মার কার, সোয়াত, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, বম্ব ডিসপোজালসহ সব ইউনিট সেখানে হাজির হয়। একই সময় গোয়েন্দা এবং জিম্মিদের মাধ্যমে ভেতরের ভয়াবহতার তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। এরপর পুলিশ র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে র‌্যাবের বিপুল পরিমাণ সদস্য সেখানে হাজির হন। পাশাপাশি র‌্যাবের হেলিকপ্টার আকাশে উড়াল দেয়। চক্কর দিতে থাকে রেস্তরাঁর উপর দিয়ে। হেলিকপ্টার থেকে বাইন্যুকুলারের মাধ্যমে ভেতরের পরিস্থিতিতে দেখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বন্দুকধারীরা ভেতরের প্রায় সব লাইট বন্ধ করে দেয়। শুধু কয়েকটি জায়গায় আলো জ্বালিয়ে রাখে। সেই আলোতে হেলিকপ্টার থেকে তেমন কিছুই দেখা যায়নি। ফলে হেলিকপ্টার ফেরত। ইতোমধ্যেই সেখানে হাজির হয়ে যায় র‌্যাবের সব ইউনিট। তাতেও সমস্যার সমাধান না হলে যোগাযোগ হয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে। এরপর সেখানে হাজির হয় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। এরপর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সম্মিলিতভাবে অভিযান চালানোর জন্য কয়েক দফায় চেষ্টা করে। কিন্তু তা সফল হয়নি। রাত বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশের চার কিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি কর্ডন করে দেয়া হয়। পুলিশ ও এপিবিএন সমস্ত এলাকা প্রতিটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সর্বসাধারণের চলাচল ও যানবাহন চলাচল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি প্রধানরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী এ নির্দেশের পর দ্রুত প্রস্তুতি নেয়। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেয়ে নৌবাহিনীর কমান্ডোরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হন। তারা রেস্তরাঁর উত্তর দিকসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। তারা পুরো এলাকা রেকি করে সশস্ত্র বাহিনীর অন্য কমান্ডোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরপর বিমানবাহিনীও সেখানে হাজির হয়। এরপরই সিলেট থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে উড়িয়ে আনা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা কমান্ডোদের। তারা ঢাকা সেনানিবাসে নেমেই সোজা রওনা হন ঘটনাস্থলের দিকে। এদিকে সাভার থেকেও সেনা কমান্ডোরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। কমান্ডোদের আসার আগেই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গাড়িতে গাড়িতে মুহূর্তেই সেখানে হাজির হয়ে যায়। পুরো এলাকা তারা কর্ডন করে ফেলে। এরপর কমান্ডোরা সাঁজোয়া যান, ভারি অস্ত্রশস্ত্র, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রক্ষা করার ওয়্যারলেস সেট, স্নাইপার রাইফেল নিয়ে সোজা রওনা হয়। রেস্তরাঁর দিকে। ভোর পাঁচটার দিকে পুরো অপারেশন শুরু করে কমান্ডোরা। এর আগে আশপাশের সমস্ত এলাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন। এরপর কমান্ডোরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করে দিতে নানা ধরনের আলাপ আলোচনা চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জিম্মিকারীরা কমান্ডোদের সেসব কথার কোন গুরুত্বই দেয়নি। বার বার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয়, তখনই শুরু হয় কমান্ডো অপারেশন। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় চূড়ান্ত অপারেশন। একদিক থেকে কমান্ডোরা সাঁজোয়া যান থেকে ভারি অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। আর সাউন্ডগ্রেনেড হামলা করতে থাকে। বিকট শব্দে পুরো এলাকা এ সময় প্রকম্পিত হয়ে উঠছিল। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুঁড়ে যাচ্ছিল। এরপর জঙ্গী-সন্ত্রাসীরাও কমান্ডোদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। আর মাঝে মধ্যেই শক্তিশালী গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে জঙ্গী সন্ত্রাসীরা। এমন গোলাগুলির এক ফাঁকে কমান্ডোদের একটি দল দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমান্ডোরা ১৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এরমধ্যে একজন জাপানী ও দুইজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক। থেমে থেমে জঙ্গীদের সঙ্গে কমান্ডোদের গোলাগুলি চলতে থাকে। এ সময় গাছে থাকা পাখিগুলো চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে আকাশে উড়াল দেয়। পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির। মানুষজন আতঙ্কে কেউ বা দেয়ালের আড়ালে আবার কেউ বা কোন বাড়ির গেটের আড়ালে অবস্থান নেন। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি আর গ্রেনেড হামলা করছিল কমান্ডোরা। আর জঙ্গীরাও মাঝে মধ্যেই বিকট শব্দে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল। সেইসঙ্গে চলে জঙ্গীদের টানা গুলি। এ সময় একজন জঙ্গী প্রকাশ্যে বেরিয়ে গুলি চালাতে চালাতে পালানোর চেষ্টা করে। কমান্ডোরা তার বুকে গুলি চালিয়ে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে। তার নাম সৌরভ বলে জানা গেছে। জানা যায় সে বেসরকারী মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের সময় আস্তে আস্তে গুলি শব্দ কমে আসতে থাকে। এরপর একেবারেই স্তব্দ হয়ে যায় সবকিছু। কমান্ডোরা এরপর রেস্তরাঁর ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। গুলির কারণে রেস্তরাঁয় আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা অবিস্ফোরিত গ্রেনেডগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালায় কমান্ডোরা। সেখান থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার হয়। নিহতের মধ্যে একটি রুমেই ১৩ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র বলছে, নিহতদের অধিকাংশকেই জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে জঙ্গীদের ব্যবহৃত নানা ধরনের অস্ত্র গোলাবারুদ, ওয়াকিটকিসহ নানা সরঞ্জাম। দুপুর দেড়টায় অপারেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেখানে বর্তমানে আর কোন গ্রেনেড নেই। এরপর সেখানে হাজির হয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর এ্যাম্বুলেন্স। রেস্তরাঁটি সিল করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গীরা আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য।
×