ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

১০ এপ্রিল আল্টিমেটাম শেষ ;###;১৫৫ শিল্প ইউনিটের প্রথম তলার ছাদ আংশিক ঢালাই সম্পন্ন, দ্বিতীয় তলার ঢালাই চলছে তেরোটিতে, বেস শেষে ২৬ কারখানায় হচ্ছে গ্রেটবিম ও কলাম ঢালাই

সাভার বহুদূর ॥ ট্যানারি মালিকরা ৬ মাসেও যেতে ইচ্ছুক নন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৮ এপ্রিল ২০১৬

সাভার বহুদূর ॥ ট্যানারি মালিকরা ৬ মাসেও যেতে ইচ্ছুক নন

এম শাহজাহান, সাভার থেকে ফিরে ॥ সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে সরকার অবকাঠামো তৈরি করে অপেক্ষায় থাকলেও ট্যানারি মালিকদের তাতে সাড়া নেই। আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে কারখানা সরানোর যে আল্টিমেটাম রয়েছে সে ব্যাপারে ট্যানারি মালিকদের গড়িমসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরাদ্দকৃত ১৫৫ শিল্প ইউনিটের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই করেছে আংশিকসহ মাত্র ৪৩ ট্যানারি। মাত্র ১৩ কারখানা দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। বেজ ঢালাই শেষ করে গ্রেটবিম ও কলাম ঢালাই করেছে ২৬ কারখানা। এই বাস্তবতায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব ট্যানারি সাভারে পুরোপুরি স্থানান্তরিত হতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। প্রথম তলা সম্পন্ন করে যেসব ট্যানারি ট্যানিং ড্রাম বসানোর (ডোল) কাজ শুরু করেছে তাদেরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপের কার্যক্রম শুরু করতে। অপরদিকে প্রায় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিল্পনগরীতে সরকারী প্রকল্পসমূহের ৯৫ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। এর মধ্যে পল্লীবিদ্যুত সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬ হাজার মিটার বিদ্যুত লাইন স্থাপনের শতভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে। এছাড়া গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে এক শ’ ভাগ। এ ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস হতে সংযোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আরডিএ (রুরাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমি) বগুড়ার ডিপোজিট ওয়ার্ক পদ্ধতিতে সাড়ে ৬ হাজার ফুট গভীর নককূপ স্থাপনের কাজ এক শ’ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এই নককূপ থেকে এখনই দৈনিক ২৩ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব। এতে করে ট্যানারি চালু করতে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সংযোগের জন্য আবেদন করা হলে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই শিল্পনগরীর সবচেয়ে আলোচিত সরকারী প্রকল্প কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ও ডাম্পিং ইয়ার্ড আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যদিও নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ৮৮ শতাংশ সিভিল কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া চামড়া শিল্প প্রকল্পের ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ, প্রকল্পের সয়েলটেস্ট, ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে, হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি, ভূমি উন্নয়ন, প্রশাসনিকভবন নির্মাণ, পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ, ফায়ার ব্রিগেড শেড নির্মাণ, পাম্প ড্রাইভার্স কোয়ার্টার নির্মাণ, প্রবেশ সড়ক, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়েছে। সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় চামড়া শিল্পনগরী সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ অবস্থা দেখা গেছে। প্রায় দেড়যুগ ধরে ট্যানারি স্থানান্তরের কথা বলা হলেও এ শিল্পের মালিকরা তা গায়ে মাখেননি। বরং তারা দু’ জায়গায়ই প্লট নিয়ে সরকারী সুবিধা নিয়ে আসছিল। এবার সরকার কঠোর হওয়ায় সবেমাত্র তাদের উপলব্ধি হয়েছে যে, সত্যিকার অর্থেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করতে হবে। অথচ যুগের পর যুগ হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যে ওই এলাকার বাসিন্দারা নানা ধরনের জটিল রোগ বালাইয়ের শিকার হয়েছেন। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের দ্বৈত সুবিধার কারণে হাজারীবাগের মানুষ বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এছাড়া কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্ট না হওয়ায় দেশের অন্যতম চামড়া রফতানি কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাই এ শিল্পের স্বার্থেও দ্রুত হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়া জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সম্প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। দ্রুত ট্যানারি সরাতে মালিকদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি কয়েক দফা আল্টিমেটামও দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোক্তারা এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। এ কারণে এবার ট্যানারি সরাতে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কোন মূল্যেই চামড়া শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরাতেই হবে। চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের আর খেলতে দেয়া হবে না। চামড়া শিল্পনগরী এখন প্রস্তুত। সাভারের ট্যানারি মালিকরা কারখানার বিদ্যুত ও গ্যাসের আবেদন করলেই মুহূর্তের মধ্যে সংযোগ পাবেন। এদিকে, ট্যানারি মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েকদফা সময় বাড়িয়েও শিল্প স্থানান্তরে কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই বাস্তবতায় হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। যদিও বিসিক ট্যানারিগুলো সরাতে আরও সাতদিন সময় দিয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে আর কোন চামড়া ঢুকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (বিসিক) হযরত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে আরও সাত দিন সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ট্যানারি না সরালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি তাদের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলও করা হতে পারে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পনগরী এখন প্রস্তুত। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ করে নিয়ে আসা হয়েছে। কারখানা সরাতে ট্যানারি মালিকদের ইতোমধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। তাই এবার আর ছাড় নয়। তিনি বলেন, আমরা সাত দিন সময় দিয়েছি। এরমধ্যে সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতেই হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্যানারি মালিকদের প্রস্তুতি নেই ॥ হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ বার তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই তোয়াক্কা করেননি ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু এবার হাজারীবাগে চামড়া ঢুকতে না দিতে কড়া পুলিশী পাহারায় কিছুটা উদ্বিগ্ন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তাদের যে হাজারীবাগ থেকে সরতেই হবে এটা বুঝতে পেরেছেন ট্যানারি মালিকরা। এ কারণে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে এখন কারখানা নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন তারা। বরাদ্দ পাওয়া প্লটগুলোতে দেখা যাচ্ছে ইট, সুরকি, বালি ও রডের স্তূপ। এরকমই একটি ট্যানারির নাম নিউ কাজল ট্যানারি। হাজারীবাগে এটি কাজল ট্যানারি নামে পরিচিত। সরেজমিনে দেখা গেল, এই ট্যানারি চতুর্থ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর মাত্র একতলা সম্পন্ন করেছে। হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশে বাধা দেয়ায় এই শিল্পের উদ্যোক্তা এখন দ্রুত সাভারের কারখানায় ১০টি ড্রাম বসাতে কনস্ট্রাকশনের কাজ করাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোঃ সালাউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, হাজারীবাগে আর নয়। আর তাই এখানে কারখানা সরিয়ে আনতে দিনরাত কাজ করছি। প্রথম ধাপের কাজ করাতে হলে ড্রামগুলো আগে বসাতে হবে। ব্যাংক ঋণ ও সরকারের কাছ থেকে যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছি তা দিয়ে এখন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে কারখানা সরিয়ে আনার কাজটি ব্যয়বহুল ও সময়সাধ্য ব্যাপার। আমরা এতদিন ভাবতেই পারিনি হাজারীবাগ ছেড়ে আমাদের এখানে আসতে হবে। গত এক বছর সরকারের চিঠি চালাচালির কারণে আমরা তৎপর হয়েছি। ব্যবসা করতে হলে এখানেই যে আসতে হবে সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি। আর তাই দ্রুত কারখানা নির্মাণে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশেই ছয় তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের কাজ সম্পন্ন করেছে মুক্তি ট্যানারি। এখন প্রথম তলার কাজ শুরু করা হয়েছে। কারখানাটির ব্যবসায়িক অংশীদার খোকন মীর জানান, সরকার যত দ্রুত কারখানা স্থানান্তরের তাগিদ দিচ্ছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একতলা হওয়ার পর ড্রামগুলো বসানো হবে। এই কাজটি করতেও কমপক্ষে আরও তিন মাস প্রয়োজন। অর্থাৎ গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সংযোগ পাওয়াসহ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার চালু হলে আগামী জুলাই থেকে সাভারে ওয়েট ব্লু চামড়া উৎপাদনে যেতে পারবেন মালিকরা। আর ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদনে যেতে হলে ভারি মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি বসাতে হবে। যার একেকটি মেশিনের ওজন প্রায় ৭-৮ লাখ টন। এসব মেশিন ট্যানারিগুলোতে আগামী ছয়মাসের আগে স্থাপন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সাভারের শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থাপনের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী কোরবানির সব চামড়া সাভারের শিল্পনগরীতে আনা হবে। তিনি বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এজন্য আরও সময় দিতে হবে। তিনি বলেন, কোনভাবেই আগামী কোরবানির আগে এখানে কাজ করা সম্ভব নয়। কারখানা স্থাপন ও সেট আপ দিতে আরও সময়ের প্রয়োজন। শিল্প নগরীতে ভবনের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি ॥ ট্যানারি মালিকদের ঢিলেমি ও অনাগ্রহে সাভার চামড়া শিল্প এলাকার ভবনের নির্মাণের কাজ সেভাবে এগোয়নি। উৎপাদনে যাওয়ার মতো এখনও একটি কারখানা প্রস্তুত করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যতই চাপ দেয়া হোক না কেন, কেবল ৫০ শতাংশ ট্যানারিকে প্রথম ধাপের উৎপাদনে যেতে আরও অন্তত তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত আংশিক ছাদসহ প্রথম তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে ৪৩ ট্যানারি। পঞ্চম, চতুর্থ ও তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করেছে মাত্র ১টি করে কারখানা। ১৩ কারখানা দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই দিতে পেরেছে। পাইলিং শেষ করে গ্রেটবিম ও কলাম ঢালাই করেছে ৩৭টি কারখানা, পাইলিং কাজ চলমান রয়েছে দুটির, পাইল কাস্টিং শেষে পাইল ড্রাইভ করেছে ৪, পাইল কাস্টিং করেছে ২, বেজ ঢালাই শেষ করে গ্রেটবিম ও কলাম ঢালাই দিয়েছে ২৬টি এবং বেজ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করতে পেরেছে ১৩টি কারখানা। এছাড়া হাইকোর্ট কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে একটি, ভূমি বরাদ্দ কমিটি বাতিল করেছে ও হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে রেখেছে ৩টি, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে রয়েছে ৭ এবং মামলাজনিত কারণে বরাদ্দপত্র জারি করা হয়নি একটির। নির্মাণাধীন সিইটিপি’র সিভিল কাজের ৮৮ ভাগ সম্পন্ন ॥ সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্মাণাধীন সিইটিপি’র দুটি মডিউলের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটিতে ডেমো টেস্ট করা হয়েছে। বিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি মডিউলে ৫০ ট্যানারির বর্জ্যরে শোধন করা যাবে। এছাড়া চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের কাজ চলছে ঢিমেতালে। কিন্তু প্রতিদিন কাজ করা হলে দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন। সিইটিপিতে গত ৩১ জানুয়ারি হতে ডেমো টেস্ট রান অব্যাহত রয়েছে। হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকারখানা সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে পূর্ণাঙ্গভাবে স্থানান্তরিত না হওয়ায় এবং ট্যানারি বর্জ্য না পাওয়ায় আপাতত ধলেশ্বরী দিয়ে ডেমো টেস্ট রান করা হচ্ছে। এছাড়া সিইটিপি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল ইক্যুপমেন্ট আমদানির জন্য দ্বিতীয় এলসি খোলা হয়েছে। বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিআরটিসি ও বুয়েট সমন্বয়ে গঠিত প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনস কমিটি গত ২৬ থেকে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত চীনে এলসি সংক্রান্ত মেশিনারিজ, ইক্যুপমেন্টস এবং মেটেরিয়ালস পরিদর্শন করেছে। ইতোমধ্যে মালামাল এসে গেছে ও সংযোজনের কাজ চলছে। এছাড়া শীঘ্রই তৃতীয় এলসির মাল দেশে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম জনকণ্ঠকে বলেন, সিইটিপির দুটি মডিউল ইতোমধ্যে আমরা ডেমো টেস্ট করিয়েছি। এ দুটি মডিউলে ৫০-৬০ ট্যানারির বর্জ্য গ্রহণ সম্ভব। আগামী জুনের মধ্যে বাকি দুটি মডিউলের কাজ শেষ করা হবে। তিনি বলেন, চলতি ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা চাইলে এখনই এখানে উৎপাদনে যেতে পারেন। কিছু প্রতিষ্ঠান দ্রুত তাদের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তারা দ্রুত উৎপাদনে যেতে পারবে। চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পে সরকারের ব্যয় ॥ এক হাজার ৭৯ কোটি ব্যয়ে সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর হচ্ছে ১৫৫ ট্যানারি। এজন্য দেড় যুগেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। নগরীটির অবস্থান ঢাকার অদূরে সাভারের হরিণধরায়। নদীতীরে ২০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব এই চামড়া শিল্পনগরী। গত ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রায় ২০০ একর জমির ওপর করা ২০৫ প্লটের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৫৫। এর মধ্যে লে-আউট প্ল্যান দাখিল করেছে ১৫৪, লে-আউট প্ল্যান অনুমোদন করেছে ১৫৪ এবং মামলাজনিত কারণে একটি ইউনিটের বরাদ্দ জারি করা যায়নি। ট্যানারিগুলোকে সেখানে স্থায়ী করতে এখন পুরোদমে চলছে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ও তাগিদ রয়েছে সরকারের। আগামী বছরের জুন মাসে চামড়া শিল্পনগরী নামের এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে সিইটিপি (কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ও ডাম্পিংইয়ার্ড নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৬৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ট্যানারি শিল্প স্থাপনে মালিকদের ক্ষুতিপূরণ বাবদ দেয়া হবে ২৫০ কোটি টাকা। পানি সরবাহের জন্য প্রস্তুত ডব্লিউটিপি ॥ সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে পানি সরবরাহের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডব্লিউটিপি)। ইতোমধ্যে পানি সরবরাহের জন্য দশটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে নয় লাখ লিটার পানি সরবরাহ করবে। এর মধ্যে এক লাখ লিটার পানি পান করার জন্য আর সাড়ে আট লাখ লিটার ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করা হবে। এই প্ল্যান্টে কর্মরত আরডিএ’র (রুরাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমি) সুপারভাইজার খন্দকার শওকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, পানি সরবরাহের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ডব্লিউটিপি। ট্যানারি চালু হওয়ায় পাম্পগুলো চালু করা যাচ্ছে না। পরীক্ষামূলকভাবে ডিপটিউবওয়েলগুলো প্রতিদিন একবার করে চালু করা হচ্ছে। আমাদের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ট্যানারি মালিকরা সংযোগ নিলেই পানি সবরবাহ করা হবে। কাঁচা চামড়া মজুদ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ॥ এ্যাপেক্স ট্যানারি, ঢাকা হাইড এ্যান্ড স্কিন লি., আরএমএম লেদার লি. ও রিলায়েন্স ট্যানারিসহ বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্রুত তাদের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের এসব প্রতিষ্ঠান আগামী জুন থেকেই এখানে ওয়েট ব্লু চামড়া উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ কারণে এখন থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাঁচা চামড়া আনছে সাভারের শিল্পনগরীতে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে রিলায়েন্স ট্যানারি। প্রতিষ্ঠানটি কাঁচা চামড়া মজুদ করছে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওয়েট ব্লু চামড়া এনে মজুদ করছে। এই চামড়া পাঁচ বছর পর্যন্ত মজুত রাখা সম্ভব। জানা গেছে, হাজারীবাগ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের জন্য ১৪২ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে লিগ্যাল নোটিস প্রদান করা হয়েছে। সরকারের এই লিগ্যাল নোটিস পাওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে ৩০ ট্যানারিতে ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১৪৩ ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুত সমিতি বরাবর আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৮৭ প্রতিষ্ঠানের নামে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে এবং বাকিগুলোর ডিমান্ড নোট ইস্যু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ৬২ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাসের জন্য আবেদন করেছে। আর পানির জন্য আবেদন করেছে মাত্র ৩০ প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ট্যানারি স্থানান্তরে ক্ষতিপূরণ বাবদ এ পর্যন্ত ১২৬ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক তলার কাজ শেষ করা ৩১ প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৪০ শতাংশ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
×