
রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অন্য দিনগুলোর তুলনায় শুক্রবার লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। এদিন লঞ্চগুলোও ছেড়েছে যথাসময়ে। মূলত শুক্রবার থেকে সকল বেসরকারি অফিসসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এ ভিড় বেড়েছে।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনের শুরুতেই পল্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা যায়। বরাবরের মতো এদিন দুপুরে যাত্রীদের ভিড় সকালের তুলনায় কম থাকলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় দুপুরে ভিড় একেবারে খারাপ ছিল না। বিকালে আবার যাত্রীর ভিড় বেড়ে জনসমুদ্র তৈরি হয়। এদিন সবথেকে ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতেও যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালে বরিশালগামী লঞ্চগুলোতেও যথেষ্ট ভিড় ছিল।
এদিন বরিশালগামী লঞ্চ সুন্দরবন-১০ এ মোটামুটি ভালোই ভিড় লক্ষ করা যায়। এখান থেকে লঞ্চের স্টাফ নাসিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আগে ঈদের সময় সদরঘাট থেকে বরিশালগামী প্রতিটি লঞ্চের একটি অগ্রিম টিকিট পাওয়ার জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকতো। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কেবিনের টিকিট না পেয়ে অনেকের মুখ মলিন হতো। একপ্রকার নিরুপায় হয়ে পরিবার নিয়ে ডেকে বসে যেতেন অনেকে। কেউ কেউ ডেকে জায়গা না পেয়ে লঞ্চের ছাঁদে উঠতেন। আবার কেউ নিজ থেকেই টিকিটের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে চাইতেন। কিন্তু সে চিত্র এখন আর নেই। এখন টিকিটের কোনো বাড়তি চাপ নেই। ঘাটে আসলেই টিকিট পাওয়া যায়। এখন খুব বেশি প্রয়োজন হলে যাত্রীরা ফোনে যোগাযোগ করেন।
সদরঘাটে আসতে ও টিকিট পেতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সামাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, সদরঘাটে এসেছি জ্যাম ঠেলে। এছাড়া আর কোনো ভোগান্তি নেই। কেবিন পেতে সমস্যা হয়নি। অভিযান-৫ লঞ্চের একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছি।
ভোলাগামী আর্মি সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, সদরঘাটের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। ঈদে পরিবারের সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে বাসায় যাচ্ছি। আমি সিলেট ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদস্য হিসেবে কর্মরত আছি।
এদিকে অলস সময় পার করা শেষে এবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নৌ শ্রমিকরা। তড়িঘড়ি করে মালামাল ওঠানামা করতে দেখা যায় তাদের। এ বিষয়ে মনির হোসেন নামে এক শ্রমিক জানান, আমি ১৫ বছর যাবত লঞ্চে কাজ করছি। আমার ভাইও এখানে ছিল কিন্তু করোনার পর বাড়ি চলে গেছে। এখন কাজ একেবারেই কম। তিনি আরও বলেন, আগে ঈদ মৌসুমে বেতনের বাইরে সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্নভাবে প্রতিদিন পাঁচশো থেকে এক হাজার টাকা আয় করতে পারতাম। সাধারণ সময়গুলোতেও আয় খারাপ হতো না। কিন্তু এখন ঘাটেই তেমন যাত্রী হয় না। লঞ্চও কমে গেছে। বেতনে পোষাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ঈদের সময় হওয়ায় এখন একটু ভিড় দেখা যাচ্ছে। তাই চাপ সামলাতে ঘাটে কিছু সিজনাল লোক আনা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আনসার দক্ষিণ জোনের আনসার সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড়ের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ঘাটে ভালোই ভিড় আছে। বিশেষ লঞ্চও চলছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শৈলেন বাবু বলেন, ইলিশা রুটে সকাল থেকেই ভিড় ছিল। বিকাল ৩টা থেকে সব রুটেই ভিড় বেড়েছে।
এদিকে লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্যসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এখনো পর্যন্ত তেমন ভিড় দেখছি না। আশা করছি ভিড় হবে।
রাজু