জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের জন্য সংস্কার করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন ও এজলাস কক্ষ মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হবে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ ভবন উদ্বোধন করবেন । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনালের প্রসিকিউটর এম এম মইনুল করিম জনকন্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড: সৈয়দ রেফাত আহমেদ ট্রাইব্যুনাল উদ্ধোধন করবেন। এই ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অন্যদের গণত্যার অভিযোগে বিচার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট মাসের গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কীভাবে পালালেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই সময়ে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ১৩ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আমলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইবুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো।
ট্রাইব্যুনালে যাদেরকে হাজির করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের জন্য নতুন করে সেজেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। উদ্বোধনের পর নান্দনিক এই ভবনে চলবে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত নজিরবিহীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ। ১৯০৫ সালে ‘গভর্নর হাউজ’ হিসেবে যাত্রা করা ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’টি পাকিস্তান আমল থেকে ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ এবং ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। বিচার চলার মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শত বছরের পুরোনো ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল। পুরোনো এই ভবনের পাশেই টিনশেডের স্থাপনা তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন। এর পর থেকে নতুন টিনশেড স্থাপনাতেই চলে আসছিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারকাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে টিনশেড স্থাপনাতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামো আন্তর্জাতিক মানের করতে পুরোনো ভবনটির সংস্কারে সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বতী সরকার। অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শুরু হয় সংস্কার কাজ।
এদিকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা ছাড়াও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়াদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তখন থেকে তিনি ভারতেই আছেন। বাংলাদেশ তাকে ফেরত চেয়ে আবেদন জানালেও এ বিষয়ে এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত। গত শনিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ওনাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও আমরা পাইনি। অন্তর্বতীকালীন সরকার বলেছে, ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফেরত আনবে সরকার।
আফরোজা