আব্দুল হক।
প্রবাসে ৭ বছর গাধার খাটনি কেটে চরম অসুস্থতা নিয়ে অবশেষে দেশে ফিরেছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা আব্দুল হক। স্ত্রী সন্তানদের জন্য এনেছেন ব্যাগ ভর্তি উপহার। কিন্তু দেশে আসার পর গ্রহণ করছে না তাকে তার পরিবার।
তাই দিনরাত কেঁদে কেঁদে পার করছেন রাজধানীর বিমানবন্দরের ব্র্যাক সেন্টারে থাকা আব্দুল হক। আব্দুল হক বলেন, ছেলে মেয়ে এবং পরিবারের জন্য সে অনেক কিছু নিয়ে এসেছেন। সেইসাথে যেহেতু সে একেবারে দেশে চলে এসেছেন তার প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
কিন্তু এখন এগুলো বৃথা পড়ে আছে। তিনি আরো বলেন আমি আমার সন্তানদেরকে বন্ধুর মত ভালোবাসি। তাদেরকে কোনদিন তাদের নাম ধরে ডাকেনি। তাদেরকে আমি বাবা বলে সম্বোধন করেছি। তিনি বলেন তার সন্তানদের মা এবং সন্তানদের নানির পরিবারের লোকজন তার বিরুদ্ধে তার সন্তানকে ওলট-পালট কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট করেছেন।
আব্দুল হক বলেন তার সন্তানদেরকে সে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন এতকাল। এখন তাদের বাবাকে তাদের প্রয়োজন নেই। তারা তাদের নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে শিখেছেন।
এখন তারা তার মা এবং মায়ের পরিবারের লোকজনদের কথা শুনে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে যাচ্ছেন।সৌদি আরব থেকে গত বুধবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আব্দুল হক আসেন। কিন্তু বিমানবন্দরে আসার পর তাকে তার পরিবার থেকে কেউই নিতে আসেননি।
সে কারণে তিনি এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকেন। বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ার পর, বিমানবন্দর পুলিশ ফোর্স তাকে ডেকে নিয়ে সব ঘটনার শোনেন। এবং খোঁজ নেন তার পরিবারের সাথে। যোগাযোগ করার পর জানতে পারা যায় আব্দুল হককে তার স্ত্রী ইতোমধ্যে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে জানান।
এবং এ সকল কারণে তার সন্তানও তার সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ রাখতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন সেন্টারে আব্দুল হক কে হস্তান্তর করেন পুলিশ।
আব্দুল হক জানান সৌদিতে থাকা অবস্থায় সে তার পরিবারের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। একবার ফোন রিসিভ করলে তারা ১০ বার ফোনটি কেটে দিয়েছেন।
এ সকল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আব্দুল হক এক পর্যায়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে সৌদিতে থাকা প্রবাসী বা অন্যান্য যারা ছিলেন তারা তাকে সাহায্য করেন। এবং ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করেন।
এরকম চলতে থাকা অবস্থায় সৌদিতে যারা তাকে সহযোগিতা করেছিলেন তারাই একপর্যায়ে গিয়ে বলেন এভাবে আপনি আর কতদিন থাকবেন। আপনি আপনার পরিবারের কাছে দেশে ফেরত যান।
এবং তাদেরকে নিয়ে বাকিটা জীবন থাকেন।এরপর সৌদিতে যারা ছিলেন তারা তাকে টিকিট কেটে সহযোগিতা করেন দেশে ফেরার জন্য।
আব্দুল হক বলেন আমি সৌদি আরব থেকে ১৬ তারিখ দেশে ফিরি। আসার পর কেউ আমাকে নিতে আসেননি। এরপর বিমানবন্দরে পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি এখনও এখানে আছেন কেন আপনি আপনার বাসায় যাচ্ছেন না কেন, তারপর আমি তাদের সব ঘটনা খুলে বলি।
এরপর তারা আমার পাসপোর্ট চেক করে আমার পরিবারের নাম্বার বের করেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
যোগাযোগ হওয়ার পর তারা জানিয়ে দেন তারা আমাকে আর গ্রহণ করবেন না।এদিকে মিডিয়া থেকে যোগাযোগ করার পর পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয় এবং আব্দুল হকের শ্যালক মিডিয়াকে যানায় যে পাঁচ বছর আগে আব্দুল হকের সাথে তার বোনের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।
এখন তারা তাকে মেনে নিতে চাইছেন না। কিন্তু আব্দুল হকের সাথে কথা বলে জানতে পারা যায় তার সাথে তার স্ত্রীর ডিভোর্স হয়নি।
তার এতদিনের উপার্জনের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই চক্রান্ত করা হয়েছে এদিকে ব্র্যাক সেন্টারের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পারা যায়, এইসব ঘটনা বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজে।
একই সাথে শ্রম বাজারেও যারা কাজ করছেন প্রবাসী তাদের উপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে এমন ঘটনা। নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে বিশেষ সেল গঠনের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
আর কে