হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
রাজধানীর হাজারীবাগে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক ডাঃ এ কে এম আব্দুর রশিদ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোঃ নাইম খান (২২), মোঃ জাহিদুর রহমান রিফাত (২০) ও মোঃ আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওন (২২)। এছাড়া গ্রেফতারকৃত মোঃ নাইম খানের দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর ২০২৪) ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে খুলনার ডুমুরিয়া ও ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
হাজারীবাগ থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার ভিকটিম বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক ডাঃ এ কে এম আব্দুর রশিদ বছরের অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসতেন। গত ১৫ নভেম্বর ২০২৪ হাজারীবাগ থানার পশ্চিম ধানমন্ডির রোড নং-৮/এ এর ২৯৪/১ নং বাসার ২য় তলায় রাত আনুমানিক ০২.৩০ ঘটিকায় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করে। প্রবেশের পর নিহত ডাঃ এ কে এম আব্দুর রশিদের সাথে দুষ্কৃতকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি আচঁ করতে পেরে তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন দুস্কৃতকারী তার মুখ চেপে ধরে বাধা প্রদান করে। একপর্যায়ে দুস্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে ডাঃ এ কে এম আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় তার স্ত্রীর চিৎকারে দুস্কৃতকারীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত ডাঃ আব্দুর রশিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের চাচাতো ভাই মোঃ রেজাউল করিম বাদী হয়ে গত ১৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, ঘটনার পূর্বের বিভিন্ন সময়ে উক্ত বাসায় মেস হিসেবে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২৯ নভেম্বর ২০২৪খ্রি. ০২:৩০ ঘটিকায় খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজার এলাকা থেকে নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাতকে গ্রেফতার করা হয়। হাজারীবাগ থানার অপর একটি টিম ০৩:৩০ ঘটিকায় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত নাইম খান ও জাহিদুর ভিকটিমের বাসার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভিকটিমের স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন সময় তাদের মনোমালিন্য হতো। এতে তারা ভিকটিম ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিক এর বাসায় প্রবেশ করে টাকা পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনাসহ উক্ত টাকা পয়সা ব্যবহার করে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ রাত ০২.৩০ ঘটিকায় আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে সাথে নিয়ে ভিকটিমের বাসার সীমানা প্রাচীর টপকে টাকা পয়সা লুট করার জন্য বাসায় প্রবেশ করে। এসময় ভিকটিম ডাঃ আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠলে গ্রেফতারকৃতদের উপস্থিতি টের পান। ডাঃ আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে তার সাথে গ্রেফতারকৃতদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ভিকটিম নিহত হন।
মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আর কে