ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

২৫ থানায় গোপালগঞ্জের ওসি ও পরিদর্শক

থানাগুলো যেনো গোপালগঞ্জের আস্তানা

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২২ আগস্ট ২০২৪

থানাগুলো যেনো গোপালগঞ্জের আস্তানা

ম্যাপে গোপালগঞ্জ

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এবং তার আগের দফায় পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি জেলাকে প্রাধান্য দেয়ার ঘটনা এখন দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল। পুলিশের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক বলয়ের কল্যাণে এবং ছাত্রলীগের ‘সনদ’ থাকলেই চাকরি হয়ে যেত পুলিশে। 

এ কারণে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), অতিরিক্ত আইজিপি, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার (এসপি), অতিরিক্ত এসপি, ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক), সাব-ইন্সপেক্টর (উপপরিদর্শক), অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্ট (সহকারী উপপরিদর্শক) থেকে শুরু করে কনস্টেবল পদেও নিয়োগের ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জের দাপট ছিল।


উদাহারণ হিসেবে বিভিন্ন পুলিশের নাম এসে যায়। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের মাঝে সবার উপরে যে নামটি থাকবে সেটি হচ্ছে পুলিশের পরিদর্শক এ বি এম ফরমান আলী দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চাকরি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশে। ঘুরেফিরে কাটিয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননি পুলিশের কোনো সদস্য। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার কাছে ছিলেন অনেকটাই অসহায়। ফরমান আলীর এত দাপট আর সুবিধা পাওয়ার মূলে হলো, তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।

শুধু তা-ই নয়, ফরমান আলীর বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক। ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বড় নেতা। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিল ফরমান আলীর অবাধ যাতায়াত। পুলিশে আছে তার বিশাল সিন্ডিকেট।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ফরমান আলী ছিলেন উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি। সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে উত্তরায়।

ফরমান আলীর মতো আরেক পরিদর্শক মনিরুজ্জামানও ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলায় বিভিন্ন থানার ওসির দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনিও নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তারও গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ।

গোপালগঞ্জের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুরের বাসিন্দারাও অগ্রাধিকার পেয়েছেন পুলিশে। বিএনপি সরকারের আমলেও বিশেষ কয়েকটি জেলার আধিক্য ছিল পুলিশ বাহিনীতে। তবে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে বেপরোয়া ছিলেন গোপালগঞ্জসহ বিশেষ কয়েকটি জেলার পুলিশ সদস্যরা। ঘুরেফিরে ভালো জায়গায় তাদের পদায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি পদোন্নতিতেও তেমন একটা সমস্যা হতো না।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা গতকাল দেশের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে জানান, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ কয়েকটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। তারা যা চাইতেন তা-ই করতে পেরেছেন। বছর পাঁচেক আগে ধানমন্ডিতে আতশবাজি ফোটানো নিয়ে তৎকালীন এক সংসদ সদস্যের (এমপি) সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন সে সময়ের ধানমন্ডি থানার ওসি মনিরুজ্জামান। এমপিকে তিনি অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেও পার পেয়ে যান। গোপালগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের আশকারায় ওসি মনিরুজ্জামান বেপরোয়া ছিলেন। এমপিকে পদত্যাগ করার হুমকি দেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ওই কর্মকর্তা জানান, বিএনপি সরকারের আমলে বগুড়া, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা এ ধরনের সুবিধা নিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও কোটি টাকার বাণিজ্যও হয়েছে। যোগ্যতার বিচার না করেই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে। তারা এখনো পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত আছেন। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের কখনো গোপালগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিশেষ অঞ্চলের লোক হওয়ায় সিনিয়র কর্মকর্তারাও তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পান না। চিহ্নিত এসব পুলিশ কর্মকর্তা সিনিয়রদের কমান্ড মানছেন না। বিশেষ অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে পুরো বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।

বিএনপি নেতা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে নির্যাতন করার পর আলোচিত হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আশকারা পেয়ে হারুন অর রশীদ বেশি বেপরোয়া ছিলেন। তার কারণেই পুলিশ ও সরকার বেশি বিতর্কিত হয়েছে। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালে তিনি লোকজনকে বেশি  হয়রানি করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) এসেও হয়রানির পাশাপাশি নানা বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর। তিনি ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব মহাপরিচালকও ছিলেন। পুলিশে তার প্রভাব ছিল বেপরোয়া। প্রভাব খাটিয়ে তিনি অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন। তিনি বিসিএস সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এই ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। বছর খানেক তিনেক আগে তিনি অবসরে গেছেন। তবে তার প্রভাব ছিল বেনজীর আহমেদের চেয়ে কম। ১২তম ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন। গত ৩১ জুলাই তিনি অবসরে গেছেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। একই ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি দিদার আহমেদের বাড়িও গোপালগঞ্জ সদরে। বছরখানেক আগে তিনি অবসরে গেছেন। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনও একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে। তারও পুলিশে প্রভাব ছিল বেশি। ১৫তম ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি ও সদ্য অবসরে পাঠানো এসবির প্রধান মনিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে।  এর আগে তিনি ডিএমপির ডিবি ও সিটিটিসিপ্রধান ছিলেন। একই ব্যাচের ও সদ্য ওএসডি হওয়া সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ১৭তম ব্যাচের ডিআইজি মো. মীজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার দাপটে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ছিলেন অসহায়। তিনি অফিসও করতেন না ঠিকমতো। শেখ রেহানা ও শেখ সেলিমের দোহাই দিয়ে তিনি চলতেন। একই ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা সদ্য অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়ায়। এর আগে তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশপ্রধান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) ছিলেন। ২০তম ব্যাচের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে। গতকাল তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আরও একাধিক ঊর্ধ্বতন ও সদস্যের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তা ছাড়া ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। এর আগে তিনি ডিএমপি কমিশনার ছিলেন। অবসরে যাওয়ার আগে তিনি প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্য আছেন পুলিশে।

ঢাকা মহানগর পুলিশে অন্তত ২৫টি থানার ওসি ও পরিদর্শকের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এলাকার রয়েছেন ১০ জন ওসি। পাশাপাশি মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এলাকার রয়েছেন ৯ জন। খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরার ৫ জন। বাকি অন্য ওসি ও পরিদর্শকরা বিশেষ অঞ্চলের বাইরের হলেও তাদেরও রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। তাদের অনেকেই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। ছাত্রজীবনে কেউ কেউ সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশের সদস্যসংখ্যা দুই লাখের বেশি। এর মধ্যে ১৬ বছরে নিয়োগ হয়েছে এক লাখের বেশি। এর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে। তখনো পুলিশে নিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে বাহিনীতে অতিরিক্ত আইজিপি আছেন (সুপারনিউমারারিসহ) ৩২ জন, ডিআইজি আছেন ৮৫ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি আছেন ৩৪০ জন, এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ৭৪৩ জন। বর্তমানে পুলিশে ক্যাডার কর্মকর্তা ৩ হাজার ১২৪ জন। নন-ক্যাডারের সদস্য ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ,  ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ শাখা (এসবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, পুলিশ স্টাফ কলেজ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মেট্রোরেল পুলিশ ইউনিট ও পিটিসি ইউনিটে পুলিশ সদস্যরা কর্মরত আছেন।

পুলিশে এমন অভিযোগ আছে, জেলাভিত্তিক কোটা থাকলেও গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জসহ বিশেষ অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তার কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও নারীঘটিত অপকর্মেরও অভিযোগ আছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৯৭ সালে পুলিশে ১৭১ কর্মকর্তা যোগ দেন। তবে ছয় বছর আগে যোগদান দেখিয়ে তাদের পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। ওই সব কর্মকর্তার মধ্যে বিশেষ জেলার বাসিন্দা আছেন। পুলিশ প্রবিধানের ৭৪২ অনুযায়ী, নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক ও চূড়ান্ত স্বাস্থ্যপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। পরে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে পুলিশ একাডেমি সারদায় এক বছরের মৌলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। উত্তীর্ণদের শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ দেন সারদার পুলিশ একাডেমি প্রিন্সিপাল। শিক্ষানবিশ হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর চাকরি স্থায়ী হয়। কিন্তু বিশেষ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে মাঝেমধ্যে এটা মানা হয়নি।

এবি 

×