
ছবিঃ হিন্দুস্তান টাইমস
গবেষকরা এক অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে সাইকোপ্যাথ বা মনোবিকারগ্রস্ত মানুষদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন—তাদের চোখের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। ২০১৮ সালে কার্ডিফ ও সোয়ানসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সামনে ভয়ংকর সব ছবি—যেমন ক্ষতবিক্ষত দেহ বা হুমকিস্বরূপ কুকুরের ছবি—দেখানো হয় এবং তাদের চোখের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি কারও মধ্যে সাইকোপ্যাথিক বৈশিষ্ট্য আছে বলে সন্দেহ করেন, তাহলে তাদের চোখের দিকে লক্ষ্য করুন।
গবেষণায় কী দেখা গেছে?
গবেষণায় দেখা যায়, ভয়ংকর ছবিগুলোর দিকে তাকানোর সময় সাইকোপ্যাথদের চোখের মণি (pupil) বড় হয়নি—যা একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে, যাঁরা সাইকোপ্যাথ ছিলেন না, তাঁদের চোখের মণি স্বাভাবিকভাবেই প্রশস্ত হয়েছিল, যা ভয় বা ধাক্কার সময় শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
“আমাদের এই গবেষণা মনোবিকারগ্রস্ত অপরাধীদের মধ্যে প্রচলিত এক ধরনের আবেগঘাটতির শারীরিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছে,” বলেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সাইকোলজির প্রধান গবেষক ড্যান বার্লি।
“চোখের মণি দীর্ঘদিন ধরে আবেগগত উদ্দীপনার একটি সূচক হিসেবে পরিচিত। সাধারণত, কোনো ভয়ানক বা ধাক্কাস্বরূপ কিছু দেখলে আমাদের চোখের মণি বড় হয়ে যায়। কিন্তু সাইকোপ্যাথদের মধ্যে এই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার অনুপস্থিতি তাদের অবস্থার একটি স্পষ্ট শারীরিক চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে,” তিনি বলেন।
এই অনাবেগপূর্ণ ও শীতল দৃষ্টি অনেক সময় “সাইকোপ্যাথিক চাহনি” বা “সাইকোপ্যাথিক চোখ” নামে পরিচিত। গবেষকরা আরও দেখতে পান, যখন সাইকোপ্যাথদের সামনে ইতিবাচক বা আশাব্যঞ্জক ছবি দেখানো হয়, তখন তাঁদের চোখের মণি স্বাভাবিকভাবে বড় হয়। ফলে এটি বোঝা যায় যে, সাইকোপ্যাথি মানেই আবেগ প্রকাশে সম্পূর্ণ অক্ষমতা নয়—বরং বিশেষ করে ভয়াবহ বা হুমকিসূচক তথ্যের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব।
“অনেক সাইকোপ্যাথ অপরাধী আত্মবিশ্বাসী, সাহসী এবং ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে সক্ষম। ভয় অনুভব না করলে সাহসী হওয়া সহজ, আর আবেগ না থাকলে ঠান্ডা মাথায় কাজ করা সম্ভব,” বলেন অধ্যাপক রবার্ট স্নোডেন, যিনি গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেন।
সোয়ানসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ও ফরেনসিক মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিকোলা গ্রে, যিনি গবেষণায় ক্লিনিক্যাল সুপারভিশনের দায়িত্বে ছিলেন, জানান, “এই প্রথমবারের মতো আমরা কোনো ব্যয়বহুল যন্ত্র বা হস্তক্ষেপ ছাড়া সাইকোপ্যাথিক অপরাধীদের আবেগগত ঘাটতির একটি বস্তুগত প্রমাণ পেয়েছি। ভবিষ্যতে এ পদ্ধতিটি অপরাধী মূল্যায়ন ও চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে বলে আমরা আশাবাদী।”
ইতিহাসের কুখ্যাত কিছু সিরিয়াল কিলার যেমন টেড বানডি, ফ্রেড ওয়েস্ট এবং রিচার্ড রামিরেজকে সাইকোপ্যাথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও “সাইকোপ্যাথি” কোনো আনুষ্ঠানিক মানসিক রোগের নাম নয়, “সোসিওপ্যাথি” বা সামাজিকভাবে বিকৃত আচরণকে বোঝাতে এটি প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। সোসিওপ্যাথির আনুষ্ঠানিক নাম অ্যান্টিসোশিয়াল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (ASPD)।
মনোবিজ্ঞানী ডেভিড টজল PsychCentral-এ বলেন, “সাইকোপ্যাথি শুধু Psychopathy Checklist-Revised পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায়। মানুষ প্রায়ই এটিকে ASPD-এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে, কিন্তু এই দুটি একই নয়।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “ASPD একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বঘটিত মানসিক রোগ যা অন্যদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিয়মের প্রতি অবজ্ঞার মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। অন্যদিকে, সাইকোপ্যাথি একটি ব্যক্তিত্বের গঠন, যেখানে নির্দিষ্ট আন্তঃব্যক্তিক, আবেগজনিত ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য থাকে, যেগুলোর অনেকটাই ASPD-এর সঙ্গে মেলে।”
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
মুমু