
ছবিঃ সংগৃহীত
আত্মবিশ্বাস শিশুদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ, যা রাতারাতি তৈরি হয় না। এটি গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে—নিরব ভালোবাসা, উৎসাহ, ও পারিবারিক পরিবেশের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিভাবকদের কিছু প্রতিদিনকার ছোট ছোট অভ্যাস শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। নিচে এমন ১০টি অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো শিশুকে নীরবে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
১. ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া
শিশুকে তার পোশাক বেছে নিতে বা দুইটি খাবারের মধ্যে পছন্দ করতে দেওয়া তাকে নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি দেয়। এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
২. ফলাফলের চেয়ে চেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া
শুধু নম্বর বা জয় নয়, বরং চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের প্রশংসা করলে শিশু বুঝতে শেখে যে পরিশ্রমই আসল। এটি একটি "গ্রোথ মাইন্ডসেট" গড়ে তোলে।
৩. মন দিয়ে শোনা
শিশুর কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা, মাঝপথে থামিয়ে না দেওয়া—এই বার্তা দেয়: “তোমার কথা গুরুত্বপূর্ণ।” এর ফলে শিশুর আত্ম-মূল্যায়ন ও নিজেকে প্রকাশ করার সাহস তৈরি হয়।
৪. মতামত জানাতে উৎসাহ দেওয়া
শিশুকে প্রশ্ন করতে, মত প্রকাশ করতে ও যুক্তিপূর্ণভাবে দ্বিমত পোষণ করতে উৎসাহ দিলে সে শেখে তার চিন্তা মূল্যবান। এটি ভবিষ্যতে স্কুল ও সমাজে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলার ভিত্তি তৈরি করে।
৫. ভালোবাসার প্রকাশ
"ভালোবাসি" বলা, জড়িয়ে ধরা, কিংবা ছোটখাটো আদর শিশুকে নিরাপত্তার অনুভব করায়। নিরাপদ পরিবেশে বড় হওয়া শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
৬. ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখা
ছোটখাটো ভুল যেমন দুধ ফেলে দেওয়া বা খেলা হারার পরও বকা না দিলে, শিশু শেখে যে ভুল করা দোষের নয়। এতে ভয় কাটে এবং সমস্যা সমাধানের মানসিকতা গড়ে ওঠে।
৭. গুণাবলীর প্রশংসা করা
দয়ালু, কৌতূহলী বা ধৈর্যশীল হওয়ার মতো গুণের প্রশংসা করলে শিশুর আত্ম-মূল্যায়ন বাহ্যিক সৌন্দর্য বা সামাজিক সম্মতির উপর নির্ভর করে না।
৮. দায়িত্ব শেখানো
বিছানা গুছানো বা স্কুলব্যাগ প্রস্তুত করার মতো ছোট দায়িত্ব দিলে শিশুর মধ্যে “আমি পারি” মনোভাব তৈরি হয়। দায়িত্ব পেলে তারা নিজেদের যোগ্য মনে করে।
৯. ঝুঁকি নিতে উৎসাহ দেওয়া
নতুন খেলা শেখা বা একটু উঁচু গাছে ওঠার সুযোগ দেওয়া শিশুদের সাহস বাড়ায়। ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা নিজেদের সামর্থ্য আবিষ্কার করে।
১০. আত্মবিশ্বাসী অভিভাবক হওয়া
শিশুরা অভিভাবকদের কাছ থেকে শেখে। যখন তারা দেখে মা-বাবা নিজের ভুল সহজভাবে মেনে নেয়, নিজেকে সম্মান করে ও সাহসের সঙ্গে নতুন কিছু করে, তখন তারাও সেটা অনুকরণ করে।
শিশুর আত্মবিশ্বাস গঠনের জন্য প্রচার-প্রচারণা নয়, প্রয়োজন সচেতন ও সদয় অভিভাবকত্ব। অভিভাবকদের এ ধরনের নিঃশব্দ কিন্তু গভীর প্রভাব ফেলা অভ্যাসই আগামী প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাসী ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
রিফাত