
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রত্যেক অভিভাবকেরই স্বপ্ন থাকে সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী ও সফল করে গড়ে তোলা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর আত্মমর্যাদা এবং সাফল্যের ভিত্তি তৈরি হয় মূলত পারিবারিক পরিবেশ এবং সঠিক অভিভাবকত্বের মাধ্যমে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অভিভাবকের আচরণ, কথা বলার ধরণ এবং সীমারেখা নির্ধারণ শিশুদের ভবিষ্যতের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে এমন ১০টি অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যা অভিভাবকরা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করলে তাদের সন্তান আত্মবিশ্বাসী ও সফল হয়ে উঠতে পারে।
১. স্বাধীনতা বিকাশে উৎসাহ দেওয়া:
নিজের কাজ নিজে করতে শেখা শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়। বয়স উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া, পরিণতির মুখোমুখি হতে দেওয়া এবং প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করার মাধ্যমে অভিভাবকরা তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে পারেন।
২. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা দেওয়া:
নিজের আবেগ বুঝতে পারা ও তা নিয়ন্ত্রণ করা সফলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুদের আবেগ মূল্যায়ন করা, সহমর্মিতা শেখানো এবং আবেগ প্রকাশে উৎসাহিত করা আত্মবিশ্বাস গড়ার সহায়ক।
৩. ফল নয়, প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করা:
শিশুদের প্রচেষ্টা ও ধৈর্যকে প্রশংসা করলে তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সাহসী হয়। এতে তারা ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে নিতে শিখে এবং সাফল্যের পথে অগ্রসর হয়।
৪. পরিষ্কার সীমারেখা নির্ধারণ:
ন্যায়সংগত নিয়ম ও শৃঙ্খলা শিশুদের নিরাপত্তাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। কঠোরতা ও অতিরিক্ত শিথিলতার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করাই সফল অভিভাবকত্বের মূল।
৫. শেখার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা:
শুধু ভালো নম্বর নয়, শেখার আনন্দে শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। বই পড়া, নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও আগ্রহের ক্ষেত্র অনুসরণে উৎসাহ দিলে শিশুদের মধ্যে আজীবন শেখার মানসিকতা গড়ে ওঠে।
৬. ব্যর্থতা মেনে নেওয়া ও লড়াই শেখানো:
প্রত্যেক ব্যর্থতা একেকটি শিক্ষার সুযোগ। শিশুদের সমস্যা সমাধান করতে শেখানো এবং আবার চেষ্টা করতে উৎসাহিত করা তাদের মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়।
৭. আত্মবিশ্বাসের মডেল হিসেবে কাজ করা:
শিশুরা অভিভাবকদের কাছ থেকেই আত্মমর্যাদা ও আত্মনির্ভরতার পাঠ গ্রহণ করে। নিজের আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে অভিভাবকরা শিশুদের জন্য আদর্শ তৈরি করতে পারেন।
৮. ঝুঁকি নিতে উৎসাহ দেওয়া:
নতুন কিছু করার সাহস শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। স্কুলে কথা বলা, নতুন কোনো কাজ শেখা কিংবা নিজের পছন্দমতো কিছু করতেই হোক—সেসব ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সমর্থন প্রয়োজন।
৯. খোলামেলা যোগাযোগ এবং সক্রিয় শোনার অভ্যাস:
শিশুর চিন্তা ও অনুভূতিকে গুরুত্ব দিলে তারা নিজের ভাবনা প্রকাশে সাহসী হয়। বিচারহীন মনোভাব ও খোলামেলা কথাবার্তা আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়ক।
১০. কৃতজ্ঞতা ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা:
কৃতজ্ঞতা শিশুকে আনন্দিত, দৃঢ়চেতা ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। পরিবারে কৃতজ্ঞতার চর্চা, সদ্ব্যবহার শেখানো ও ব্যর্থতাকে ইতিবাচকভাবে দেখার শিক্ষা শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সফলতা গড়ার পেছনে অভিভাবকদের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই বড় ভূমিকা রাখে। একটি সহানুভূতিপূর্ণ, সচেতন ও উদ্বুদ্ধ পরিবেশে শিশুরা তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা নিয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে।
রিফাত