
ছবি: সংগৃহীত
প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যেমন উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (PTSD) মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে, প্রাণীরাও তেমন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কাঁপুনি, আত্ম-ক্ষতি বা ধ্বংসাত্মক আচরণের মতো লক্ষণগুলো প্রাণীর মানসিক অস্থিরতার ইঙ্গিত হতে পারে। পোষা প্রাণী ও বন্যপ্রাণীদের এমন আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রাণীদের মানসিক অসুস্থতা: বাস্তবতা কী?
মানসিক অসুস্থতাকে সাধারণত মানুষের জন্যই প্রযোজ্য মনে করা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখাচ্ছে যে বিভিন্ন প্রাণীও আবেগজনিত সমস্যায় পড়তে পারে। গবেষক ও প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে এটি একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।
উদ্বেগ, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা ট্রমার মতো সমস্যা প্রাণীদের মাঝেও দেখা যায় এবং তাদের উপসর্গগুলো মানুষের মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। তাই, প্রাণীদের এই আচরণ বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাদের যথাযথ যত্ন নেওয়া যায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়।
প্রাণীদের মানসিক সমস্যার লক্ষণ
প্রাণীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা যেতে পারে, যদিও এটি মানুষের মতো প্রকাশ পায় না। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও কিছু পাখি প্রজাতি মানুষের মতোই উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। যেহেতু প্রাণীরা মৌখিকভাবে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না, তাই তাদের উদ্বেগ চিহ্নিত করাটা কঠিন।
কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—অতিরিক্ত কাঁপুনি, বারবার জায়গায় হাঁটা বা এমনকি বমি করা। উদাহরণস্বরূপ, একটি কুকুর মালিকের অনুপস্থিতিতে ধ্বংসাত্মক আচরণ করতে পারে, যা বিচ্ছেদজনিত উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। যদিও প্রাণীদের মানসিক রোগ মানুষের মতো নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তবে পশু চিকিৎসকরা আচরণগত লক্ষণ বিশ্লেষণ করেই উদ্বেগ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন।
কীভাবে প্রাণীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকাশ করে?
যদিও প্রাণীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না, তবে তাদের কার্যকলাপ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উদ্বিগ্ন পোষা প্রাণীরা ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট করতে পারে, অনবরত ঘেউ ঘেউ করতে পারে বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করতে পারে।
একইভাবে, চিড়িয়াখানায় বা গবেষণাগারে বন্দি শিম্পাঞ্জি ও অন্যান্য প্রাইমেটদের আত্ম-ক্ষতি বা বারবার এক ধরনের গতিবিধি করার প্রবণতা দেখা গেছে। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সামরিক কুকুরদের মধ্যেও PTSD-এর লক্ষণ দেখা যায়, যা মানুষের PTSD-এর মতোই। এসব লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করা গেলে প্রাণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব।
প্রাণীদের আচরণ বিশ্লেষণের গুরুত্ব
সব অদ্ভুত আচরণ মানসিক রোগের লক্ষণ নয়। কিছু প্রাণী ভয় থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠে, যা অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। কিছু মানসিক রোগ, যেমন সিজোফ্রেনিয়া, শুধুমাত্র মানুষের মস্তিষ্কের জটিলতার কারণে ঘটে, যা প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায় না। তবে, পরিবেশগত চাপ বা নির্যাতন প্রাণীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে।
প্রাণীদের আচরণ সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে তাদের সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এবং ভুল ব্যাখ্যার ঝুঁকি কমে যায়।
পোষা প্রাণীদের মানসিক সমস্যার সূক্ষ্ম লক্ষণ: মালিকদের সতর্ক থাকা জরুরি
প্রাণীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণগুলো অনেক সময় সূক্ষ্ম হয়। তবে, এগুলো উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, কোনো কুকুর যদি মালিক ফেরার অপেক্ষায় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে বা অতিরিক্ত বারবার নিজের শরীর চেটে, তাহলে সেটি উদ্বেগের লক্ষণ হতে পারে।
পোষা প্রাণীদের শরীরের ভাষা ও মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো তাদের মানসিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র দিতে পারে। শুধুমাত্র লেজ নাড়া মানেই প্রাণী খুশি—এমন প্রচলিত ধারণা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। সঠিক সময়ে যত্ন ও চিকিৎসা প্রাণীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে এবং তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করে।
ফয়সাল