ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

মহাকাশের সবথেকে নিকটবর্তী পৃথিবীর যে শহর!

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মহাকাশের সবথেকে নিকটবর্তী পৃথিবীর যে শহর!

লা রিনকোনাডা, পেরুর একটি বিশেষ শহর যা মহাকাশের সবচেয়ে নিকটবর্তী জনবসতিপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। এটি এমন একটি শহর যেখানে মানুষ মেঘের উপরে বসবাস করে, ৫১০০ মিটার উচ্চতায়, যেখানে বাতাসের ঘনত্ব খুবই কম এবং অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০% কম। এই শহরের বাসিন্দারা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই গুণ বেশি রক্ত কণিকা তৈরি করতে সক্ষম, কারণ তাদের শরীর অতিরিক্ত উচ্চতায় বাঁচতে অভিযোজিত হয়েছে।

এটি এমন এক জায়গা যেখানে সোনা খোঁজার জন্য ৫০,০০০ মানুষ বসবাস করছে। এখানকার জমি অনুর্বর এবং অক্সিজেনের অভাবে কোন গাছও বাঁচতে পারে না। এই শহরের দুর্বিষহ পরিবেশ এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ সত্ত্বেও, প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে এসে সোনার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বসবাস করছে।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতায় এই শহরটি স্থাপন, এটি এমন একটি স্থান যেখানে জনসংখ্যার চাপ এবং অপরাধের পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে বেশি। এখানকার কাজের পরিবেশও অত্যন্ত কঠিন, শ্রমিকরা প্রায়শই বিস্ফোরণ, গ্যাস বা দুর্ঘটনার শিকার হন। এই শহরটি "ডেভিস প্যারাডাইস" নামে পরিচিত, কারণ এটি এক ধরনের অবৈধ শহর, যেখানে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব।

এছাড়া, এখানকার মানুষদের দৈনন্দিন জীবন খুবই কঠিন। বিদ্যুৎ, গরম, রান্নাঘর বা বাথরুমের অভাব রয়েছে। বাসিন্দারা বেশিরভাগ সময় ময়লা ও আবর্জনার মধ্যে বসবাস করে, এবং তাদের গড় আয়ু মাত্র ৩৫ বছর। তবুও, এখানকার লোকেরা সোনা খোঁজার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এই কঠোর পরিবেশে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।

এখানে শ্রমিকদের জন্য কাজের পরিবেশ ভয়াবহ। ৩০ দিনের বিনা বেতনে কঠোর পরিশ্রমের পর, তারা একমাত্র তাদের শারীরিক শ্রমের বিনিময়ে মাত্র কিছু আকরিক নিতে সক্ষম হয়। তাদের উপার্জন প্রায়শই অতি নগণ্য, তবে আশায় আশায় তারা এখানে কাজ করতে থাকে, প্রত্যাশা করে যে একদিন হয়তো তাদের জীবনের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে। তবুও, বাস্তবতা হলো অধিকাংশ শ্রমিক অল্প পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েও সারা জীবন সেখানে আটকা পড়ে যায়।

লা রিনকোনাডার বাসিন্দারা, যদিও সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন, কিন্তু তাদের অনেকেই সেখানে এক প্রকার স্থায়ী হয়ে গেছে। শহরের অবকাঠামো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং পরিকল্পনাহীন। বিদ্যুৎ ছাড়া এখানে আর কোনো মৌলিক নাগরিক সুবিধা নেই—যেমন পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, কিংবা অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। শহরটি ধীরে ধীরে এক বিশাল বস্তির রূপ নিতে শুরু করেছে, যেখানে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এখানে গড়ে ওঠা ছোট ছোট বাড়িগুলোর মধ্যে টিন, কাঠ, রড, প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, যা সরবরাহের অভাবে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী বসবাসের জন্য। পারদ এবং রাসায়নিক বর্জ্যের স্রোত শহরের খোলা ড্রেনে চলে যায়, যা বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। এছাড়া, যেহেতু এই শহরে কোন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নেই, তাই এখানে কর্মরত মানুষদের জীবন এক কঠিন সংগ্রাম। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও, শহরটি একটি 'স্থায়ীভাবে অস্থায়ী শহর' হিসেবে পরিচিত, যেখানে কর্মের সন্ধানে আসা শ্রমিকরা অনেকেই সেখানে জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেয়।

লা রিনকোনাডার অর্থনৈতিক কাঠামো এবং জীবনযাত্রার মান এক বিরল এবং অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এখানে স্বপ্নের পর স্বপ্ন খোঁজা হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো একটি নিঃসঙ্গ এবং দুঃখজনক চক্রের মধ্যে আটকা পড়া। এখানকার মানুষ একদিকে স্বর্ণের প্রলোভনে ছুটে আসে, অন্যদিকে অপরদিকে বিপদ, দারিদ্র্য, এবং হতাশা তাদের জীবনকে শাসন করে।

সূত্র: https://tinyurl.com/2s3bpk8u  

 

আফরোজা

×