ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

জমিদার হিসাবে কেমন মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ?

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জমিদার হিসাবে কেমন মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ?

ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—বাংলা সাহিত্যের মহর্ষি, কবিগুরু, দার্শনিক ও বিশ্বকবি। কিন্তু তিনি শুধু সাহিত্যিক নন, ছিলেন এক বিশাল জমিদারির কর্তা। ঠাকুরবাড়ির নদিয়া, যশোর ও রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল এই জমিদারি। 

তবে জমিদার হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি? কঠোর শাসক নাকি প্রজাবান্ধব অভিভাবক?

১৮৮৯ সালে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মূলত পূর্ববঙ্গের (আজকের বাংলাদেশ) শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে বসবাস করতেন এবং সেখান থেকেই জমিদারি দেখভাল করতেন। নৌকায় চড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে তিনি প্রজাদের সমস্যা শুনতেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতেন এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন।

অনেক জমিদারের মতো নিষ্ঠুর ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। তিনি প্রজাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেন। খাজনা কমানো, কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করা এবং শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেওয়া ছিল তার অন্যতম কাজ। তিনি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে চাষিরা উচ্চ সুদের দাদন ব্যবসায়ীদের কবল থেকে মুক্তি পান।

প্রজাদের শিক্ষার জন্য তিনি বিভিন্ন স্কুল ও পাঠশালা গড়ে তোলেন। প্রজাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তিনি শান্তিনিকেতনের আদলে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার চিন্তা করেছিলেন।

যদিও মানবিক ছিলেন, তবু জমিদারি পরিচালনায় কঠোরতাও ছিল। কৃষকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার দিলেও তিনি জমিদারির আয় রক্ষা করার দিকেও নজর রাখতেন।

রবীন্দ্রনাথ জমিদারির প্রতি কখনোই মোহাবিষ্ট ছিলেন না। বরং জমিদারি ব্যবস্থার অবসানকেই সমর্থন করতেন। পরবর্তীতে জমিদারি ত্যাগ করে সাহিত্য ও সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন।

জমিদার রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যরকম। তিনি ছিলেন প্রজাদের প্রতি দায়িত্বশীল, মানবিক এবং সংস্কারমুক্ত এক জমিদার। তার জমিদারি পরিচালনা ছিল বাংলা জমিদারি ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শিলা ইসলাম

×