ছবিঃ সংগৃহীত
সমাজে বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হলো, পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যদিও এটি সব পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তবে সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষদের একটি বড় অংশ সম্পর্ক বা আকর্ষণের ক্ষেত্রে শারীরিক গঠন ও বাহ্যিক রূপকে গুরুত্ব দেয়। এই প্রবণতা কেবল ব্যক্তিগত নয়; এটি একটি সামাজিক সমস্যারও জন্ম দিয়েছে।
সমস্যার শিকড়
মানবজীবনের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে মানুষ সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে পুরুষদের এই প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক কাঠামো এবং প্রভাব থেকে তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যম, সিনেমা, বিজ্ঞাপন ও পপ সংস্কৃতি নারীর সৌন্দর্যের একটি নির্দিষ্ট মাপকাঠি তৈরি করেছে, যা পুরুষদের মধ্যে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রধান হিসেবে দেখার অভ্যাস তৈরি করেছে।
কেন পুরুষরা বেশি করে?
১. সামাজিক কুসংস্কার:
ছোটবেলা থেকেই পুরুষরা নারীর সৌন্দর্যের প্রতি প্রশংসা করতে উৎসাহিত হয়। এটা তাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা তৈরি করে যে শারীরিক সৌন্দর্যই সম্পর্কের মূল ভিত্তি।
২. গণমাধ্যমের ভূমিকা:
সিনেমা, টিভি সিরিজ বা বিজ্ঞাপনে নারী চরিত্রগুলিকে প্রায়ই "আকর্ষণীয়" বা "পারফেক্ট" রূপে দেখানো হয়। এতে পুরুষরা নারীদের বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই বেশি গুরুত্ব দিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
৩. মানসিকতা ও প্রাধান্যের পার্থক্য:
অনেক সময় পুরুষরা সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মানসিকতা, মান এবং গুণাবলীর চেয়ে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়। এটি সম্পর্কের গভীরতার অভাব ঘটায়।
এর নেতিবাচক প্রভাব
১. নারীদের প্রতি অবমূল্যায়ন:
শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে নারীদের বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা এবং মানবিক গুণাবলীর গুরুত্ব কমে যায়। এতে নারীরা অনেক সময় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে বঞ্চিত হয়।
২. সম্পর্কে টেকসই সমস্যার সৃষ্টি:
বাহ্যিক সৌন্দর্যের ভিত্তিতে তৈরি সম্পর্কগুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কারণ, যখন বাহ্যিক আকর্ষণ কমে যায়, তখন সম্পর্কের গভীরতাও কমে যায়।
৩. নারীদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব:
পুরুষদের এই প্রবণতা নারীদের মধ্যে একটি অযথা সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা তৈরি করে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং তারা শারীরিক সৌন্দর্য নিয়েই বেশি চিন্তিত হয়ে ওঠে।
সমাধানের পথ
১. সচেতনতা বৃদ্ধি:
সমাজে এমন বার্তা ছড়ানো প্রয়োজন যে সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক নয়। একজন মানুষের মানসিকতা, আচরণ এবং মূল্যবোধও আকর্ষণের মূল উপাদান।
২. শিক্ষা এবং আলোচনার প্রসার:
পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতা তৈরি করতে পারে।
শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া একটি সামাজিক সমস্যা, যা মূলত পুরুষদের আচরণে বেশি দেখা যায়। এটি নারীদের প্রতি অবিচার এবং সমাজে অগভীর সম্পর্ক তৈরির জন্য দায়ী। সমাজে এই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হলে পুরুষদের আরও সচেতন হতে হবে এবং নারীদের প্রকৃত গুণাবলীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
রিফাত