ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

বোবা ধরা ভৌতিক নয়! বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

বোবা ধরা ভৌতিক নয়! বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?

রাতের গভীরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে যদি মনে হয় বুকের ওপর ভারী কিছু চেপে বসেছে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শরীর নড়াচড়া করতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করা যাচ্ছে না—এ অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। আমাদের দেশে এটি 'বোবা ধরা' নামে পরিচিত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো ভৌতিক ঘটনা নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো স্লিপ প্যারালাইসিস।

স্লিপ প্যারালাইসিস কী?

স্লিপ প্যারালাইসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্ক জেগে উঠলেও শরীর তখনও ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। ঘুমের নির্দিষ্ট স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়ার সময় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে শরীরের পেশিগুলো অস্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে এবং মানুষ হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রান্তিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়।

অনেকেই এই সময়ে ভয়ানক অনুভূতির শিকার হন। কেউ অদৃশ্য কোনো উপস্থিতি অনুভব করেন, কেউ গলা চেপে ধরার অনুভূতি পান, আবার কেউ অদ্ভুত গন্ধ বা কোনো জীব-জন্তুর উপস্থিতি অনুভব করেন। এই ধরনের হ্যালুসিনেশন আমাদের সংস্কৃতিতে ভৌতিক গল্প বা অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

কেন ঘটে স্লিপ প্যারালাইসিস?

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্লিপ প্যারালাইসিসের প্রধান কারণগুলো হলো:

*অতিরিক্ত মানসিক চাপ।

*অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস।

*পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব।

*অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া।

*বিষণ্নতা বা উদ্বেগ।


এ ছাড়া, যাঁরা পিঠের ওপর শুয়ে ঘুমান, তাঁদের ক্ষেত্রে স্লিপ প্যারালাইসিসের আশঙ্কা বেশি দেখা যায়।

এর থেকে মুক্তির উপায় কী?

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে বাঁচতে ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা এবং মানসিক চাপ কমানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলো সহায়ক হতে পারে:

1. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া।
2. দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
3. শোবার আগে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
4. ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।

যদি এই সমস্যা ঘন ঘন দেখা দেয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ভৌতিক নয়, বৈজ্ঞানিক বিষয়

‘বোবা ধরা’ নিয়ে বহু ভুল ধারণা প্রচলিত থাকলেও এটি কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। এটি ঘুমের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলে এই অভিজ্ঞতা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সঠিক যত্ন ও ঘুমের রুটিন মেনে চললে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

রিফাত

×