ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

একজন যৌন থেরাপিস্ট শেয়ার করছেন কেন ‘দোষ থেকে সেক্স’ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।

 ‘শাট আপ সেক্স’ কীভাবে সম্পর্ক ধ্বংস করে?

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১০ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৭:১২, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

 ‘শাট আপ সেক্স’ কীভাবে সম্পর্ক ধ্বংস করে?

ছবি : সংগৃহীত

আপনি কি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ‘শাট আপ সেক্স’ করছেন—অর্থাৎ এমন একটি যৌন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন যা আপনি সত্যিই উপভোগ করছেন না, কিন্তু আপনার সঙ্গীর জন্য করছেন? যদি উত্তরটি হ্যাঁ হয়, তবে এটি অপ্রত্যাশিত নয়।


‘যৌন ইচ্ছার পার্থক্য’—যখন এক সঙ্গীর ইচ্ছা অন্য সঙ্গীর তুলনায় বেশি বা কম থাকে—এটি দম্পতিদের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ, অবশ্যম্ভাবী এবং স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে এই গতিশীল সমস্যার সমাধান করার জন্য কিছু পদ্ধতি অন্যগুলোর তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং সহায়ক।

‘শাট আপ সেক্স’ কেন দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ

অনেক বছর ধরে একজন যৌন থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ‘শাট আপ সেক্স’ একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। কিছু মানসিক থেরাপিস্ট দম্পতিদের এই কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও আমি এর সঙ্গে একমত নই।

আমি এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো দেখতে পাই যখন দম্পতিরা আমাকে সাহায্যের জন্য আসে। যদি ‘শাট আপ সেক্স’ আপনার মূল পদ্ধতি হয়ে থাকে, তবে আমি আপনাকে অন্য একটি পথ বেছে নিতে অনুরোধ করছি। এখানে কেন এটি ঝুঁকিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করা হলো।

১. ৮০ শতাংশ দম্পতির মধ্যে যৌন ইচ্ছার পার্থক্য দেখা যায়

যৌন ইচ্ছার পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে এটি আপনার সম্পর্ক বা যৌন জীবনের সন্তুষ্টিতে পরিবর্তন আনতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।

২. ‘শাট আপ সেক্স’-এর স্বাস্থ্যকর বিকল্প

আপনি এবং আপনার সঙ্গী এই পার্থক্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন সঠিক সময়ে কথা বলে। সমস্যাটি নিয়ে কথা বললে ইচ্ছা-অপূর্ণ সঙ্গী বুঝতে পারে যে তার অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আপনারা একসঙ্গে চিন্তা করতে পারেন অন্যান্য কাজের বিষয়ে যা মুহূর্তে করতে পারেন। যদি সম্পর্ক ভালো থাকে এবং ভালোবাসা প্রাধান্য পায়, তবে এমনকি যৌনমিলনের ইচ্ছা না থাকলেও চুম্বন এবং ছোঁয়াচে আনন্দ থাকতে পারে।

একজন নারী, উদাহরণস্বরূপ, যৌনমিলন বাদ দিয়ে ‘আউটারকোর্স’ (যেখানে পেনিট্রেশন ছাড়া অন্য শরীরবৃত্তীয় উপায়ে সংযোগ স্থাপন হয়) প্রস্তাব করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সঙ্গম ছাড়াই সারা শরীরের স্পর্শ এবং চোখে চোখ রেখে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।

৩. লিঙ্গভিত্তিক বিষয়

যদিও ‘শাট আপ সেক্স’ যে কোনো সম্পর্কেই ঘটতে পারে, এটি সবচেয়ে বেশি ঘটে ভিন্নলিঙ্গের দম্পতিদের মধ্যে, যেখানে পুরুষরা সাধারণত বেশি আগ্রহী। টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের মধ্যে ইচ্ছা তৈরি করে এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের শরীরে এর মাত্রা ৭-৮ গুণ বেশি।

৪. ‘শাট আপ সেক্স’-এর সাধারণ ঝুঁকি

‘শাট আপ সেক্স’ সাধারণত তাড়াহুড়ো করে করা হয়, এতে প্রায়শই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা আবেগ থাকে না। এর ফলে যে সঙ্গী অংশ নিচ্ছেন, তার জন্য এটি আনন্দের বদলে একটি দায়িত্বের মতো মনে হতে পারে। নারীরা প্রস্তুতি ছাড়া যৌনমিলনে গেলে শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

৫. সম্মতি এবং জবরদস্তির মধ্যে সীমারেখা

অনেক নারী আমাকে জানান যে তারা বছরের পর বছর ধরে ‘শাট আপ সেক্স’ করেছেন এবং এটিকে স্বাভাবিক মনে করেছেন। কিন্তু তারা গভীরভাবে অনুভব করেছেন যে এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা সঙ্গীর প্রতি অবজ্ঞা বা নিজের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে পারে।

৬. ব্যক্তিগত উন্নতির সুযোগ নষ্ট হওয়া

অনেক নারী হয়তো যৌন আনন্দ কীভাবে উপভোগ করতে হয় তা শিখেননি। এর জন্য পারিবারিক পরিবেশ বা শৈশবের অভিজ্ঞতা বড় ভূমিকা পালন করে।

যারা এই অভ্যাসে লিপ্ত, তারা তাদের যৌন জীবনে গভীরতা এবং আনন্দের বিকাশের সুযোগ হারায়। একইভাবে, যিনি বারবার যৌনতার জন্য চাপ দেন, তিনি নিজের আত্মমূল্য এবং আত্মপ্রেমের অভাব অনুভব করতে পারেন।

‘শাট আপ সেক্স’ সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এটি আপনার সম্পর্ক এবং যৌন জীবনের প্রতি আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সঙ্গীর সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলা, বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করা এবং নিজেদের আবেগ ও যৌন জীবনের প্রতি সচেতন হওয়া ভালো সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য।

 

অ্যালাইন জোল্ডব্রড, পিএইচ.ডি.
বস্টনের মনোবিজ্ঞানী এবং যৌন থেরাপিস্ট, ‘সেক্সস্মার্ট’ বইয়ের লেখক।

মো. মহিউদ্দিন

×