ছবি: সংগৃহীত
বাংলা, বিহার ও ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে নবাবের পরাজয় ছিল এক নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের ফল। মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, উমিচাঁদসহ একাধিক বিশ্বাসঘাতকের কুটচালে বাংলার স্বাধীনতা প্রায় ২০০ বছরের জন্য হারিয়ে যায়।
তবে ষড়যন্ত্রকারীরা যে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, তার পরিণাম সুখকর হয়নি। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তাদের প্রায় সবাই করুণ এবং দৃষ্টান্তমূলক পরিণতির শিকার হয়েছিলেন।
মীরজাফর, যাকে বাংলায় বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়, সিরাজউদ্দৌলার পবিত্র কুরআন শরিফ মাথায় রেখে পাশে থাকার শপথ ভঙ্গ করেন। পরবর্তীতে তার জামাতা মির কাসেম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। মীরজাফর দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
সিরাজ হত্যার প্রধান কুশীলব মির মিরনের ভাগ্যও ভয়াবহ ছিল। নবাবের মা আমেনার অভিশাপে তাঁর তাঁবুতে বজ্রপাত ঘটে এবং সেই আগুনে মিরন মারা যান।
ঘষেটি বেগম, যিনি নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক ছিলেন, মিরনের নির্দেশে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। উমিচাঁদ, আরেক ষড়যন্ত্রকারী, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে কাজ করা ক্লাইভ দুর্নীতির অভিযোগে নিজ দেশ ইংল্যান্ডে অপমানিত হন। এই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি বাথরুমে ক্ষুর দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন।
স্ক্রাফটনের মৃত্যু হয় বিলাত ফেরার পথে জাহাজডুবিতে। ওয়াটসন দুরারোগ্য ব্যাধিতে অল্প বয়সে মারা যান।
পলাশির বিশ্বাসঘাতকদের প্রায় সবাই অপঘাতে, দুরারোগ্য ব্যাধিতে বা আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকরা কখনো শেষ পর্যন্ত সুখী হয় না। তারা পরকালের শাস্তি তো ভোগ করেই, দুনিয়াতেও অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়।
তাবিব