
ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবে কাজের আশায় গিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক। তাদের অনেকেই সেখানে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ জেল খেটেছেন, আবার কেউ মাসের পর মাস কাজ করেও পাননি বেতন। কেউ কেউ মামলা করেও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
দেশে ফিরে আসা এক প্রবাসী জানান, “২২ মাস সৌদি আরবে কষ্ট করলাম, কিন্তু হাতে কিছুই নাই। না পাইছি বাড়ির টিয়া বাডাবার টাকা, না পাইছি বাবার দেয়া সহায়তা। আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য এই অভিজ্ঞতা ছিল বিভীষিকাময়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাচ্ছি যেন ভবিষ্যতে কাউকে এভাবে প্রতারণার শিকার হতে না হয়।”
বলা হয়, এদের অধিকাংশই দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি ছিল ভালো বেতনের চাকরির, কিন্তু বাস্তবে তারা কাজ পাননি, বরং অনেককেই নেওয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল, কপি শপ, বা ফ্যাক্টরিতে – যেখানে দিনের পর দিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করিয়েও তাদের কোনো বেতন দেয়া হয়নি। যারা কাজ পাননি, তারা হোটেলে থাকতে থাকতে নিজের জমানো টাকাও শেষ করে ফেলেছেন।
আরেক প্রবাসী জানান, “আমার কফিলের (নিয়োগকর্তা) কাছে ২৯ মাসের বেতন পাওনা ছিল – ৫৮,০০০ রিয়াল। আমি মামলা করেছিলাম। কিন্তু একদিন সকালে প্রশাসনের লোক এসে বলে থানায় যেতে হবে। থানায় নিয়ে গিয়ে আমার আকামা (আবসারের অনুমতিপত্র) বাতিল করে দেয় এবং দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। মামলা, পাওনা সবকিছু হাওয়া হয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বৈধভাবে সেখানে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাকে ‘হুরুব’ (অবৈধ ঘোষণা) করে দেয়া হয়। পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। জেলে ছিলাম ১০ দিন। দিনে একবার শুধু একটা রুটি খেতে দিত।”
প্রবাসীরা জানান, সৌদি আরবে এখন ‘অটো হুরুব’-এর নামে একটি নতুন প্রতারণা চলছে। কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই অনেকের নাম হুরুব তালিকায় চলে আসে। চেকপোস্টে ধরা পড়লে তখন জানা যায়, তাদের আকামা বাতিল হয়েছে। ফলে জেল বা দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না।
দেশে ফিরে আসা এক প্রবাসী বলেন, “২৫ বছর বিদেশে থাকার পর আমার পরিবার আজ এত কষ্টে আছে যে, এক মুঠো ভাত জোগাড় করতেও মানুষের দরজায় যেতে হয়। এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না।”
তাদের দাবি, এই সংকট শুধু ব্যক্তিগত না; এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র। সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। শ্রমিকেরা বলেন, বিষয়টি দ্রুত উচ্চপর্যায়ে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
অসহায় প্রবাসীদের প্রশ্ন—যেখানে তারা তাদের ঘাম, শ্রম, সময় দিয়েছে, সেখানে ন্যায্য পাওনা চাওয়াটাই যদি অপরাধ হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে?
বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের এই করুণ বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করে—বিদেশে কর্মসংস্থানের আগে যথাযথ নিয়ম ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। তা না হলে হাজারো শ্রমিক এভাবেই প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরতে বাধ্য হবেন।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=d8ybrC2wVk4
এম.কে.