
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ (এইচআরডিবি) আয়োজিত ‘বিডিআর ট্রাজেডি ২০০৯: অগ্রগতি, বিচার ও ন্যায়বিচারের অনুসন্ধান’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র সময় সকাল ১১টা এবং বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
ড. রেজাউল হাসান রিয়াজ-এর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্যা গালিব।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, মেজর জেনারেল (অব.) সায়েদ মনিরুল ইসলাম কনক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম।
কী-নোট প্রেজেন্টার ড. মির্যা গালিব ২০০৯ সালের বিডিআর ট্রাজেডির কারণ, এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এই ঘটনাকে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এর মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন তাঁর বক্তব্যে বলেন, "আমরা এতদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা শুনেছি, এগুলো সব মিথ্যা কথা। এটি আওয়ামী লীগের মতো করে একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, এখানে সত্যের কোনো ধরনের চিহ্ন রাখা হয়নি।"
তিনি সেনাবাহিনী, সরকার ও বহির্বিশ্বের ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার দাবি করেন।
মেজর জেনারেল (অব.) সায়েদ মনিরুল ইসলাম কনক বিডিআর ট্রাজেডির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, "এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ন্যাক্কারজনক অধ্যায়।"
তিনি ট্রাজেডির বিভিন্ন দিক ও সামরিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমান পরিস্থিতি ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ তথ্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী হিসেবে পরিগণিত ছিল। এই শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার জন্য বিডিআর ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল।"
জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।
তিনি আরও বলেন, "বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি যারা জড়িত, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সকল হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকার যেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে।"
মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরুল আলম বিদ্রোহের ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ করে বলেন, "এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে উপযুক্ত তদন্ত, স্বচ্ছ বিচার ও ঘটনার সঠিক নথিবদ্ধকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
তিনি বলেন, "ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের নামের সাথে মিল রেখে আওয়ামী লীগের দেওয়া বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) নাম প্রত্যাহার করে বিডিআর নাম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
এইচআরডিবি-এর সেক্রেটারি জনাব দেলওয়ার মজুমদার আলোচনার মাধ্যমে সেমিনারটি শেষ হয়। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারিকে "শহীদ সেনা দিবস" ঘোষণা করায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবি পেশ করেন—
১) ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনকে শোক দিবস হিসেবে পালন করতে হবে।
২) নতুন তদন্ত কমিটিকে সরকার, সেনাবাহিনী এবং বিজিবি থেকে সকল প্রকার সহায়তা করতে হবে।
৩) যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচার কাজ শেষ করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
৪) তদন্ত রিপোর্ট পাবলিকলি প্রকাশ করতে হবে।
৫) যে সমস্ত অফিসারদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
৬) যে সমস্ত বিডিআর জওয়ানদের অন্যায়ভাবে নির্যাতন বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭) বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর যেসব আর্মি অফিসার ও বিডিআর জওয়ান সত্য প্রকাশের চেষ্টা করেছেন, তাদের অনেককে হত্যা ও গুম করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে।
৮) বিজিবি-এর নাম পরিবর্তন করে আগের বিডিআর নাম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৯) যারা পূর্বের তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারী গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা তাঁদের মতামত প্রদান করেন। তাঁরা বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
সজিব