থ্যাংকস গিভিং ডে উৎসবে প্রবাসীরা
বড়দিনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উৎসব থ্যাংকস গিভিং ডে। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পালন করেছে ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস অথবা থ্যাংকস গিভিং ডে’। দিনটি আমেরিকায় সরকারি ছুটির দিন।
প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র উত্তর আমেরিকাজুড়ে উদ্যাপন হয়ে আসছে এই বিশেষ দিনটি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের ভাষ্যমতে, ৯০ শতাংশ মার্কিন এই দিনে টার্কি দিয়েই সারা দিনের ভোজনপর্ব সম্পন্ন করে।
থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্য টার্কি ডেও বলে থাকে। থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র মূল ঊদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সকলে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি সাফল্যে দেশ ও জাতির জন্য শোকরানা আদায় ও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো।
থ্যাঙ্কস গিভিং ডে মানেই টার্কী আর পার্টি। এর পাশাপাশি বিশাল ভোজ আয়োজন আর পরিনত হয় পারিবারিক মিলনমেলায়। ভুরিভোজনের তালিকায় থাকে টার্কী রোস্ট, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো, ক্র্যানবেরী সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি আর ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। আর কিছু না হোক, অতি সাধারণ আয়োজনেও টার্কী রোস্ট, ক্র্যানবেরী সস এবং পামকিন পাই থাকবেই। আর এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন শহরগূলোতে ঘরোয়াভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের পরিবার পরিজন আর বন্ধুবান্ধবের নিয়ে থ্যাংক্স গিভিং ডে পালন করেছে। এ দিনে দেশ ও জাতির প্রতিটি সাফল্যের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান সর্বস্তরের নাগরিকরা।
প্রতিটি থ্যাঙ্কসগিভিং মওসুমে, হোয়াইট হাউস একটি করে টার্কি অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুটি করে টার্কি হোয়াইট হাউসে ‘টার্কি পার্ডন’ নামে পরিচিত জায়গাটিতে থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষ্য একটি জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট তার সামনে রাখা জীবন্ত টার্কিকে জীবন ভিক্ষা দিয়ে থাকেন।
ইতিহাসবিদদের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাস্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ছেলে ট্যাড লিঙ্কন, তার বাবাকে ‘জ্যাক’ নামের একটি টার্কিকে ছুটির খাবার থেকে বাঁচাতে বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ভাগ্যবান সেই ‘জ্যক’ নামে টার্কিরে অবশ্য ক্ষমা করেছিলেন।
১৯৪৭ সাল থেকে হোয়াইট হাউসে প্রচলিত রীতি অনুসারে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বছর থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষে ‘পিচ ও ব্লোজম’ নামে এ দূ’টো টার্কিকে জবাই করা হবে না, এই মর্মে এক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে টার্কিগুলোকে আনুষ্ঠানিক মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর ২০২৪ সালে মাফ করে দেওয়া সৌভাগ্যবান দুটো টার্কিদের তখন সরাসরি মিনেসোটার ফার্মামেরিকা ওয়াসেকার এগ্রিকালচারাল ইন্টারপ্রিটিভ সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পাখিটিকে জবাই করা হবে না, তবে এর পরে এ পাখিটির ভাগ্যে আসলে কি ঘটে? বার্ষিক রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করে দেওয়া টার্কির স্বাভাবিক ভাগ্যের দিকে কিছুটা মনোযোগ আকর্ষণ করে যেমন বিভিন্ন স্কুলে ক্ষমা করা টার্কিগুলোকে প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো হয়। ন্যাশনাল টার্কি ফেডারেশনের ভাষ্যমতে, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উপলক্ষ্যে প্রায় ৫ কোটি টার্কি হত্যা করা হয়। বাস্তবতা হলো, চাহিদার কারণে ক্ষমা করা টার্কিদের জন্যেও তাদের ভাগ্যে অনেকসময় অভয়ারণ্যের নিচ্চয়তা দেয় না।
টার্কি আমাদের দেশে ‘তিতির’ বা চিনা মুরগি নামে পরিচিত এবং শোভাবর্ধনকারী পাখিগুলোর মধ্যে তিতির অন্যতম। আমাদের দেশে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে তিতির দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলোর মতো ক্যালিফোর্নিয়ার মরেনো ভ্যালীর শহরেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালন করছে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উৎসব। বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এ বিশেষ দিনটি পালন উপলক্ষ্যে তাদের পছন্দের নানা রকমের সুস্বাদু খাবার আর উপহার সামগ্রী নিয়ে উপস্হিত হন।
উৎসবের আয়োজনের মধ্যে ছিল টার্কিসহ নানা রকমের মুখরোচক খাবার, পিঠা আর পরিচিত বন্ধু আর বান্ধবীদের সাথে বিরামহীন আড্ডা। আর এই আড্ডার মাঝে ছিল ঘরোয়া আয়োজনে সৌখিন শিল্পীদের নিয়ে গানের আয়োজন।
এম হাসান