
ছবি: সংগৃহীত
চার্লস বুকোস্কি—এক অদ্ভুত নাম। সাহিত্যের বোহেমিয়ান এই কবি, যাঁর কলমে ফুটে উঠেছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা, ভাঙাচোরা সম্পর্ক, পানশালার নিঃসঙ্গতা আর আমেরিকার আন্ডারক্লাস জীবনের অন্তর্গত সত্য। কিন্তু সেই বুকোস্কিরই হৃদয়ের গোপনে একটা ছোট্ট, কোমল পাখি আছে—একটা নীল পাখি, যেটা বাইরে আসতে চায়।
এই কবিতাটি, “Bluebird”, প্রকাশ করে এক পুরুষের সেই মৃদু স্বর, যেটা সে আড়াল করে রাখে। সমাজ যাকে দেখে কঠিন, রুক্ষ, নির্দয় বলে, সে-ই ব্যক্তি হয়তো নিজের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে অগোচর ভালোবাসা, কান্না, দুর্বলতা।
কবিতা: নীল পাখি
চার্লস বুকোস্কি
আমার হৃদয়ের ভেতর একটা নীল পাখি আছে
সে বাইরে বেরোতে চায়,
কিন্তু আমি তার জন্য খুব কঠিন,
বলেছি, ভেতরে থাকো,
আমি কাউকে দেখাতে চাই না
তোমাকে।
আমার হৃদয়ের ভেতর একটা নীল পাখি আছে
সে মুক্তি চায়,
কিন্তু আমি তার ওপরে হুইস্কি ঢালি
আর সিগারেটের ধোঁয়া টানি
আর বারমেইড, বেশ্যা, দোকানের কেরানিরা
কখনোই জানে না
সে ওখানে
আছে।
আমার হৃদয়ের ভেতর একটা নীল পাখি আছে
সে উড়তে চায়,
কিন্তু আমি একটু চালাক,
তাকে বের করি শুধু রাতের বেলা
যখন সবাই ঘুমায়।
তাকে বলি,
আমি জানি তুমি আছো,
দুঃখ কোরো না।
তারপর আবার ঢুকিয়ে দিই ভেতরে,
কিন্তু সে একটু গুনগুন করে,
আমি তাকে পুরো মরতে দিইনি
আর আমরা একসঙ্গে ঘুমাই
এই গোপন চুক্তি নিয়ে।
এটা এতটাই কোমল,
যে একজন পুরুষের কান্না পেতে পারে,
কিন্তু আমি কাঁদি না—
তুমি কি কাঁদো?
এই কবিতায় বুকোস্কি ভাঙেন পুরুষালি শক্তিমত্তার দেয়াল। তিনি আমাদের জানান, তার ভেতরেও রয়েছে আবেগ, রয়েছে ভালোবাসা, রয়েছে কষ্ট। তিনি এই কোমলতাকে আড়াল করেন, কারণ এই সমাজে একজন পুরুষের কাঁদা, ভালোবাসা বা ভাঙা স্বপ্নের কথা প্রকাশ করা দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়।
এই কবিতাটি যেন আমাদের প্রত্যেকের ভেতরের সেই “নীল পাখি”কে চিনে নেওয়ার ডাক। হয়তো আমরা সকলেই এমন কিছু লুকিয়ে রাখি—ভয়, ভালোবাসা কিংবা স্বপ্ন, যেটা কাউকে বলি না, কেবল গভীর রাতে, নিঃশব্দে, নিজের সঙ্গে ভাগ করি।
এই “নীল পাখি” কি আমাদের সবারই আছে?
আপনি কখন শেষবার নিজের ভেতরের নরম জায়গাটাকে অনুমতি দিয়েছেন বেরিয়ে আসতে?
সমাজের চাপ, পরিচয়ের মুখোশ—এই সবকিছুর ভেতরেও কি আমরা অনুভব করতে পারি বুকোস্কির মতো গভীর আবেগ?
চার্লস বুকোস্কির Bluebird কেবল একটি কবিতা নয়, এটি এক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। এটা পুরুষালি মুখোশের নিচের আবেগের রঙ। এই কবিতায় তিনি কাঁদেন না ঠিকই, কিন্তু আমরা পাঠকরা হয়তো চুপচাপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। নীল পাখির সেই মৃদু গানটা শুনতে পাই—ভিতর থেকে।
এসএফ