
আল মাহমুদের কবিতা
বোশেখ
যে বাতাসে বুনোহাঁসের ঝাঁক ভেঙে যায়
জেটের পাখা দুমড়ে শেষে আছাড় মারে
নদীর পানি শূন্যে তুলে দেয় ছড়িয়ে
নুইয়ে দেয় টেলিগ্রাফের থামগুলোকে।
সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি
তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহাপ্রতাপশালী,
গরিব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ?
কী সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে?
বেগুন পাতার বাসা ছিঁড়ে টুনটুনিদের
উল্টে ফেলে দুঃখী মায়ের ভাতের হাঁড়ি
হে দেবতা, বলো তোমার কী আনন্দ,
কী মজা পাও বাবুই পাখির ঘর উড়িয়ে?
রামায়ণে পড়েছি যার কীর্তিগাথা
সেই মহাবীর হনুমানের পিতা তুমি?
কালিদাসের মেঘদূতে যার কথা আছে
তুমিই নাকি সেই দয়ালু মেঘের সাথী?
তবে এমন নিঠুর কেন হলে বাতাস
উড়িয়ে নিলে গরিব চাষির ঘরের খুঁটি
কিন্তু যারা লোক ঠকিয়ে প্রাসাদ গড়ে
তাদের কোনো ইট খসাতে পারলে না তো।
হায়রে কতো সুবিচারের গল্প শুনি,
তুমিই নাকি বাহন রাজা সোলেমানের
যার তলোয়ার অত্যাচারীর কাটতো মাথা
অহমিকার অট্টালিকা গুঁড়িয়ে দিতো।
কবিদের এক মহান রাজা রবীন্দ্রনাথ
তোমার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন করজোড়ে
যা পুরানো শুষ্ক মরা, অদরকারি
কালবোশেখের একটি ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে।
ধ্বংস যদি করবে তবে, শোনো তুফান
ধ্বংস করো বিভেদকারী পরগাছাদের
পরের শ্রমে গড়েছে যারা মস্ত দালান
বাড়তি তাদের বাহাদুরি গুঁড়িয়ে ফেলো।
নতুন বছরে
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
ভোর এসে দোরে আজ দিয়ে যায় নাড়া
পুরনো সে জঞ্জাল ভাবনা ধারাÑ
মুছে ফেলে তাতে এলো নতুন গতি
বাগানে উড়ুক রঙিন শুভ প্রজাপতি।
যত ভুল ভ্রান্তিও অপরাধগুলো
নতুন আজ বছরে সবটুকু ভুলো।
ভুলে গিয়ে অপমান পঁচা বাসি ঠেলে
মুক্ত হাওয়ায় সুখে ডানা দাও মেলে।
ফেলে দাও আছে যত জঞ্জাল ভবে
মেতে ওঠো সুন্দর নতুন উৎসবে।
জীর্ণ ও পুরানোকে পিছে ফেলে রেখে
নতুনের কপালেতে টিপ দাও এঁকে।
রোদ-ঝড়ে মেলে ধরো সত্যের ছাতা
ঝরে যাবে মিথ্যের অশোভন পাতা।
ঘুচে যাক মন্দ ও নষ্টের দাগ
প্রাণে প্রাণ মিলেমিশে থাক অনুরাগ।
প্যানেল