
Bangla New Year has been celebrated with pomp and gaiety since late 1990 in vast areas of Queens and in Times Square, Manhattan since 2022; the day is celebrated with community singing and performances by 100+ groups from India, Bangladesh, and the United States; (Senate Resolution No. 234)
রেজুলেশনে অভিবাসী বাঙালিদের নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাসকে তুলে ধরে শেষে বলা হয়েছে...his Legislative Body pause in its deliberations to memorialize Governor Kathy Hochul to proclaim April 14, 2025, as Bangla New Year Day in the State of New York, and to recognize the many contributions of Bangla speaking diasporas in New York; (Senate Resolution No. J234) অর্থাৎ ‘নিউইয়র্কে বাংলাভাষী প্রবাসীদের অসংখ্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাই এখন এই আইনসভা ১৪ এপ্রিলকে নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য বাংলা নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করল।’ এভাবেই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এই রেজুলেশন বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ‘সংবিধান’। এটি যেমন আনন্দের তেমনি গৌরবের। ১৪৩২ বঙ্গাব্দের আগমনে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া অনুধ্যান, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। নববর্ষে আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি অপসৃত; পুরাতন বছরের আবর্জনা দূরে, অন্তর্ধানে। পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস ও ঈদের পর দেশ-বিদেশের বাঙালি জীবনে আরও একটি উৎসবের ব্যস্ততায় উদ্ভাসিত। প্রবাস জীবনের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ সমস্যার উপত্যকা পেরিয়ে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। মার্কিন কবি টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস’, দেখা যাচ্ছে কবির কথাই সত্য। কেবল আবহাওয়াজনিত বাংলাদেশের তাপদাহ নয় বিশ্ব রাজনীতিতে এই এপ্রিলই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তবে খররৌদ্র আর তীব্র ঝড়ের মাস হলেও এই এপ্রিল আমাদেও বৈশাখি/বৈসাবি/বিজু উৎসবের মাস।
অভিবাসী জীবনের নানাপ্রান্তের সংগ্রাম নিউইয়র্ক শহরের টাইমস স্কয়ারের বৈশাখি আয়োজনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও আমরা স্বপ্ন সন্ধানী। প্রতিবছরের মতো অতি সহজ-সরল, প্রশান্ত কিন্তু উদ্দীপনাময় আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে এবারও। এখন আমরা অবিচলিত, আমাদের চিত্ত অবিক্ষিপ্ত এবং আমাদের চেষ্টা অব্যর্থ। হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছে আয়োজক কর্মীরা, বৈশাখী মেলায় নাগরদোলা, পুতুলনাচের উৎসবে শিশুদের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। প্রতিবছর যেসব থিম অনুসারে দেশে মঙ্গলশোভা যাত্রা হয় তারই অনুসরণে এবার সাড়ম্বরে হচ্ছে আয়োজন। রমনার বটমূলের প্রত্যুষের ছায়ায় আয়োজিত ছায়ানটের অনুষ্ঠান বারো হাজার মাইল দূরের শহরে অনুপ্রেরণায় সমুজ্জ্বল। এ সময় দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নতুন বছরকে বরণ করার জন্য তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানও চলছে। ‘পাচন’, ‘হালখাতা’ আর ‘পুণ্যাহে’র মতো নানাবিধ ব্রত ও বিধি পালনের সকল প্রথা এবার ১৪৩২ বঙ্গাব্দেও পালিত হচ্ছে।
নববর্ষের সকল আনন্দ, উৎসব ও অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা স্মরণ করেও আমরা আজ বলতে হয়, প্রবাসী বাঙালি আজ নানা সংকটে আক্রান্ত। তাদের কাছে এখন বেঁচে থাকা, ভালো থাকার গৌরব অত্যন্ত বেশি। নিকট আত্মীয় হোক, দূরের বন্ধু হোক, দিনে হোক, দিনের অবসানে হোক, আমরা এখন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই।
বাণিজ্যপুঁজি ও শিল্পপুঁজির দাপটে আফ্রিকা আর দক্ষিণ-আমেরিকার প্রত্যন্ত দরিদ্র অঞ্চলেও আধুনিকতার নামে মৃত্তিকাসংলগ্ন সভ্যতার তিরোধান ঘটেছে। বিচিত্র কর্মের পিছনে মানুষের ছুটে চলার বিপরীতে রয়েছে নির্জন প্রকৃতির স্তব্ধতা। তার রূপ অক্লিষ্ট অক্লান্ত, তার সাজগোজ বিস্তীর্ণ নীলাকাশ থেকে অরণ্যের সবুজে প্রসারিত। প্রকৃতি নিজেকে চিরকাল প্রকাশমান রেখেছে, মানুষের মতো ঊর্ধ্বশ্বাস কর্মের বেগে নিজেকে অস্পষ্ট করে তোলেনি। মানুষের কর্মের চতুর্দিকে অবকাশ ও চাঞ্চল্যকে ধ্রুবশান্তির দ্বারা মথিত করে সে চিরনবীনের বার্তাবাহক। এই একুশ শতকেও গ্রামীণ জীবনের প্রাধান্যের মধ্যে প্রবাসী বাঙালি হিসেবে রাতদিনের কর্মযজ্ঞে ইউরোপ-আমেরিকার মতো নববর্ষে ব্যস্ত থাকার কথা নয়। তবু এখনো প্রকৃতির উদার শান্তি, বিশাল স্তব্ধতার মধ্যে আমরা পরিভ্রমণ করতে পছন্দ করি। এজন্যই বৈশাখের তপ্ত আকাশ, তার শুষ্ক ধূসর প্রান্তরের নীরব মধ্যাহ্ন, নিঃশব্দ রাত্রি অথবা ঝড়ো হাওয়ার আলিঙ্গনের স্মৃতি আমাদের জীবন মুখরিত করে।
দেশে দেশে অন্যায়-অবিচারের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সাহস নিয়ে বলছি- পুরাতন বর্ষের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করো পুরাতন সব অপরাধ। আমরা এখন নতুন বছরে বেঁচে থাকার জন্য নতুন সংকল্প অন্তরে লালন করছি। বিস্তীর্ণ এ বিশ্বভূমি, তার তো কোনো সীমা নেই। কত দেশ আছে, কত বৈচিত্র্যময় মানুষের সংস্কৃতি। পরিচিত-অপরিচিত মানুষের সঙ্গে নববর্ষে প্রীতির বন্ধনে আমরা সংযুক্ত হই।
১৪৩১ বঙ্গাব্দের চৈত্রের শেষ দিনটি বিদায় নিয়েছে, এসেছে পহেলা বৈশাখ। এজন্য- ‘উড়ে যাক, দূরে যাক বিবর্ণ বিশীর্ণ জীর্ণ পাতা/বিপুল নিঃশ্বাসে।’
বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সকল কৃতিত্ব অভিবাসী বাঙালিদের। কারণ তাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি প্রেমই বিশ্ব দরবারে অভিষিক্ত করেছে নববর্ষকে। উৎসব উপলক্ষে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্রকাশিত ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ স্মারকগ্রন্থে’র প্রকাশনা বিশ্ববাঙালিকে একটি সুতোয় বেঁধেছে। পরিশ্রমলব্ধ লেখাগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রাণের অফুরন্ত আবেগে নিজস্ব কথনভঙ্গিতে নববর্ষের তাৎপর্যকে তুলে ধরেছেন লেখকরা। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জনে নেপথ্যের কারিগর এবং টাইমস স্কয়ারে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল নেতৃত্বে থাকা এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর সভাপতি বিশ্বজিত সাহার দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে নিবিড় পরিচিতি ও মিথষ্ক্রিয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি বাংলা নববর্ষ উদযাপন সফল করার ক্ষেত্রে প্রাবাসী বাঙালিদের আস্থা অর্জন করেছেন।