
যেন এক লাশের শহর
মিশকাত উজ্জ্বল
ক্রমশই বিপরীতমুখী ধাবিত সময়ের ঘোড়া
ধরিত্রীময় প্রবহমান বৈরী বাতাস, বিরুদ্ধ স্লোগান।
দুর্বলের উপর সবলের পাশবিক নির্যাতনের
আদিম সংস্করণ, বিপন্ন মানবতা...
তবে কি সভ্যতার পৃষ্ঠা উল্টে দিয়ে
পৃথিবী ফিরে যাচ্ছে আবারÑ
সেই অন্ধকার গুহামানবের প্রাগৈতিহাসিক যুগে?
নইলে কেন প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই
দেখব রক্তের হলিখেলা?
নিষ্পাপ শিশুর ভয়ার্ত, পলায়নপর, বীভৎস
রক্তাক্ত ভূলুণ্ঠিত দেহ; যেন এক লাশের শহর গাজা!
মুহুর্মুহু বুলেট, মারণাস্ত্রের শব্দ আর মৃত
স্বজনের শোকে আবালবৃদ্ধবনিতার ক্রন্দনরোলে
প্রকম্পিত গাজার অলিগলি, অন্তরীক্ষ
প্রান্তরজুড়ে হাহাকার!
এত কান্না, এত রক্ত, এত লাশ...
তবু নারকীয় ধ্বংসলীলায় উন্মত্ত, উল্লসিত
নরপিশাচের উল্লম্ফন নৃত্য!
কোথায় তবে সন্ত্রাসবাদ আর গণতন্ত্রের
ফেরি করে ফেরা সেই বিশ্বমোড়ল,
মেকী মানবতার ধ্বজাধারী জাতিসঙ্ঘ,
মুখে মানবতার খৈ ফুটানো বিশ্ব-মানবাধিকার সংগঠন?
নাকি নৃশংসতম এ নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে
তোদেরও আছে ইন্ধন?
যেসব শিশুর মুখে এখনো ফুটেনি বুলি
ঘাতকের তেড়ে আসা বুলেট, মিসাইল,
রকেট লাঞ্চারের শব্দ শুনেও
যারা ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে শেখেনি
এখনো জানে না বুলেট কীÑ অস্ত্র কীÑ যুদ্ধ কাকে বলে!
কিসের শত্রুতা হে আজরাইল, তোদের ওদের সাথে?
রক্তাক্ত ফিলিস্তিন এবং
এক নারীর কান্না
মান্নান নূর
মার চোখে অথৈ জল, জলে ভেসে যায়Ñ
‘লা-তাহযান ইন্নাল্লাহা মাআনা’
আর কাকে হারালে আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন?
ছিন্নভিন্ন শিশু উঠোনের কোণে
আকাশকে তাচ্ছিল্য করে চেয়ে আছে
মা’র উদাস চোখ থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে
‘ফা-ইন্না মাআল উসরি ইউসরা’
ঝাপসা দৃষ্টিতে পিতার খণ্ডিত লাশ দেখে
হৃদয় বিদীর্ণ চিৎকারে গেয়ে ওঠে
‘ইন্না মাআল উসরি ইউসরা’ কিংবা
‘আলা ইন্না নাসরাল্লাহি ক্বারীব’
আর ক’টা লাশ উৎসর্গিত হলে পরে আমরা মুক্তি পাবো?
আঁচলের একপ্রান্তে ক্ষত যোনির যন্ত্রণা নিয়ে মেয়ে
আঁচলদোলায় নেচে উঠে গায়-
‘ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন’
থরথর কাঁপা হাত-ঠোঁটের দু’প্রান্তে শুকনো রুগ্ন ক’টি শব্দ
সম্মুখের দাঁত ভেদ করে মায়ের গভীর কণ্ঠনালী থেকে
গড়গড় বের হয়ে আসে-
‘আস্তাইনু বিস-সবরে ওয়াসসলাত, ইন্নাল্লাহা মাআস সবিরিন’
আর কত কোটি মাইল বিলম্বিত হলে
স্বামীর লটকে থাকা লাশ ভেদ করে
স্বাধীনতা এসে বলবে-
চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন
আমরা বিজয়ী হয়েছি।