
(পূর্ব প্রকাশের পর)
সকলের কাছেই ফ্লাইটের ব্যাপারটা চেপে গিয়েছিল। লাগেজটাও গোপনে গোপনে গুছিয়ে ফেলেছিল। বিয়ের পরেই আফতাব বুঝেছিল,সে সাপের গর্তে পা ঢুকিয়ে দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে সাপটা ছোবল হানতে পারে। ওর বোন আমেরিকায় থাকে-সম্ভবত এটাই ওকে রাতারাতি আফতাবকে বিয়ে করার ব্যাপারে প্রলুদ্ধ করে থাকতে পারে।
মাখনের ভেতর লুকানো ছুরি চালানোর মতোই ঘটনাটি ঘটলো। বিমানে পঁয়ত্রিশ হাজার ফিট ওপরে ওঠার পর আফতাব নিশ্চিত হলো-তার ফাঁড়া কেটে গেছে। আমেরিকায় গিয়েই ওর প্রথম কাজ হবে মিনাকে একটা ডিভোর্স লেটার পাঠানো। যদিও সে এটাকে সহজ ভাবে ছেড়ে দেবেনা।এমবেসিতে গিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেবে-সে তার বিবাহিত স্ত্রী। তবে সুখের কথা হচ্ছে,আফতাব গ্রীন কার্ড ধারী নয়-এসেছে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে। হাজবেন্ডকে ফলো করার জন্যে এমবেসি থেকে স্ত্রীকেও ট্যুরিস্ট ভিসা দেবে-ওরা কি এতোটাই উদার আর মানবিক!
তারপর আফতাব অনেক কাল থেকে গিয়েছিল আমেরিকা। ওর এক্সও আরও তিন তিনটি বিয়ে করে বর্তমানে শুনেছে ইউরোপের কোন একটি দেশে আছে। আমেরিকায় থাকবে না বলেই আফতাব আর গ্রীন কার্ডের চেষ্টা করেনি।
এক বুক আশা নিয়ে আফতাব দেশে ফিরে এসেছিল। মীনা কুমারীর কারণেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল আফতাব। ফিরে এসে আর সে সেই দেশ আর পেলোনা। তাই তার না ফেরার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ স্বস্তি ফিরে পেয়েছে মনে ও প্রানে। ফেলে যাওয়া সেই জীবন আর ফিরে পাবেনা আফতাব। কাল থেকে এই পৃথিবীতে আফতাব বলে একজন ব্যর্থ মানুষের আর অস্তিত্ব থাকবেনা। তারপর দেশের কি হলো-পৃথিবীর কি হলো-এ নিয়ে ওর আর মাথা ঘামাবার কিছু থাকবেনা। তার প্রস্তুতি হিসেবে ওর স্ত্রীর অগোচরে একটা কালো বল পেন আর ব্যাঙ্কের চেক বইটা পকেটে পুরে নেয়। জিন্সের একটা প্যান্ট আর গায়ে চাপায় হাওয়াই সার্ট। খুবই নরম তুলতুলে ইতালীয় চামড়ার একটা পাম শো পড়ে নেয়। ফাঁসি কাষ্টে ঝোলার আগে যেমন ফাঁসির আসামীদের খাওয়ার রুচি থাকেনা। আফতাবের অবস্থাও তাই হলো। ওর চোখে মুখে বেদনার নীল মেঘের হাওয়া বারবার ঝাপটা দিচ্ছে। অনঢ় আফতাব দু’হাত দিয়ে তা ঠেলে দিচ্ছে। ওর কোন সন্তান সন্ততি নেই। স্ত্রীও বেশ ইয়াং। আফতাবকে পাগলের মতো ভালবাসে-কিন্তু জীবনের হতাশা এমনই যে তাতে শরতের কাশ ফুলের মতো আশা জাগায় না। কুরে কুরে মরার চেয়ে একবারে চলে যাওয়াই তো ভাল। যদিও সে এই মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেনা। কিন্তু ওর অযুত সম্ভাবনাকে ওর কাছের লোকেরাই হিংসের বশবর্তী হয়ে আটকে দিয়েছে। আবার ঘুরে দাঁড়াবার জন্যে যে সময়ের প্রয়োজন-সেই সময় ওর হাতে নেই। তার উপর ও খুবই অসুস্থ। স্ত্রী রান্না ঘরে ছিল। সেই ফাঁকে আফতাব বেরিয়ে পড়ে। ও দরোজায় এসে দাঁড়ায় তখন আফতাব অনেকটা দূর চলে এসেছে।
ব্যাঙ্কে সর্ব সাকুল্যে ছিল পনোরো হাজার টাকা। এক হাজার টাকা রেখে বাকীটা তুলে ফেলে। এক প্যাকেট দামী সিগ্রেট কেনে। তাতে ফাও পায় একটা লাইটার। একটা সিএনজি ধরে বারিধারার ও দিকটায় একটা পাঁচ তারকা হোটেলে যেতে বলে ড্রাইভারকে। লবিতে ডাক্তারদের মেলা বসেছে। দু’দিন ব্যাপী ওয়ার্ল্ড সাইক্রিয়াটিস্ট এসোসিয়েশনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। রুম পাওয়া যাবে কি না তাতে সন্দেহ আছে। সবই প্রায় লালমুখো ডাক্তার। হংস মাঝে বক যথার মতোই কিছু কৃষ্ণ বর্ণের লোকের উপস্থিতি ওর চোখে পড়ে। আফতবের সন্দেহ হয়-আজ এখানে কোন রুম খালি পাবে কিনা! হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, সে তো রুম পাওয়ার জন্যে এই ইভেন্টটাকে কাজে লাগাতে পারে। তরুণ বুদ্ধিদীপ্ত একজন কাজ করছিল রিসিপসনিস্ট হিসেবে পাশে একজন সুন্দরী রিসিপসনিস্টও ছিল। কপাল ভাল থাকলে এ রকম মেয়েরা বেশ সহযোগিতা করে আর যদি হয় বদ নসীব তাহ’লে তাদের দিয়ে কোনভাবেই না কে হাঁ করানো যায় না। সুন্দরীদের ইগো মারাত্নক। আফতাবের এ রকম অনেক অভিজ্ঞতা আছে। মেয়েটিই সাহায্যের জন্যে এগিয়ে এলো-আফতাব কোন ঝুঁকি না নিয়ে ছেলেটার কাছেই গেল। ছেলেটি তাকে চিনে ফেললো। বললো, আপনাকে তো মাঝেমধ্যে টক শো-তে দেখি। আপনি তো পত্রিকাতেও লেখালেখি করেন। তা-কোন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড? আফতাব বললো, আপাততঃ ফ্রি ল্যান্সিং করছি। ছেলেটিই বলে, তা সাইক্রাটিস্টদের এই সম্মেলন কভার করতে এসেছেন নাকি? ছেলেটি একটু প্রগলভ। একাই কথা বলে চলেছে। আপনার কি রুমের দরকার পড়বে। আফতাব খুশী হয়ে বলে তাহ’লে তো খুবই ভাল হয়। ছেলেটি কমপিউটারে চেক করে বললো, ইউ আর ভেরি লাকি জাস্ট একটা রুমই ছিল। আমার ক্যাপাসিটিতে আপনাকে ফিফটি পারসেন্ট ডিসকাউন্ট দিয়ে দিচ্ছ্।ি আফতাব আমতা আমতা করে বলে,না না ডিসকাউন্ট লাগবেনা। ছেলেটি দৃঢ়তার সাথে বলে, কেন লাগবেনা স্যার-এতো একজন সেলিব্রিটি হিসেবে আপনার প্রাপ্য। ছেলেটি এবারে আফতাবের দিকে তাকিয়ে বলে, ওয়ান নাইটের জন্যে না টু নাইটস? আফতাব বলে,ওয়ান নাইট ইজ ফাইন। আফতাব রসিকতার ছলে বলে, সাইক্রিয়াটিস্টদের সাথে দু’রাত কাটালে সুস্থ অবস্থায় কি বাড়ি ফিরতে পারবো? ছেলেটি বলে, তা সুন্দর বলেছেন তো! তা পেমেন্ট করবেন কিসে? ক্যাশ না ক্রেডিট কার্ডে? ক্রেডিট কার্ডে করলে আরও দশ পাসেন্ট ডিসকাউন্ট। আফতাব কথা বাড়ায় না। পেমেন্ট করে পা বাড়াতে যাচ্ছে এমন সময় ছেলেটি আবার বলে, এই তথ্যটি আপনার বেশ কাজে লাগবে। এই ইভেন্টটা কিন্তু অর্গানাইজ করেছে আমাদেরই একজন বাঙ্গালী লেডি সাইক্রিয়াটিস্ট। ডাঃ নীলুফার জাহান। আফতাব অবাক হয়। বলে, তিনি তো লন্ডনে ছিলেন। ছেলেটি কৌতুহলী হয়ে বলে, চেনেন নাকি? আফতাব বলে, সে তো অনেক কাল আগের কথা। আফতাব আর কথা বাড়ায় না। রুমের চাবি নিয়ে চলে যায়। সাথে কোন মোবাইল নেই। তাই কারও সঙ্গে কোন যোগাযোগও হবেনা। বেয়ারের তেষ্টা পেয়েছে। বারে গিয়ে বিয়ারের অর্ডার দেয়। বিয়ার পানের পর মুখ থেকে মনে হলো, ওর বিষন্নতার ভাবটা কেটে গেছে। কিন্তু খুব ক্লান্ত লাগছিল আফতাবের। তাই আপাততঃ রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বেশ সুন্দর পরিপাটি রুম। জানালা দিয়ে রাস্তা চোখে পড়লো। আশ্চর্য রাস্তায় কোন যানজট নেই। দূরে এক চিলতে আকাশ। নীলের মাঝে মাঝে সাদা মেঘের ভেলা। হঠাৎ আফতাবের মনে হয়-এটা কি শরৎ কাল! হবেও বা! গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ-হেমন্ত, হোয়াটএভার! এই তো-মাঝ রাতের পরেই তো..সব পাখি ফিরে যাবে ঘরে..সব ঋতুই করবে আয়োজন এই পৃথিবীর মঞ্চে..ফুলে ফলে নতুন কচি পাতায় বসন্তে পাখিরা গাইবে গান..সে গান তো আর আফতাবের শোনা হবেনা কোনদিন! এটাই ছিল ওর নিয়তি। (চলবে...)
ওর জীবনের শুরুটা ছিল বেশ বর্ণময়-এই মীনা কুমারী তাতে এসে সব ভন্ডুল করে দিল। ওর খপ্পর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে ছাড়তে হলো দেশ আর তাতেই ঘটলো ছন্দ পতন। সব কিছুই হয়ে গেল ওলট পালট। এই সুন্দর প্রানবন্ত পৃথিবীতে শুধু তারই ঠাঁই হলো না। নাভির থেকে একটা দীর্ঘশ^াস উঠে তা মাঝ পথে আটকে গেল। বিয়ার পানের পর সিগ্রেট বড়ই আরাম দায়ক। সিগ্রেট ধরালো-কিন্তু সেই সাধটা পেলনা। এসট্রেতে সিগ্রেটটা গুঁজে দিয়ে ও ভাবলো আরে মর্টিনই তো কেনা হয়নি।
ও মর্টিন কেন কিনছে-দোকানীর যেন এ রকম কোন সন্দেহ না হয় এ রকম বোকা সোকা একজন দোকানী পেয়ে গেল। হাতে না নিয়ে মর্টিন টা পিঠের দিকে গেঞ্জির ভাজে রেখে দিল।
হোটেলে ফিরে এসে আফতাব ভাবে সুইসাইডাল নোটটা লিখতে শুরু করবে কিনা! ভাবে নোটের কথা তো হবে খবুই সংক্ষিপ্ত। ঘটনাটা ঘটাবে ও মাঝ রাত্তিরের পর। এরমধ্যে হোটেলের হাউজ কিপিং-এর লোক যদি এসে পড়ে..মর্টিন আর নোট যদি দেখে ফেলে তহ’লে তো কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। আত্নহত্যার বিষয়টি ধরা পড়ে গেলে সেটা হবে পরিবারের জন্যে খুবই লজ্জাজনক। বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আফতাব ঘুমিয়ে যায়।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতে পায় ন’টা বেজে গেছে। জানালা দিয়ে দেখতে পায় নগরী আলোতে ভাসছে। অনেক দালান কোঠা। ধীরে ধীরে নগরী আধুনিক হয়ে ওঠেছে। একটা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে ভাবে এটা এখন তিলোত্তমা নগরী হলেও এখানে এখন আর তার হৃদয় বাঁধা থ্কবে না। হঠাৎ আফতাবের মনে হয়, সে কেন কাল রাতে এই আত্নহননের সিদ্ধান্ত নিল। ওর হৃদয়ে যেন একটু আলো জ¦লে ওঠে। বিষয়টি ও ছাড়া তো আর কেউ জানেনা। আবার কি চেষ্টা করে দেখতে পারেনা-ও কি তার ভাগ্য ফেরাতে পারে কিনা! শুরুতে কি কষ্টের জীবন ছিল ওর-সেই কষ্টটা যখন জয় করতে পেরেছিল-এখন কেন ওর মনোবল ভেঙ্গে গেল! তাছাড়া ওর বর্তমান স্ত্রী ওকে মনপ্রান দিয়ে ভালবাসে-ওর একার আয়ে সংসার চলছে না-তারপরেও বেচারী আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ও চলে গেলে সে খুব কষ্ট পাবে। এই শোক কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে কি সম্ভব হবে? হয়তো নয়। আমেরিকা থেকে ঢাকায় নেমেই এক বন্ধুর বাড়িতে এক পার্টি হচ্ছিল-সেখানেই আলাপ হয় ওর বর্তমান স্ত্রী অনামিকার সঙ্গে। ভাললাগা ভালবাসা তারপরে গিয়ে গড়ায় পরিণয়ে। অনামিকা ওকে সাহস জুগিয়েছে,প্রেরণা জুগিয়েছে তার বুকটা এভাবে ভেঙ্গে দেয়ার কি অধিকার আছে তার! সে তার সিদ্ধন্তে অটল থাকতে পারছেনা। একটু একটু করে সংশয় দেখা দিচ্ছে। গৌতম বুদ্ধু বলেছেন, আত্নহত্যা মহা পাপ। আফতাব আপন মনেই হেসে ওঠে। সে এখন পাপপূণ্যের অনেক উর্দ্ধে। সে একজন পুরুষ মানুষ-সে বরং এখন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেই বরং কাপুরুষ হয়ে যাবে। গুণী লোকেরা অবশ্য বলে, আত্নহত্যা কাপুরুষিত কাজ। আফতাবের মাথায় ব্যথাটা আবার চারা দিয়ে ওঠতে শুরু করেছে। সে আবার বারে গিয়ে বসে। বিয়ারটা পান করার পর একটু ধাতস্থ হলো। নিজের মনেই হিন্দী সিনেমার সংলাপ আওড়ায়-সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছি তখন চলেই যাব। কেউ আমাকে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা।
এলিভেটরে ওঠার আগ মুহূর্তে একটা নারী কন্ঠ শুনতে পেল। ওর নাম ধরে ডাকছে। ও ভয় পেয়ে পা চালায়-কেউ নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছে। এই শালার টক শোতে গিয়েই সব ঝামেলা হয়েছে। এখন শান্তিমতো মরতেও পারবোনা। মহিলাটা এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। এক ঝটকায় চিনতে পারে-নীলুফার জাহান। নীলুফার অবাক হয়ে বলে, আমি কিন্তু আপনাকে সেই দুপুরে দেখেই চিনতে পেরেছি। বিকেলে দেখলাম বেরিয়ে গেলেন। আমি তো লবিতেই আছি আপনার গতি বিধি লক্ষ্য করছি। আপনি বেশ ক’বার আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। আপনাকে একবার লন্ডনে আসতেও বলেছিলাম। পরে দেশে এসে শুনলাম,আপনি আমেরিকায় চলে গিয়েছেন। নীলুফারের কথা শুনতে আফতাবের ভাল লাগছেনা। মাতালের ভান করে আফতাব বলে, খুব ভাল লাগলো, আপনার সঙ্গে দেখা হলো। নীলুফার অবাক হয়। বলে, একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে আমার বেশ নাম ডাক হয়েছে। আপনি আমার পুরণো বন্ধু-আপনার সঙ্গে এসব নিয়ে শেয়ার করবো না? কি বলেন, আপনি ছিলেন একজন প্রমিজিং ইয়ং জার্নালিস্ট অথচ আপনাকে এখন কেউ চেনেনা। আমি তো এখানে ফিরে এসেছি তা বছর দুয়েক হলো-আপনাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছে,কি করছেন,কেমন আছেন বা আপনার কোন সাহায্যে আমি আসতে পারি কিনা-এসব আমার মনে আছে। কিন্তু কোথায় পাবো-আপনাকে? আই এ্যাম সিঙ্গল-স্টিল ইজ লাভ উইথ ইউ..আফতাব ভেতরে ভেতরে ভাঙতে শুরু করলেও পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে। বলে, দেখুন, আমি একটা কাজে ভীষণ ব্যস্ত..আপনি তো ঢাকায়ই আছেন। নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে। নীলুফার কৌতুহলী ভঙ্গিতে বলে, কি কাজে ব্যস্ত আছেন আপনি-না তুমি করেই বলছি। আমরা তো পরস্পরকে তুমি বলেই সম্বোধন করতাম। আফতাব কিছুটা অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে, বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত। আর তাছাড়া আপনার আর কোন কিছুই আমার মনের ভেতর নেই। আর আমি সিঙ্গলও নই। আমার স্ত্রী আছে। তাকে ছেড়ে তো আপনার গলায় ঝুলে পড়তে পারিনা। আফতাবের ইঙ্গিতটা খুবই কদর্য। তারপরেও নীলুফার রাগেনা বলে, তুমি রুমে যাচ্ছো? আমিও যাবো। আফতাব এবারে রেগে যায়। বলে, আপনি কিন্তু সত্যিই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। নীলুফার নিস্পৃহ কন্ঠে বলে, একটুও না। আমি মানুষের মনের কারবারী। ইউর বিহেভিয়ার ইজ নট নরমাল। আমি রিসিপশনে খবর নিয়েছি। তুমি সেখানে বলেছো তুমি এসেছো ইভেন্ট কভার করতে-কিন্তু ওখানে তোমাকে দেখা যায়নি। নীলুফার আফতাবের হাত ধরে। বলে, তুমি কি ডিনার করেছো? আফতাব বলে, আমার ক্ষিধে নেই। নীলুফার অবাক হয়। কেন ক্ষিধে থাকবেনা কেন? নীলুফার আফতাবের হাত ধরে টানতে টানতে লবির এক কোণে গিয়ে বসে। সাপ যেমন মানুষের দু’পা পেচিয়ে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। নীলুফারও তেমনি আফতাবকে পেচিয়ে ধরেছে। ছাড়ছেনা। আফতাব শেষ চেষ্টা করে বলে, আপনিই তো অর্গানাইজার-আমাকে নিয়ে পড়েছেন কেন? আপনার তো ওখানেই থাকা উচিত। ওখানের চেয়ে এখন তোমাকেই আমার সময় দেয়াটা বেশী জরুরী। আফতাব অবাক হয়। বলে, এসব আপনি কি বলছেন? আমাকে কেন আপনি সময় দেবেন? কেন? নীলুফার অবাক বলে, তোমাকে কেন সময় দেব বা দেওয়াটা কেন আমার জন্যে জরুরী তা তুমি নিজেকেই জিগ্যেস করনা কেন! আফতাব বিরক্ত হয়। বলে, আপনার কথা কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা। এবারে নীলুফার সরাসরি আফতাবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, হোটেলে তুমি কি করতে এসেছো? আস্ক ইউর সেলফ। ইউ আর লাকি-ইউর ওয়াইফ অলসো লাকি তুমি উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে তোমাকে ধরে ফেলেছি। আফতাব নিজে কে আর সামলাতে পারেনা। ওর গা গুলিয়ে আসছে। নাড়ি ভুড়ি ছিড়ে কি যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। আফতাব ঘাড়টা এলিয়ে দেয়। নীলুফার সিকুরিটির লোকজনের সাহায্যে আফতাবকে তার রুমে নিয়ে যায়। রুমে বসিয়ে আফতাবকে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। আফতাব ঘুমিয়ে যায়। মর্টিনের কৌটাটা নীলুফার সিকিউরিটির লোকদের দিয়ে দেয়। নীলুফার সিকিউরিটির লোকদের সাবধান করে দিয়ে বলে,বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তাদের জন্যে ভাল হবেনা। তারা বলে, ঘটনাটা ঘটলে তো নিশ্চয়ই তাদের হোটেলের সুনাম ক্ষুন্ন হতো। যদিও তারা এর সাথে কোন ভাবেই জড়িত নয়।
পরের দিন সকালে আফতাবের স্ত্রীকেও নীলুফার ডেকে নিয়ে আসে হোটেলে। বলে, আমরা ডেঞ্জারাস টাইমটা ওভার কাম করেছি। ও এখন ইচ্ছে করলেও ওটা করতে পারবেনা। ইট’স ব্লকড। আর আমি তো আছিই। নীলুফার আফতাবের স্ত্রীকে বলে, বেশীরভাগ মানুষই মানবেতর জীবন যাপন করেও বেঁচে থাকার আকাংখা জাগিয়ে রাখে আবার কিছু লোক সামাণ্যতেই ভেঙ্গে পড়ে। এবং বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মানুষ যখন একা হয়ে যায়,তখন তার মাথায় আত্নহত্যার ভ ূত চেপে বসে। আফতাবের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নীলুফার বলে, তোমার অবশ্য এসব বোঝা ও জানার কথা নয়। যা হোক ওকে এখন থেকে চোখে চোখে রাখবে। প্রেরণা জোগাবে। মেয়েরা অবশ্য এ কাজটি ভাল জানে। গুড লাক ফর ইউ। এনি ওয়ে হি ইজ নট লিভিং আস। বলে আফতাবের বউয়ের কাঁধে চাপড় মারে। এবং আফতাব যদি সত্যি সত্যি ঘটনা-টা ঘটাতো তাহ’লে মিডিয়া বিশেষ কওে ইরেকট্রনিক মিডিয়া যেভাবে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তার থেকে রক্ষা নীলুফার জাহান ওকে যেভাবে রক্ষা করলো সেই কৃতজ্ঞতায় নীলুফাকে সে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। নীলুফার ওকে কাঁদতে দেয়। কিছু বলেনা।
[email protected]
[RTF bookmark start: }_GoBack[RTF bookmark end: }_GoBack