
ফ্ল্যাশ ফিকশন বা ঝলকগল্প একটি অনন্য ধারা যা মনকে দ্রুত এবং সংক্ষিপ্তভাবে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করে। এটি এমন একটি অনুশীলন যা দক্ষতার সঙ্গে সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করে। এবং এটি সৃজনশীল ধারণাগুলো সংগঠিত করার উপায়কে পুষ্টি দান করে। যদিও এটি কখনো আশানুরূপ হচ্ছে না, এমন মনে হয়, তখন এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। এটি কেবল শব্দসীমা দাবি করে না, পাশাপাশি এটি একটি গল্পের ধারণা এবং সম্ভাব্য বিচ্যুতির সীমাও দাবি করে। ঝলকগল্প প্রায়শই কল্পনার ফাঁদের মতো অনুভূত হতে পারে। ঝলকগল্প যে কোনো লেখকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন, তাই এটিকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। আবেগময় এবং বিশদ ভাষা ব্যবহার করে একটি আকর্ষণীয় প্লট হিসাবে লোভনীয় হয়, কখনো কখনো গল্প চর্চায় হয় সহজ এবং ভালো একটি মাধ্যম।
ঝলকগল্প রচনার যাত্রায় একজন সম্পূর্ণ নবীন লেখককে, এই জাতীয় আকস্মিক গল্পের সুবিধাগুলো পেতে সংগ্রাম করতে হয়। তাতে লেখকের মধ্যে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। লেখক তখন ফ্ল্যাশগল্পকে মতামত উপস্থাপনের জন্য একটি কঠোর উপায় হিসেবে বুঝে নিতে পারে। এভাবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সৃজনশীল অনুশীলনও হয়ে উঠে। এ পর্যায়ে ফ্ল্যাশ ফিকশন অনুশীলনের পাঁচটি সুবিধা কী তা পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে:
এটি লেখককে বৃত্ত থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে:
ফ্ল্যাশ ফিকশন চর্চার সবচেয়ে উপকারী দিক হলো এটি কল্পনাশক্তির বিস্তারে উৎসাহিত করে। সবচেয়ে চরম বা ক্ষুদ্রতম স্তরে, যে মানসিকতা কল্পনাকে থামিয়ে দেয় তা প্রায়শই ফ্ল্যাশ ফিকশন দ্বারা বিপরীত হয়। এর কারণ, ফ্ল্যাশ ফিকশনে ফোকাসের প্রয়োজন হয়। এর জন্য অবিশ্বাস্য ও নির্দিষ্ট একটি প্লট, চরিত্র এবং আবেগ প্রয়োজন। এখান থেকে বেছে নেওয়ার বিকল্প থাকে অফুরন্ত এবং এক্ষেত্রে সম্ভাবনার প্রাচুর্যই লেখকদের বৃত্তবন্দি থেকে মুক্তির পথ দেখায়। এ লক্ষ্যে লেখকদের জন্য এটি খুবই দরকারি। ফ্ল্যাশ ফিকশন কল্পনাকে কিক-স্টার্ট তথা বলে লাথি দিয়ে শুরু করার মতো একটি দুর্দান্ত উপায়। এভাবে সহজ, এমনকি অপরিশীলিত গল্প রচনা করা যায়, যা কোনো লেখকের কল্পনাকে পুনরায় তার কাজের ফোকাস করে বা কেন্দ্র বিন্দুতে নেয়।
এটি মজার
ফ্ল্যাশ ফিকশন বা ঝলকগল্পের একটি বড় সুবিধা হলো এটি মজাদার। এটি এমন একটি ঘরানা যা কখনো কখনো খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় না (যদিও মাঝে মাঝে এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে), যা ‘ভালো’ বা বুদ্ধিদীপ্ত এমন কিছু সৃষ্টি করার জন্য চাপ নেয়। এটি লেখকের পক্ষে ভালো হওয়ার আরেকটি কারণ, এজন্যই যে এটি নিজের দক্ষতায় আত্মবিশ্বাস এবং বোঝার বিষয়টি প্রচার করে। পড়ার মতো কিছু লেখার চাপ অনেক লেখককে তাদের সৃজনশীল ট্র্যাকে থামিয়ে দেয়, তবে ফ্ল্যাশ ফিকশন সৃজনশীলতার চাপ ভুলে যাওয়ার একটি ভালো উপায়। বরং ফ্ল্যাশ ফিকশন লেখায় অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। কারণ এটি জটিল, বা বাকপটুতাপূর্ণ শব্দ প্রয়োগে বাধ্য করে না।
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ থিম/ধারণাকে অগ্রাধিকার দিতে সহায়তা করে:
ফ্ল্যাশ ফিকশন অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হতে হবে। এটি প্রায় ১০০০ ক্ষেত্রবিশেষে ১৫০০ শব্দের একটি ছোট গল্প বা ক্লাসিক ছয়-শব্দের গল্প হোক না কেন, প্রতিটি চরিত্র, সাবপ্লট বা সেটিং বিবরণের ইনস-আউটগুলো নিয়ে আলোচনার খুব বেশি জায়গা নেই। এর সুবিধা হলো লেখককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণাটিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে। এই ধারণাটি সত্যিই লেখক অবশ্যকীয়ভাবে পাঠককে বুঝাতে চান। এর সুবিধাটি হলো, অন্য দীর্ঘ, কথাসাহিত্যের রচনাগুলো লেখার সময়, একজন লেখক সংক্ষিপ্ততায় পারদর্শী হন। সফল কথাসাহিত্যে স্বচ্ছতা অপরিহার্য এবং এটি একজন লেখককে তার গল্পের মূল থিমগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে পারদর্শী করে তোলে।
এটি ভাষাকে আরও বোধগম্য আকারে ঘনীভূত/সংকুচিত করতে সহায়তা করে:
ধারণাগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ ফিকশনের সুবিধাগুলো অনুসরণ করে, ফ্ল্যাশ ফিকশন লেখকের শব্দপুঞ্জকেও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। ফলে শব্দ চয়ন, বিরামচিহ্ন, বাক্য গঠন কাঠামো এবং ফ্ল্যাশ ফিকশনের অংশবিশেষ কীভাবে উপলব্ধি করা হয় তার জন্য ফর্মটি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এটি কোনো লেখককে বুঝতে সহায়তা করে যে, তিনি কেন অন্যের চেয়ে কিছু ঝলক শব্দ বেছে নিয়েছেন এবং তাদের মূল থিমটি প্রসারিত করার জন্য তিনি অন্য কোন ব্যাকরণগত বিষয় পছন্দ করতে পারেন। একজন লেখক সফল কথাসাহিত্যে কেবল তখনই পৌঁছান যখন তিনি সাহিত্যের মৌলিক বিল্ডিং ব্লকগুলো তথা প্লট, চরিত্র এবং থিম বুঝতে পারেন।
একবার শুরু করলে এটি সহজ
বাহ্যত মনে হতে পারে কথাসাহিত্যের বিভিন্ন ধারার মধ্যে ফ্ল্যাশ ফিকশন লেখা সবচেয়ে সহজ। কারণ ঝলকগল্পে স্বল্প সময়ে কেবল সীমিত শব্দ গণনা প্রয়োজন- তবে এ বিষয়ে আমরা যা ভাবি তার চেয়ে কঠিন। কর্মজীবনে স্বাভাবিক ভারসাম্য থাকলেও ভ্রমণ করার সময় কিংবা ক্লান্তিকর কাজ করার সময় চারপাশের বিষয় নিয়ে ছয় শব্দের একটি গল্প সৃষ্টির কথা বিবেচনায় নিতে পারি। এজন্য কাগজ, কলম বা ল্যাপটপের প্রয়োজন হয় না।
কথাসাহিত্যে জীবনের খণ্ডিত বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত ঝলক গল্প সৃষ্টি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য কেবল কল্পনা এবং স্বল্প সময়ের প্রয়োজন। ফ্ল্যাশ ফিকশনের দীর্ঘতর পদ্ধতি এবং শৈলীগুলো অনুশীলন করতে আরও সময় প্রয়োজন হতে পারে, তবে তার সময়সীমা কেবল ১৫-২০ মিনিট হওয়া উচিত। স্বল্প সময়ে ঝলকগল্প লেখার চর্চা করে লেখকগণ কথাসাহিত্যের সামগ্রিক পদ্ধতির উপকার করতে পারে; কীভাবে ঝলকগল্পের ধারণাগুলো প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং পঠনযোগ্য একটি ধারা সৃষ্টি করা যায়, তা ত্বরান্বিত করে।
ফ্ল্যাশ ফিকশনের এই পাঁচটি সুবিধার কারণেই এ জেনারটি যে কোনো লেখকের কৌশল এবং শৈলীর পরিপূরক হতে পারে। এ কারণে এটি আশাব্যঞ্জক হতে পারে যে, লেখকরা এ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করছেন বা লেখার দিকে মনোনিবেশ করতে লড়াই করছেন তারা এই উদ্বেগগুলো দূর করতে ফ্ল্যাশ ফিকশন ব্যবহার করবেন এবং শিখবেন যে, সৃজনশীলভাবে চাপের মধ্যে থেকে সেসব অর্জন করা যায় না।