
আল ফেরদৌস সম্পাদিত ছোট কগজ ‘বালুচর’ রাজনীতি ও ইতিহাসের দায়বোধে সমৃদ্ধ : সোহেল মাজহার
শিল্প-সাহিত্য, চিন্তা ও দর্শনের বিপ্রতিপ আয়োজন করে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা, অবস্থানের বিরুদ্ধে একটি সুসংহত আন্দোলন গড়ে তোলা এবং কাগজে প্রকাশ করাকে লিটলম্যাগ বা ছোটকাগজ বলে। কার্যত লিটলম্যাগ আরও বিস্তৃত সুসংহত ধারণাকে লালন করে সাহিত্যের একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যায়। এর মাধ্যমে গোষ্ঠীবদ্ধ কিংবা গোষ্ঠীর বাইরে সমমনা লেখক- চিন্তকদের নতুন বিষয়, গদ্য শৈলী- প্রকরণ ও বাকভঙ্গি ও কাঠামোর লেখা প্রাধান্য থাকে। এই সব লেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো তীব্র বাদানুবাদ, তীব্র প্রতিবাদ, শ্লেষ ও বিদ্রোহ। ছোটকাগজ প্রধানত রাষ্ট্রযন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী ও বিপরীতমুখী অভিযাত্রা। যার মধ্যে শিল্পবোধের পাশাপাশি ক্রিয়াশীল থাকে রাজনীতিবোধ, ইতিহাস চেতনা ও উচ্চ মনীষা।
রিয়াদ আল ফেরদৌস সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘বালুচর’ - এ ইতিহাস ও রাজনীতি চেতনায় সমৃৃদ্ধ একটি কাগজ। কাগজটি কবি রিঙ্কু অনিমিখ ও জ্যোতি পোদ্দারের সূত্রে সম্পাদক রিয়াদ আল ফেরদৌসের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি। বালুচরের এই সংখ্যায় প্রধানত কৃষক বিদ্রোহ, কৃষকসভার সম্মেলন ও ইতিহাসের পুনর্পাঠ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কাগজটিতে মোট ১৪টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। ১৯৪৩ সালে নালিতাবাড়ী ষষ্ঠ বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্মেলনের স্মৃতিচারণ করে আটটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধগুলো লিখেছেন আড়াইআনি বাজারের নওজোয়ান মাঠ : ইতিহাসের পুনঃপাঠ- জ্যোতি পোদ্দার, ষষ্ঠ সম্মেলন : নালিতাবাড়ী- মুহম্মদ আব্দুল্লাহ্ রসুল, প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন ১৯৪৩: নালিতাবাড়ী- কমরেড মণি সিংহ, করোটির ভেতর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষাণ সভার সম্মেলন- চিত্তরঞ্জন বকসী, নালিতাবাড়ী কৃষক সম্মেলন ও আনুষাঙ্গিক কথা- দিলীপ চক্রবর্তী, কমরেড জলধর পাল : বিস্মৃত এক ভূমিপুত্র- রিয়াদ আল ফেরদৌস ও গারো পাহাড়ের সমতলে কৃষক আন্দোলন : হালুয়াঘাটের সংগ্রামী ঐতিহ্য- মাহমুদ আব্দুল্লাহ। প্রধানত ১৯৪৩ সালে নালিতাবাড়ীতে ষষ্ঠ বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন এই সংখ্যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কৃষি ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে মোট ৪টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধগুলো হলো যাপনে নালিতাবাড়ী- বিমল বসু (স্বপন), ব্রিটিশ শাসনামলে পূর্ব বাংলার কৃষি দৃশ্য- হারুন অর রশীদ, কৃষিকর্ম ও ঐতিহ্যবাহী গারো সংস্কৃতির কিছু লক্ষণীয় কিছু দিক - বাঁধন আরেং এবং কৃষিভিত্তিক গারো সমাজের হারিয়ে যাওয়া কৃত্য- পরাগ রিছিল। সামগ্রিক কৃষক আন্দোলন- কৃষক বিদ্রোহ ও ইতিহাস নিয়ে দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধগুলো হলো - আমি সেই দিন হব শান্ত - রবি নিয়োগী ও বিদ্রোহী ময়মনসিংহ- স্বপন ধর। এসকল প্রবন্ধে ময়মনসিংহের ইতিহাস, নীল বিদ্রোহ, হাতিখেদা আন্দোলন, ফকির- সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, নানকার প্রথাবিরোধী আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন, জমিদার প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলন, ভাষা আন্দোল ও মুক্তিযুদ্ধ মানুষের সংগ্রামী জীবনের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
কবি এম. কে. হক ‘আমার গাঁয়ের কথা’ শিরোনামে কবিতা লিখেছেন।
শিল্প, সাহিত্য ও মনন চিন্তার কাগজ ‘বালুচর’ বর্ষ ৩, সংখ্যা : ৪, মাঘ ১৪৩০।
সম্পাদক : রিয়াদ আল ফেরদৌস।
সম্পাদনা পর্ষদে আছেন যথাক্রমে জ্যোতি পোদ্দার ও সজল কর্মকার এবং সহযোগী সম্পাদক : মানিক কুমার সাহা।
প্রচ্ছদ : শিবশংকর সরকার।
মূল্য : আশি টাকা।
সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে যথাক্রমে বিপ্লবী কমরেড মণি সিংহ, বিপ্লবী কমরেড রবি নিয়োগী, বিপ্লবী কমরেড প্রমথ গুপ্ত, বিপ্লবী কমরেড জলধর পাল ও টঙ্ক আন্দোলনে শহিদ কমরেড শচী রায়কে।
বালুচর পাঠকপ্রিয় হোক।