ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

আত্মহত্যার আগে এবং পরের রূপালী মুহূর্ত

রেজাউল হাসান

প্রকাশিত: ২০:২২, ১৩ মার্চ ২০২৫

আত্মহত্যার আগে এবং পরের রূপালী মুহূর্ত

অবশেষে গত রাতে শুতে যাওয়ার আগে মিনিট খানিক ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আফতাব। মাথার বাঁ পাশে যে জায়গাটায় আগুনের তুবরির মতো ব্যথা ফুটতে থাকে, একটা,দুটো নয় অন্ততঃ চারটে পেন কিলার ট্যাবলেট না খেলে-ব্যথা ব্যথার মতোই থাকে। আশ্চর্য! একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পর-সেখানে সব কিছু শান্ত ও স্থির হয়ে এলো। নিউইয়র্কে থাকার সময় মাঝে মাঝে এ ব্যথার কারণে দু’তিনদিন কাজে যেতে পারেনি। সেজন্যে অনেক জায়গায় তার কাজও ছুটে গেল। শেষমেষ ক্যাব ধরলো। কাজের ব্যাপারে অনেকটা স্বাধীনতা পেল। ব্যথার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে প্রথমে টাইনানল-তারপর বিয়ার এবং তারপরে লিকারের সঙ্গে নানা রকম ড্রাগ মিশিয়ে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা হলো নেশা কেটে যেতেই আবার সেই ব্যথা। হাসপাতালে গিয়ে ক’দিন ইমার্জেন্সিতে গিয়ে লাইন দিয়েছে কোন কাজ হয়নি। নার্সের প্রথম কথা-তোমার ইনসুরেন্স আছে-আফতাব মাথা নাড়তেই-নার্স আর কথা বাড়ায়নি। ভেবেছিল ওর বন্ধু মামুনের মতো যদি একজন ভাল নার্স জুটে যায় তার কপালে! কিডনির প্রচন্ড ব্যথায় মামুন ইমার্জেন্সির দরোজার সামনে গিয়ে শুয়ে পড়ে-শুয়ে পড়ে মানে তার আর কোন সেন্স ছিলনা। যখন সেন্স এলো-অনুভব করলো-দুগ্ধ ফেননিভ শয্যায় সে শুয়ে আর তার চারপাশ ঘিরে অপ্সরীদের মতো মন ভোলানো নার্স। ফিসফিসিয়ে তারা তাদের গোটা মুখে হাসির আভা ছড়িয়ে জানতে চায়-এখন সে কেমন বোধ করছে। সে বলে খুবই ভাল বোধ করছে। একজন জানায় তোমার কিডনিতে সামান্য আঁচড় ধরেছে। তোমার ভাগ্যই বলতে হবে-সেদিনই  একজন কিডনি স্পেশালিস্ট এসেছেন জার্মানীর থেকে-এখানে একটা লেকচারে অংশ নিতে। কিডনিতে আঁচড়ের একজন রোগী পেয়ে তিনি খুব খুশি। এখন তোমাকে কি করে কিওর করা যায়-সেটা নিয়ে একটা টিম করা হয়েছে। তুমি চিকিৎসা এবং অর্থ দুই-ই পাবে। এ ক্ষেত্রে তোমার স্ট্যাটাস কিংবা ইন্সুরেন্স কোন ফ্যাক্টর নয়। টানা দু’মাস চিকিৎসা চলার পর-শ্যামলা রঙের মামুন সাহেরদেব মতোই ধবল রূপ পেল এবং গালের দু’পাশে আপেলের মতোই লাল ছোপ লেগে গেল। হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই মামুন ফ্লাই করলো বাংলাদেশে।
আফতাবও মামুনের মতো নিউইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভাগ্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে ব্যর্থ হতে হতে-একদিন নিজের কাছে প্রশ্ন করলো-কেন সে নিউইয়র্কে এভাবে পড়ে আছে! মামুন তো দেশে গিয়ে দিব্যি পত্রিকায় ঢুকে গেছে। মামুনকে কল করলেই বলে-চলে আয় দোস্-দেশে তো এখন মিডিয়ায় বুমিং! পত্রিকা আর টিভির ছড়াছড়ি-এখন তো তারা লোকই খুঁজে পাচ্ছেনা-ওখানে বসে বসে কি করছিস-লাইফ ইজ টু শর্ট মান-!
শেষে একদিন আফতাব নিউইয়র্কের পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে এলো-ব্যাক টু দ্য প্যাভলিয়নে-ঢাকায়-বাংলাদেশে। আফতাব ফিরে এসেছিল একবুক আশা নিয়ে-দিনে দিনে সেই আশার সমুদ্র নদী নয়-শুষ্ক খালে রূপান্তরিত হলো।
আফতাব প্রথমে ধাক্কা খেল মামুনের কাছ থেকে। সাতদিন সাতরাত অনবরত চেষ্টা করার পর মামুনের মোবাইল ওপেন হলো মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের জন্যে। আফতাবের আশার বেলুনে মামুন আলপিন নয় যেন একটা পেরেক ঠুকে দিল। নভোমন্ডল থেকে আফতাব মাটিতে ধরাশায়ী হলো এবং ওর সামনের পৃথিবীটা ক্রমশঃ ধূসর হয়ে এলো। চেনা জানা যাকে ও পত্রিকায় কাজ পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছে-তারা এখন গাড়ি ও ফ্লাটের মালিক। তারা ওর কাছে অকপটে স্বীকার করেছে-তার জন্যেই তারা আজ এখানে আসতে পেরেছে। আকার ইঙ্গিতে তারা ওকে এটাও বলার চেষ্টা করেছে যে,নিজের পথটা নিজেকেই করে নিতে হয়। সময় এবং পদ তো কারও জন্যে অপেক্ষা করেনা বন্ধু-বলে অনেকেই ওকে নিয়ে গেছে বারে। প্রথম প্রথম আশায় আশায় ওদের সঙ্গ দিয়েছে-পরে যখন বুঝতে পারলো-এসবই আলেয়া-তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে সবখান থেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
দেশ ছাড়ার আগে আফতাবের ছোটখাট একটা সংসারও ছিল। সকাল আটটা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত ওরা-মানে ওর এক্স তাহ্মিনা-ও বলতো, মিনা-মিনাকুমারী,একসঙ্গে ছিল। ওদের চিন্তাচেতনা-এতোটাই মিলে গেল যে-মিনাই সুন্দর করে হেসে আফতাবের বুকে মাথা রেখে বললো,দেখ, আমরা দু’জনে  এই ধরায় একত্রে বসবাস করার জন্যেই এসেছি-চলো কাজির ওখানে গিয়ে আমরা বিয়েটা সেরে ফেলি। আফতাব রগর করে বললো, এতো সকালে তো কাজি তার দোকান খুলেনি। আফতাবের কথায় তাহমিনা প্রচন্ড রেগে গেল। সে হুড়হুড় করে তাকে মগবাজারের কাজির অফিসে নিয়ে গেল।
সকালে আফতাবের দু’কামরার ছোট্ট ফ্লাটে দমকা হাওয়ার মতোই দরোজায় হামলে পড়েছিল মিনা। আর আফতাবও রাতে বেহুঁশ ছিল বলে দরোজায় ছিটকিনি লাগাতে ভুলে গিয়েছিল। পরিধেয় বস্ত্র খুলে একটা টাওয়েল জড়িয়ে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিয়েছিল। নারীর কোমল স্পর্শে যখন তার ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলো-সে তার বিছানায় শুয়ে আছে উপুড় হয়ে কিন্তু কোন সূতাও নেই তার গায়ে। মিনাই মেঝের থেকে টাওয়েলটা কুড়িয়ে আফতাবকে দিল। বললো, আমি মুখ ঘুরিয়ে রাখছি টাওয়েলটা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করুন। আদম তো ডুমুর পাতা দিয়ে ওই জায়গাটা ঢেকেছিল,মডার্ন এজ; পাতার বদলে টাওয়েল। তাহমিনা এতো কথা বলছে অথচ তার কিছু যে আফতাবের কর্ণ কুহরে ঢুকছে তা বোঝার উপায় নেই। তাহমিনা এটা বুঝতে পেরে জগ থেকে কিছুটা পানি হাতে নিয়ে ওর মুখে ছিটিয়ে দেয়। আফতাব মদির চোখে তাকায়। (চলবে... )
নিজের চোখ কে ঠিক বিশ^াস করতে পারছিলনা-সুন্দর,সুশ্রী ও আকর্ষনীয় ফিগারের অতীব স্মার্ট এক তরুণী তার সামনে দাঁড়িয়ে। তাহমিনা নিজেকে চেনানোর ভঙ্গিতে বলে, হ্যাঁ আমি। দরোজা খোলাই ছিল-সেই সুযোগে বসন্তের উথাল পাথাল হাওয়া ঢুকে পড়েছে।
কাল রাতে আফতাব বিয়ার হুইস্কি রাম সব মিলিয়ে মিশিয়ে পান করেছে। একটা প্রচন্ড হ্যাংওভার ওকে মাথাটাই তুলতে দিচ্ছিলনা। আফতাব ওভাবেই উপুর হয়ে শুয়ে থাকে। আর তাহমিনা ভাবে,সে নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে বলে লজ্জায় শয্যা ত্যাগ করতে পারছেনা। তাহমিনা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। সে টাওয়েলটা দিয়ে আফতাবের পশ্চাদদেশ  ঢেকে দেয়। এতে অবশ্য আফতাবের উঠে পড়াটা সহজ হয়। তারপরেও এইরকম একজন অপরিচিত তরুণীর কাছে সে সহজ হতে পারেনা। বাথরুমেই পাজামা সার্ট ছিল। সে দ্রুত পরে নেয়। দাঁত ব্রাশ করে কিছুটা স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। আফতাব নিজের মনেই প্রশ্ন করে-এ মেয়েটাকে কখনও কি কোথাও কি দেখেছে! নাহ্ কোনভাবেই কোন যোগসূত্র মেলাতে পারেনা। বাথরুমে আর কতোক্ষণ পালিয়ে থাকবে! ফাঁকা পেয়ে  দুর্গের ভেতরে যখন ঢুকেই গেছে-তখন তাকে তো ফেস করতেই হবে। অগত্যা বেরিয়ে পড়ে আফতাব। আফতাব মেয়েটির দিকে তাকায়। বেগুনি জমিনে নীল পাড়ের একটা সিল্কের শাড়ি পড়েছে সে। নাভির উপর থেকে বুকের চূড়ার আগ পর্যন্ত মেদহীন চড়াচড়। এই প্রথম আফতাব খুব কাছের থেকে একজন তরুণীকে দেখলো। চুল থেকে নারকেলের সুবাস আর মুখ থেকে ক্রিমের একটা হালকা ঘ্রান আর শরীর থেকে ইন্দ্রিয় নাড়া দেওয়ার মতো পারফিউম ওকে কিছুটা উন্মাতাল করে তোলে। নিজেকে সামলে নিয়ে আফতাব বলে কফি চলবে তো? তাহমিনা অবাক হয়। (চলবে...)
বলে, এখানে কফি পাবেন কোথায়? আফতাব কিচেনে যেতে যেতে বলে, কফি মেশিন আছে। তাহমিনা কৌতুহলী ভঙ্গিতে আফতাব কে ফলো করে। তার দু’হাত তার বুকের উপর তুলে সারেন্ডার করার ভঙ্গিতে বলে, টু বি অনেস্ট-আমি কখনো কফি খাইনি। আফতাবও রসিকতার ভঙ্গিতে বলে এ তো খাওয়ার জিনিষ নয়-এটা পান করার। এতোক্ষণ যেমন মেয়েটি হালকা চালে ব্যাটিং করে যাচ্ছিল এবং অনায়াসে রানও তুলে নিচ্ছিল-এই প্রথম যেন ঘুঘলি বলে ধরা খেয়ে গেল। সহসা তার মুখে কথা জোগায় না। আফতাব পরিবেশ সহজ করার ভঙ্গিতে বলে, জাস্ট জোকিং..মেয়েটিও হার স্বীকার করার ভঙ্গিতে বলে, জোকিং হলেও তা হূল ফোটানোর জন্যে যথেষ্ট। আফতাবও ঘাট মানার ভঙ্গিতে বলে, সরি..মাই সিনসিয়ার এপোলজি। মেয়েটির দিকে সরাসরি তাকিয়ে আফতাব বলে, আপনার জন্যে কফির পানি দেব। মেয়েটি বলে, নো থ্যাঙ্কস। আবার ব্যাটিং করার ভঙ্গিতে মেয়েটি বলে, তবে কফি সম্পর্কে পত্রিকায় পড়েছি, নিয়মিত কালো কফি পান করলে নাকি পুরুষরা অনেক দিন সেক্স ধরে রাখতে পারে। কোন মেয়ের মুখ থেকে সরাসরি সেক্স বিষয়ে কথা শুনে আফতাব খুব অবাক হয়। বলে, তাই নাকি! এই তথ্যটা তো আমিও জানতাম না। অবশ্য আমি সেই উদ্দেশ্যে কফি পান করিনা-রাতে একটু পান টান করি তো তাই সকালে হ্যাংওভার কাটাতে এই কালো কফি খুবই সাহায্য করে।
পেয়ালায় কফি ঢালতে আফতাব কিচেনে যায়। আর মেয়েটি ওর বুক সেলফে বই দেখতে থাকে। কফিতে চুমুক দেওয়ার পর আফতাবের মাথাটা খুলে যায়। ওর মনে পড়ে যায়, কাল যখন মেয়েটি ওর অফিসে গিয়েছিল-আফতাব তখন ছিল একটা এসাইনমেন্টে। অফিসে এসে পিয়নের কাছ থেকে জানতে পারে একটি মেয়ে তার বাসার ঠিকানা নিয়ে গেছে। আফতাব পিওনের উপর চড়াও  হয়েছিলা এই বলে যে, কেন সে তার বাসার ঠিকানা দিল! পিওনও কম যায়না। প্রত্তুত্তরে বলেছিল, আপনাগো নিয়া  সমস্যার শেষ নাই-ইকবাল সাবের এক বান্ধবী আইসা তার বাসার ঠিকানা চাইলো- আমি দিলাম না। কেন আমি তার ঠিকানা দিলামনা-এই নিয়ে উনি আমাকে এই মারে তো সেই মারে-আর আপনি বলতেছেন উল্টো কথা। এই আমি কানে ধরলাম এরপরে কোন মহিলা এলে আমি সাফ সাফ বইলা দিমু-সারেরা এখানে কাজ করে বটে তবে আমি তাহাদের চিনিনা-ঠিকানাও জানিনা। ওর কথায় সবাই হেসে ফেলে।
আফতাব তাকে পটানোর ভঙ্গিতে বলে,বুঝলানা মিয়া, মাইয়া মানুষ তো-দেবতারাই তাদের মনের দিশা পায় নাই আর আমরা তো মানুষ! যদি বাসায় গিয়ে বলে-চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি-তখন কি করবো?
পিওনও বলে, কেন বিয়া করে ফালাইবেন! বিয়ার বয়স তো আপনার হইছেই..আফতাব আর কথা বাড়ায় না।
আফতাব এবারে চায়ের পেয়ালা নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। আর মেয়েটিও আফতাবকে অবাক করে কোমরে শাড়ি গুঁজে দিয়ে ঘর গোছাতে লেগে যায়। এতে তার নাভিমন্ডল আরও দৃষ্টি গোচর হয়। আফতাব আড়ালে আবডালে নয়-ড্যাব ড্যাব করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটি বুঝতে পেরে আঁচলটা আরও একটু বেশী করে কোমরে গুঁজে দিয়ে আড়চোখে মিষ্টি করে হেসে বলে, কি দেখছেন? আফতাবও বেহায়ার মতো বলে, যা দেখাচ্ছেন-তাই দেখছি। দেয়ালে টাঙ্গানো শিল্প কর্ম দেখানোর ভঙ্গিতে মেয়েটি বলে, ইজ ইট ইমপ্রেসিভ? আফজালও কম যায়না বলে, ইউ নো ইউ আর বিউটিফুল। পুরুষকে ঘায়েল করার জন্যে যে কয়টা মোক্ষম বাণ আপনার ত ূণে থাকা দরকার-তার সব ক’টিই আছে। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি, আপনি কেন ঘর গোছাতে হাত লাগাচ্ছেন?
মেয়েটি অধিকার প্রয়োগ করার ভঙ্গিতে বলে,কেন এ ঘর আমার ঘর হলে আমি কি এভাবে আগোছালো রাখতে পারতাম? আফতাব তার ধারণা ভেঙ্গে দেয়ার ভঙ্গিতে বলে, কিন্তু ঘরটাতো আপনার নয়-কেন মিছেমিছি আপনার পরিপাটি শরীরে ধূলো বালি লাগাচ্ছেন? মেয়েটি আফতাবের দিকে সরাসরি তাকায়। মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে বলে, এক সময় হতেও তো পারে! মেয়েটির কথা বলার ধরণ দেখে আফতাব এবারে ভয় পেয়ে যায়। সে কি এই সাত সকালে আফতাবকে ফাঁদে ফেলার জন্যে এসেছে?             
আফতাব মেয়েটির কথায় খুশী হয়না-বরং কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে, সেই সময় যখন আসে-তখন না হয় দেখা যাবে’ক্ষণ। আপনি বসুন।  ব্যাটিং-এ আবার একটা গুগলীর আক্রমণে কিছুটা ধরাশায়ী হয়ে অগত্যা সোফায় বসতে উদ্যত হলে আফতাব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আপনার  হাত ডার্টি ওইতো- ওয়াশ রুম। ধুয়ে আসুন। মেয়েটি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে দরোজা লাগিয়ে দেয়। আফতাব হাফ ছেড়ে বাঁচে। ভাবে, এই হ্যাং ওভারটা মাঝে মাঝে বেশ কাজে দেয়। সাধারণতঃ একজনের মুখের উপর অনেক অপ্রিয় কথাই বলা সম্ভব হয় না। কিন্তু হ্যাং ওভার থাকলে জ্ঞানের নাড়িটা থাকে টনটনে। একটা ব্যক্তিত্বের আবরণে মুখটা থাকে ঢাকা। চট করে কেউ তাতে ঢুকতে পারেনা। আফতাব এবার একটা সিগ্রেট ধরিয়ে টেবিলের উপর পা দু’টো মেলে ধরে আয়াস করে সিগ্রেট টানতে থাকে। মেয়েটা দরোজা খুলে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়। কিন্তু আফতাব চোখ বুজে সেই ভঙ্গিতেই বসে থাকে। মেয়েটি তার তন্ময়তা ভেঙ্গে দেয়ার ভঙ্গিতে ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে বলে, বসতে পারি? আফতাব নির্বিকার কন্ঠে বলে, বসুন। মেয়েটি খুব বিনয়ী ভঙ্গিতে বলে, একটা প্রশ্ন করতে পারি? আফতাব বলে, নিশ্চয়ই। মেয়েটি বলে, আপনার ওয়াশ রুমে দেখলাম,সব কিছুই বিদেশী এবং বেশ দামী-আপনি কি সাংবাদিকতা ছাড়াও ব্যবসায় করে থাকেন? আফতাব হাসে। বলে, না। আমার মা বাবা কেউ নেই। আছে শুধু আমার একটাই বোন। সে আমার বড়। থাকে আমেরিকায়। দেশে আসছে এমন কাউকে পেলেই গাদা গাদা জিনিষ পাঠায়। একা এতো জিনিষ কি ভাবে ব্যবহার করবো! বন্ধু বান্ধবদের গিফট করে দেই। মাঝেমধ্যে কল করে বলে, একটা বিয়ে করে দেখনা-তোর বউকে এমন এমন সব প্রসাধনী পাঠাবো না শি উইল বি অ্যা ম্যাড।
মেয়েটি মিটি মিটি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে, তা বিয়ে করছেন না কেন?
এবারে সিগ্রেটটায় শেষ টান দিয়ে টুকরোটা এ্যাশ ট্রে-তে গুঁজে দিয়ে সরাসরি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আফতাব বলে, অনেক কথাই তো হলো-এবার বলুন তো আপনি কে? কেনই বা সাত সকালে আমার বাড়ি এসে হানা দিয়েছেন? আপনার মতলব টা কি? আজ আমার ডে অফ অনেক কিছু করার প্লান আছে। সামনের মাসে বোনের ওখানে যাচ্ছি। সাংবাদিকতা করি তো-এই ধরুন কুকুরের কোন কাজ নেই কিন্তু তার দৌড় ছাড়া হাঁটাও নেই। আফতাব এবারে মেয়েটির মুখ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় থাকে।
মেয়েটি কিন্তু কোমরে যেভাবে আঁচলটা গুঁজে রেখেছিল-সেভাবেই রেখেছে। ওয়াশ রুমে গিয়েও তাতে কোন ব্যত্যয় ঘটায়নি। এবার সে নিজেকে বেশ গুছিয়ে কথা বলতে শুরু করে। বলে, আমার নাম তাহমিনা রহমান-সবাই মিনা বলেই ডাকে। আফতাব তাকে থামিয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলে, আমি কিন্তু আপনাকে আমার অতি প্রিয় একজন নায়িকা-মীনা কুমারী বলে ডাকবো-আপত্তি নেই তো? মিনা হেসে বলে, আপত্তি থাকবে কেন-এটা তো বরং একটা কমপ্লিমেন্টস।
মিনা বলতে শুরু করে। আমারও আপনার মতো মা বাবা নেই। ভাইয়ের কাছে মানুষ। মাস্টার্স করে একটা কলেজে পড়াচ্ছি। আমার এক বন্ধুর সাথে স্পেস শেয়ার করে থাকি। মাঝে মধ্যে কবিতা লিখি। গদ্য লিখতে চেষ্টা করি। পারিনা। আফতাব তার কথা কেড়ে নিয়ে বলে,এখানে আপনার সঙ্গে আমার একটা মিল-আপনি গদ্য লিখতে চেষ্টা করেন পারেন না। আর আমিও আপনার মতো পদ্য লিখতে চেষ্টা করি পারিনা। তবে সম্ভবত গত সপ্তাহে আপনার একটা কবিতা আমি দৈনিক বাংলার সাহিত্যের পাতায় পড়েছি। কবিতায় কিছুটা হতাশা ছিল আবার আশার কথাও আছে-ঠিক কিনা! মিনা মাথা নাড়ে। আফতাব অনেকটা অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে, তা আমার ব্যাপারে আপনার উৎসাহের হেতুটা কি? কালকে অফিসে গিয়ে আমার ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন..
মিনা এবারে নড়েচড়ে বসে। বলে, পত্রিকার পাতায় আপনার ব্যাপারে একটা ছোট্ট খবর আমাকে আপনার ব্যাপারে কৌতুহলী করে তোলে। আফতাব বলে, ওই যে ‘একজন গল্পকার পকেটমার হিসেবে ধৃত’..
মিনা খুব অবাক হয়। আপনার ইনটুইশন তো দারুণ।
আফতাব বলে, আশলে রাতারাতি সকলের মনোযোগ কাড়ার জন্যেই ওটা আমি করেছিলাম। তাতে অবশ্য সাফল্যও জুটে গিয়েছিল। আমাকে কোথাও গিয়ে আর পরিচয় দিতে হয়নি। ওই খবরটার কথা বললেই সবাই চিনে ফেলে। সেই সুবাদে পত্রিকায় একটা কাজও জুটে গেল। তবে জেলে গিয়ে একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সন্ত্রাসী গালকাটা কামালের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তার ছিল সুন্দর গানের কন্ঠ। আমি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই তার ফাঁসি হয়ে যায়। তবে আমার বোন খুব দুঃখ পেয়েছিল।বলেছিল, তুই টাকার জন্যে মানুষের পকেট মারতে গিয়েছিলি?  তাকে বলি,এটা ছিল একটা এডভেঞ্চার-সে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।
মিনা বলে,  তবে আপনার লেখার হাতটা কিন্তু চমৎকার। আপনার গল্প ছাপা হলেই পড়ি। তবে একটা সত্যি কথা বলবো-মাইন্ড করবেন না তো? আফতাব তাকে অভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে, মাইন্ড থাকলে না করবো! মিনা হাসে। বলে, আপনার গল্পে কোন রোমান্স থাকেনা কেন? আফতাব অকপটে বলে,রোমান্স থাকলে না তা কলমের ঢগায় শেফালির মতো স্নিগ্ধ ঘ্রাণ ছড়াবে। মিনা কিছুটা ডেসপারেট ভঙ্গিতে বলে, ইন্সটান্ট আই ফল লাভ উইথ ইউ..আফতাব নির্মোহ ভঙ্গিতে বলে, বাট আই এ্যাম নট..মিনা অধীর কন্ঠে বলে, হোয়াই নট। আফতাব মিনাকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে, দ্রুত প্রেমে পড়লে তা কখনো মধুরেণ সমাপয়েত হয়না। তা বরং চিনে মাটির বাসন ভেঙ্গে গেলে যেমন একটা আঁচর পড়ে-এ আঁচরটা লাগে হৃদয়ে যা কখনোই মুছে যায়না।
তারপর ওরা প্রেমের নানা রকম যুক্তি তক্ক দাঁড় করায়। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়, বিকেল গড়িয়ে নামে সন্ধ্যা, তারপর রাত, সারা রাত এবং সকালে গিয়ে তা রফা হয় কাজির অফিসে গিয়ে। মিনা সেদিনই এসে উঠে আফতাবের ফ্লাটে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিয়ের পরের দিন থেকেই ওদের মতের চেয়ে অমতই হয় বেশী। মিনার বড় খরচের হাত। প্রতি রাতেই চায়নিজ খাওয়ার জন্যে বায়না ধরে। এবং মিনা খুব ধুরন্ধরও বটে। সে বুঝতে পেরেছে আফতাবের ব্যয়ের একটা মোটা অংশ আসে তার বোনের কাছ থেকে। তাই সে শাড়ি গহনা কিনে আলমারী দেরাজ সব ভরে ফেলে। আফতাব তার বোনের কাছে তার এই মধুর দাম্পত্য জীবনের কাহিনী বিবৃত করে। বোন ভাইটাকে খুব ভালবাসে। বলে, এখন কি করবি? আফতাব বলে, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। বোন বলে, যতো দিন যাবে ততোই ইট উইল বি ওয়াস্ট..ওয়াইজ ডিসিসান হচ্ছে-টু লিভ হার। তুই যে আমেরিকায় আসছিস সে কি এ কথা জানে? আফতাব বলে, কথাচ্ছলে একদিন বলেছিলাম। বোন বলে, আর বলবিনা। বরং কায়দা করে বলে দে-এখন আর এখানে আসছিস না আমি ইউরোপ ট্যুরে যাচ্ছি। কথাটা ইনটেনশনালী বলবিনা। বলবি খুব ক্যাজুয়ালী। একটা আফসোসও থাকবে তোর কথা বলার ধরণে-যা তার কাছে বিশ^াসযোগ্য মনে হয়। খুব কানিং মেয়ে তো ধরে ফেলবে। পাসপোর্ট টিকেট তোদের ক্লাবের লকারে রেখে দে। যখনই আমেরিকার প্রসঙ্গ তুলবি-তারপর থেকেই ও কিন্তু তোর পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
একদিন মিনাই নিজের থেকে বলে-এই এ মাসেই না তোমার আমেরিকায় যাওয়ার কথা। আফতাব তার বোনের শেখানো পাঠ গাইতে থাকে। মিনা কিছুটা বিস্মিত হয়। এবং সেই ভঙ্গিতেই বলে, তা তোমার পাসপোর্ট কোথায়? আফতাব অবাক হয়। তুমি আমার পাসপোর্ট খুঁজছিলে কেন বলতো? মিনা পাকা অভিনেত্রীর মতোই বলে-বারে! তোমার স্ত্রী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছেনা? টিকেট পাসপোর্ট সুটেকেস এসব গুছিয়ে দিতে হবেনা! এবং আরও একটা কথা-তোমার যে ট্রিপটা ক্যানসেল হয়েছে সে কথাটা আমাকে জানালে না কেন? আমি যখন ট্রিপের ব্যাপারে জানতে চাইলাম-শুধু তখনই বললে-অ্যাই এ্যাম গেটিং সাম স্মেল ফ্রম হেয়ার..আফতাব উত্তেজিত হয়না। বলে, কি স্মেল পাচ্ছ? আফতাবের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কঠিন মুখে মিনা বলে,হোয়ের ইজ ইউর পাসপোর্ট? আফতাব একটুও ভড়কে যায়না। বলে, সন্দেহ দাম্পত্য জীবনের অন্তরায়। আমার তো মনে হয়না,আমি তোমার সঙ্গে এমন আচরণ করেছি যাতে তোমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। সামনের সপ্তাহে দেয়ার কথা। তোমাকে সঙ্গে করে নিয়েই না হয় তুলে আনবো। মিনা ঠিক ওর কথায় বিশ^াস করেনা। বলে, তোমার রশিদ কই? আফতাব হেসে হেসে বলে, এসব কাজ সাধারণতঃ আমাদের অফিসের স্টাফরাই করে থাকে। রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে না হয় নিয়ে আসবো। মিনা দৃঢ়তার সাথে বলে,ডোন্ট ফরগেট.. অবশ্যই নিয়ে আসবে। আফতাবের কপাল ভাল। সে রাতেই ছিল তার ফ্লাইট। শুধু মিনার থেকে নয়-ও সকলের কাছেই ফ্লাইটের ব্যাপারটা চেপে গিয়েছিল। লাগেজটাও গোপনে গোপনে গুছিয়ে ফেলেছিল। বিয়ের পরেই আফতাব বুঝেছিল,সে সাপের গর্তে পা ঢুকিয়ে দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে সাপটা ছোবল হানতে পারে। ওর বোন আমেরিকায় থাকে-সম্ভবত এটাই ওকে রাতারাতি আফতাবকে বিয়ে করার ব্যাপারে প্রলুদ্ধ করে থাকতে পারে।
মাখনের ভেতর লুকানো ছুরি চালানোর মতোই ঘটনাটি ঘটলো। বিমানে পঁয়ত্রিশ হাজার ফিট ওপরে ওঠার পর আফতাব নিশ্চিত হলো-তার ফাঁড়া কেটে গেছে। আমেরিকায় গিয়েই ওর প্রথম কাজ হবে মিনাকে একটা ডিভোর্স লেটার পাঠানো। যদিও সে এটাকে সহজ ভাবে ছেড়ে দেবেনা।এমবেসিতে গিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেবে-সে তার বিবাহিত স্ত্রী। তবে সুখের কথা হচ্ছে,আফতাব গ্রীন কার্ড ধারী নয়-এসেছে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে। হাজবেন্ডকে ফলো করার জন্যে এমবেসি থেকে স্ত্রীকেও ট্যুরিস্ট ভিসা দেবে-ওরা কি এতোটাই উদার আর মানবিক!
তারপর আফতাব অনেক কাল থেকে গিয়েছিল আমেরিকা। ওর এক্সও আরও তিন তিনটি বিয়ে করে বর্তমানে শুনেছে ইউরোপের কোন একটি দেশে আছে। আমেরিকায় থাকবে না বলেই আফতাব আর গ্রীন কার্ডের চেষ্টা করেনি।
এক বুক আশা নিয়ে আফতাব দেশে ফিরে এসেছিল। মীনা কুমারীর কারণেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল আফতাব। ফিরে এসে আর সে সেই দেশ আর পেলোনা। তাই তার না ফেরার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ স্বস্তি ফিরে পেয়েছে মনে ও প্রানে। ফেলে যাওয়া সেই জীবন আর ফিরে পাবেনা আফতাব। কাল থেকে এই পৃথিবীতে আফতাব বলে একজন ব্যর্থ মানুষের আর অস্তিত্ব থাকবেনা। তারপর দেশের কি হলো-পৃথিবীর কি হলো-এ নিয়ে ওর আর মাথা ঘামাবার কিছু থাকবেনা। তার প্রস্তুতি হিসেবে ওর স্ত্রীর অগোচরে একটা কালো বল পেন আর ব্যাঙ্কের চেক বইটা পকেটে পুরে নেয়। জিন্সের একটা প্যান্ট আর গায়ে চাপায় হাওয়াই সার্ট। খুবই নরম তুলতুলে ইতালীয় চামড়ার একটা পাম শো পড়ে নেয়। ফাঁসি কাষ্টে ঝোলার আগে যেমন ফাঁসির আসামীদের খাওয়ার রুচি থাকেনা। আফতাবের অবস্থাও তাই হলো। ওর চোখে মুখে বেদনার নীল মেঘের হাওয়া বারবার ঝাপটা দিচ্ছে। অনঢ় আফতাব দু’হাত দিয়ে তা ঠেলে দিচ্ছে। ওর কোন সন্তান সন্ততি নেই। স্ত্রীও বেশ ইয়াং। আফতাবকে পাগলের মতো ভালবাসে-কিন্তু জীবনের হতাশা এমনই যে তাতে শরতের কাশ ফুলের মতো আশা জাগায় না। কুরে কুরে মরার চেয়ে একবারে চলে যাওয়াই তো ভাল। যদিও সে এই মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেনা। কিন্তু ওর অযুত সম্ভাবনাকে ওর কাছের লোকেরাই হিংসের বশবর্তী হয়ে আটকে দিয়েছে। আবার ঘুরে দাঁড়াবার জন্যে যে সময়ের প্রয়োজন-সেই সময় ওর হাতে নেই। তার উপর ও খুবই অসুস্থ। স্ত্রী রান্না ঘরে ছিল। সেই ফাঁকে আফতাব বেরিয়ে পড়ে। ও দরোজায় এসে দাঁড়ায় তখন আফতাব অনেকটা দূর চলে এসেছে।
ব্যাঙ্কে সর্ব সাকুল্যে ছিল পনোরো হাজার টাকা। এক হাজার টাকা রেখে বাকীটা তুলে ফেলে। এক প্যাকেট দামী সিগ্রেট কেনে। তাতে ফাও পায় একটা লাইটার। একটা সিএনজি ধরে বারিধারার ও দিকটায় একটা পাঁচ তারকা হোটেলে যেতে বলে ড্রাইভারকে। লবিতে ডাক্তারদের মেলা বসেছে। দু’দিন ব্যাপী ওয়ার্ল্ড সাইক্রিয়াটিস্ট এসোসিয়েশনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। রুম পাওয়া যাবে কি না তাতে সন্দেহ আছে। সবই প্রায় লালমুখো ডাক্তার। হংস মাঝে বক যথার মতোই কিছু কৃষ্ণ বর্ণের লোকের উপস্থিতি ওর চোখে পড়ে। আফতবের সন্দেহ হয়-আজ এখানে কোন রুম খালি পাবে কিনা! হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, সে তো রুম পাওয়ার জন্যে এই ইভেন্টটাকে কাজে লাগাতে পারে। তরুণ বুদ্ধিদীপ্ত একজন কাজ করছিল রিসিপসনিস্ট হিসেবে পাশে একজন সুন্দরী রিসিপসনিস্টও ছিল। কপাল ভাল থাকলে এ রকম মেয়েরা বেশ সহযোগিতা করে আর যদি হয় বদ নসীব তাহ’লে তাদের দিয়ে কোনভাবেই না কে হাঁ করানো যায় না। সুন্দরীদের ইগো মারাত্নক। আফতাবের এ রকম অনেক অভিজ্ঞতা আছে। মেয়েটিই সাহায্যের জন্যে এগিয়ে এলো-আফতাব কোন ঝুঁকি না নিয়ে ছেলেটার কাছেই গেল। ছেলেটি তাকে চিনে ফেললো। বললো, আপনাকে তো মাঝেমধ্যে টক শো-তে দেখি। আপনি তো পত্রিকাতেও লেখালেখি করেন। তা-কোন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড? আফতাব বললো, আপাততঃ ফ্রি ল্যান্সিং করছি। ছেলেটিই বলে, তা সাইক্রাটিস্টদের এই সম্মেলন কভার করতে এসেছেন নাকি? ছেলেটি একটু প্রগলভ। একাই কথা বলে চলেছে। আপনার কি রুমের দরকার পড়বে। আফতাব খুশী হয়ে বলে তাহ’লে তো খুবই ভাল হয়। ছেলেটি কমপিউটারে চেক করে বললো, ইউ আর ভেরি লাকি জাস্ট একটা রুমই ছিল। আমার ক্যাপাসিটিতে আপনাকে ফিফটি পারসেন্ট ডিসকাউন্ট দিয়ে দিচ্ছ্।ি আফতাব আমতা আমতা করে বলে,না না ডিসকাউন্ট লাগবেনা। ছেলেটি দৃঢ়তার সাথে বলে, কেন লাগবেনা স্যার-এতো একজন সেলিব্রিটি হিসেবে আপনার প্রাপ্য। ছেলেটি এবারে আফতাবের দিকে তাকিয়ে বলে, ওয়ান নাইটের জন্যে না টু নাইটস? আফতাব বলে,ওয়ান নাইট ইজ ফাইন। আফতাব রসিকতার ছলে বলে, সাইক্রিয়াটিস্টদের সাথে দু’রাত কাটালে সুস্থ অবস্থায় কি বাড়ি ফিরতে পারবো? ছেলেটি বলে, তা সুন্দর বলেছেন তো! তা পেমেন্ট করবেন কিসে? ক্যাশ না ক্রেডিট কার্ডে? ক্রেডিট কার্ডে করলে আরও দশ পাসেন্ট ডিসকাউন্ট। আফতাব কথা বাড়ায় না। পেমেন্ট করে পা বাড়াতে যাচ্ছে এমন সময় ছেলেটি আবার বলে, এই তথ্যটি আপনার বেশ কাজে লাগবে। এই ইভেন্টটা কিন্তু অর্গানাইজ করেছে আমাদেরই একজন বাঙ্গালী লেডি সাইক্রিয়াটিস্ট। ডাঃ নীলুফার জাহান। আফতাব অবাক হয়। বলে, তিনি তো লন্ডনে ছিলেন। ছেলেটি কৌতুহলী হয়ে বলে, চেনেন নাকি? আফতাব বলে, সে তো অনেক কাল আগের কথা। আফতাব আর কথা বাড়ায় না। রুমের চাবি নিয়ে চলে যায়। সাথে কোন  মোবাইল নেই। তাই কারও সঙ্গে কোন যোগাযোগও হবেনা। বেয়ারের তেষ্টা পেয়েছে। বারে গিয়ে বিয়ারের অর্ডার দেয়। বিয়ার পানের পর মুখ থেকে মনে হলো, ওর বিষন্নতার ভাবটা কেটে গেছে। কিন্তু খুব ক্লান্ত লাগছিল আফতাবের। তাই আপাততঃ রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বেশ সুন্দর পরিপাটি রুম। জানালা দিয়ে রাস্তা চোখে পড়লো। আশ্চর্য রাস্তায় কোন যানজট নেই। দূরে এক চিলতে আকাশ। নীলের মাঝে মাঝে সাদা মেঘের ভেলা। হঠাৎ আফতাবের মনে হয়-এটা কি শরৎ কাল! হবেও বা! গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ-হেমন্ত, হোয়াটএভার! এই তো-মাঝ রাতের পরেই তো..সব পাখি ফিরে যাবে ঘরে..সব ঋতুই করবে আয়োজন এই পৃথিবীর মঞ্চে..ফুলে ফলে নতুন কচি পাতায় বসন্তে পাখিরা গাইবে গান..সে গান তো আর আফতাবের শোনা হবেনা কোনদিন! এটাই ছিল ওর নিয়তি। ওর জীবনের শুরুটা ছিল বেশ বর্ণময়-এই মীনা কুমারী তাতে এসে সব ভন্ডুল করে দিল। ওর খপ্পর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে ছাড়তে হলো দেশ আর তাতেই ঘটলো ছন্দ পতন। সব কিছুই হয়ে গেল ওলট পালট। এই সুন্দর প্রানবন্ত পৃথিবীতে শুধু তারই ঠাঁই হলো না। নাভির থেকে একটা দীর্ঘশ^াস উঠে তা মাঝ পথে আটকে গেল। বিয়ার পানের পর সিগ্রেট বড়ই আরাম দায়ক। সিগ্রেট ধরালো-কিন্তু সেই সাধটা পেলনা। এসট্রেতে সিগ্রেটটা গুঁজে দিয়ে ও ভাবলো আরে মর্টিনই তো কেনা হয়নি।
ও মর্টিন কেন কিনছে-দোকানীর যেন এ রকম কোন সন্দেহ না হয় এ রকম বোকা সোকা একজন দোকানী পেয়ে গেল। হাতে না নিয়ে মর্টিন টা পিঠের দিকে গেঞ্জির ভাজে রেখে দিল।
হোটেলে ফিরে এসে আফতাব ভাবে সুইসাইডাল নোটটা লিখতে শুরু করবে কিনা! ভাবে নোটের কথা তো হবে খবুই সংক্ষিপ্ত। ঘটনাটা ঘটাবে ও মাঝ রাত্তিরের পর। এরমধ্যে হোটেলের হাউজ কিপিং-এর লোক যদি এসে পড়ে..মর্টিন আর নোট যদি দেখে ফেলে তহ’লে তো কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। আত্নহত্যার বিষয়টি ধরা পড়ে গেলে সেটা হবে পরিবারের জন্যে খুবই লজ্জাজনক। বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আফতাব ঘুমিয়ে যায়।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতে পায় ন’টা বেজে গেছে। জানালা দিয়ে দেখতে পায় নগরী আলোতে ভাসছে। অনেক দালান কোঠা। ধীরে ধীরে নগরী আধুনিক হয়ে ওঠেছে। একটা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে ভাবে এটা এখন তিলোত্তমা নগরী হলেও এখানে এখন আর তার হৃদয় বাঁধা থ্কবে না। হঠাৎ আফতাবের মনে হয়, সে কেন কাল রাতে এই আত্নহননের সিদ্ধান্ত নিল। ওর হৃদয়ে যেন একটু আলো জ¦লে ওঠে। বিষয়টি ও ছাড়া তো আর কেউ জানেনা। আবার কি চেষ্টা করে দেখতে পারেনা-ও কি তার ভাগ্য ফেরাতে পারে কিনা! শুরুতে কি কষ্টের জীবন ছিল ওর-সেই কষ্টটা যখন জয় করতে পেরেছিল-এখন কেন ওর মনোবল ভেঙ্গে গেল! তাছাড়া ওর বর্তমান স্ত্রী ওকে মনপ্রান দিয়ে ভালবাসে-ওর একার আয়ে সংসার চলছে না-তারপরেও বেচারী আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ও চলে গেলে সে খুব কষ্ট পাবে। এই শোক কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে কি সম্ভব হবে? হয়তো নয়। আমেরিকা থেকে ঢাকায় নেমেই এক বন্ধুর বাড়িতে এক পার্টি হচ্ছিল-সেখানেই আলাপ হয় ওর বর্তমান স্ত্রী অনামিকার সঙ্গে। ভাললাগা ভালবাসা তারপরে গিয়ে গড়ায় পরিণয়ে। অনামিকা ওকে সাহস জুগিয়েছে,প্রেরণা জুগিয়েছে তার বুকটা এভাবে ভেঙ্গে দেয়ার কি অধিকার আছে তার! সে তার সিদ্ধন্তে অটল থাকতে পারছেনা। একটু একটু করে সংশয় দেখা দিচ্ছে। গৌতম বুদ্ধু বলেছেন, আত্নহত্যা মহা পাপ। আফতাব আপন মনেই হেসে ওঠে। সে এখন পাপপূণ্যের অনেক উর্দ্ধে। সে একজন পুরুষ মানুষ-সে বরং এখন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেই বরং কাপুরুষ হয়ে যাবে। গুণী লোকেরা অবশ্য বলে, আত্নহত্যা কাপুরুষিত কাজ। আফতাবের মাথায় ব্যথাটা আবার চারা দিয়ে ওঠতে শুরু করেছে। সে আবার বারে গিয়ে বসে। বিয়ারটা পান করার পর একটু ধাতস্থ হলো। নিজের মনেই হিন্দী সিনেমার সংলাপ আওড়ায়-সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছি তখন চলেই যাব। কেউ আমাকে আটকিয়ে রাখতে পারবেনা।
এলিভেটরে ওঠার আগ মুহূর্তে একটা নারী কন্ঠ শুনতে পেল। ওর নাম ধরে ডাকছে। ও ভয় পেয়ে পা চালায়-কেউ নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছে। এই শালার টক শোতে গিয়েই সব ঝামেলা হয়েছে। এখন শান্তিমতো মরতেও পারবোনা। মহিলাটা এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। এক ঝটকায় চিনতে পারে-নীলুফার জাহান। নীলুফার অবাক হয়ে বলে, আমি কিন্তু আপনাকে সেই দুপুরে দেখেই চিনতে পেরেছি। বিকেলে দেখলাম বেরিয়ে গেলেন। আমি তো লবিতেই আছি আপনার গতি বিধি লক্ষ্য করছি। আপনি বেশ ক’বার আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। আপনাকে একবার লন্ডনে আসতেও বলেছিলাম। পরে দেশে এসে শুনলাম,আপনি আমেরিকায় চলে গিয়েছেন। নীলুফারের কথা শুনতে আফতাবের ভাল লাগছেনা। মাতালের ভান করে আফতাব বলে, খুব ভাল লাগলো, আপনার সঙ্গে দেখা হলো। নীলুফার অবাক হয়। বলে, একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে আমার বেশ নাম ডাক হয়েছে। আপনি আমার পুরণো বন্ধু-আপনার সঙ্গে এসব নিয়ে শেয়ার করবো না? কি বলেন, আপনি ছিলেন একজন প্রমিজিং ইয়ং জার্নালিস্ট অথচ আপনাকে এখন কেউ চেনেনা। আমি তো এখানে ফিরে এসেছি তা বছর দুয়েক হলো-আপনাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছে,কি করছেন,কেমন আছেন বা আপনার কোন সাহায্যে আমি আসতে পারি কিনা-এসব আমার মনে আছে। কিন্তু কোথায় পাবো-আপনাকে? আই এ্যাম সিঙ্গল-স্টিল ইজ লাভ উইথ ইউ..আফতাব ভেতরে ভেতরে ভাঙতে শুরু করলেও পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে। বলে, দেখুন, আমি একটা কাজে ভীষণ ব্যস্ত..আপনি তো ঢাকায়ই আছেন। নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে। নীলুফার কৌতুহলী ভঙ্গিতে বলে, কি কাজে ব্যস্ত আছেন আপনি-না তুমি করেই বলছি। আমরা তো পরস্পরকে তুমি বলেই সম্বোধন করতাম। আফতাব কিছুটা অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে, বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত। আর তাছাড়া আপনার আর কোন কিছুই আমার মনের ভেতর নেই। আর আমি সিঙ্গলও নই। আমার স্ত্রী আছে। তাকে ছেড়ে তো আপনার গলায় ঝুলে পড়তে পারিনা। আফতাবের ইঙ্গিতটা খুবই কদর্য। তারপরেও নীলুফার রাগেনা বলে, তুমি রুমে যাচ্ছো? আমিও যাবো। আফতাব এবারে রেগে যায়। বলে, আপনি কিন্তু সত্যিই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। নীলুফার নিস্পৃহ কন্ঠে বলে, একটুও না। আমি মানুষের মনের কারবারী। ইউর বিহেভিয়ার ইজ নট নরমাল। আমি রিসিপশনে খবর নিয়েছি। তুমি সেখানে বলেছো তুমি এসেছো ইভেন্ট কভার করতে-কিন্তু ওখানে তোমাকে দেখা যায়নি। নীলুফার আফতাবের হাত ধরে। বলে, তুমি কি ডিনার করেছো? আফতাব বলে, আমার ক্ষিধে নেই। নীলুফার অবাক হয়। কেন ক্ষিধে থাকবেনা কেন? নীলুফার আফতাবের হাত ধরে টানতে টানতে লবির এক কোণে গিয়ে বসে। সাপ যেমন মানুষের দু’পা পেচিয়ে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। নীলুফারও তেমনি আফতাবকে পেচিয়ে ধরেছে। ছাড়ছেনা। আফতাব শেষ চেষ্টা করে বলে, আপনিই তো অর্গানাইজার-আমাকে নিয়ে পড়েছেন কেন? আপনার তো ওখানেই থাকা উচিত। ওখানের চেয়ে এখন তোমাকেই আমার সময় দেয়াটা বেশী জরুরী। আফতাব অবাক হয়। বলে, এসব আপনি কি বলছেন? আমাকে কেন আপনি সময় দেবেন? কেন? নীলুফার অবাক বলে, তোমাকে কেন সময় দেব বা দেওয়াটা কেন আমার জন্যে জরুরী তা তুমি নিজেকেই জিগ্যেস করনা কেন! আফতাব বিরক্ত হয়। বলে, আপনার কথা কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা। এবারে নীলুফার সরাসরি আফতাবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, হোটেলে তুমি কি করতে এসেছো? আস্ক ইউর সেলফ। ইউ আর লাকি-ইউর ওয়াইফ অলসো লাকি তুমি উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে তোমাকে ধরে ফেলেছি। আফতাব নিজে কে আর সামলাতে পারেনা। ওর গা গুলিয়ে আসছে। নাড়ি ভুড়ি ছিড়ে কি যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। আফতাব ঘাড়টা এলিয়ে দেয়। নীলুফার সিকুরিটির লোকজনের সাহায্যে আফতাবকে তার রুমে নিয়ে যায়। রুমে বসিয়ে আফতাবকে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। আফতাব ঘুমিয়ে যায়। মর্টিনের কৌটাটা নীলুফার সিকিউরিটির লোকদের দিয়ে দেয়। নীলুফার সিকিউরিটির লোকদের সাবধান করে দিয়ে বলে,বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তাদের জন্যে ভাল হবেনা। তারা বলে, ঘটনাটা ঘটলে তো নিশ্চয়ই তাদের হোটেলের সুনাম ক্ষুন্ন হতো। যদিও তারা এর সাথে কোন ভাবেই জড়িত নয়।
পরের দিন সকালে আফতাবের স্ত্রীকেও নীলুফার ডেকে নিয়ে আসে হোটেলে। বলে, আমরা ডেঞ্জারাস টাইমটা ওভার কাম করেছি। ও এখন ইচ্ছে করলেও ওটা করতে পারবেনা। ইট’স ব্লকড। আর আমি তো আছিই। নীলুফার আফতাবের স্ত্রীকে বলে,  বেশীরভাগ মানুষই মানবেতর জীবন যাপন করেও বেঁচে থাকার আকাংখা জাগিয়ে রাখে আবার কিছু লোক সামাণ্যতেই ভেঙ্গে পড়ে। এবং বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মানুষ যখন একা হয়ে যায়,তখন তার মাথায় আত্নহত্যার ভ ূত চেপে বসে। আফতাবের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নীলুফার বলে,  তোমার অবশ্য এসব বোঝা ও জানার কথা নয়। যা হোক ওকে এখন থেকে চোখে চোখে রাখবে। প্রেরণা জোগাবে। মেয়েরা অবশ্য এ কাজটি ভাল জানে। গুড লাক ফর ইউ। এনি ওয়ে হি ইজ নট লিভিং আস। বলে আফতাবের বউয়ের কাঁধে চাপড় মারে। এবং আফতাব যদি সত্যি সত্যি ঘটনা-টা ঘটাতো তাহ’লে মিডিয়া বিশেষ কওে ইরেকট্রনিক মিডিয়া যেভাবে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তার থেকে রক্ষা নীলুফার জাহান ওকে যেভাবে রক্ষা করলো সেই কৃতজ্ঞতায় নীলুফাকে সে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। নীলুফার ওকে কাঁদতে দেয়। কিছু বলেনা।
[email protected]
[RTF bookmark start: }_GoBack[RTF bookmark end: }_GoBack

×