
অক্ষরজ্ঞানঅলা মানুষই যে সবসময় প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবে এমনটি নাও হতে পারে। মানুষের ভেতরের পাঠশালার যদি দরজা, জানালা খোলা না থাকে তাহলে বাইরের অক্ষরজ্ঞান দিয়ে আসল মানুষ হয়ে ওঠা যায় না। আরজ আলী মাতুব্বর। তিনি একজন প্রবীণ দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং মননশীল লেখক ছিলেন। তিনি একাডেমিক শিক্ষা খুব বেশি গ্রহণ করতে পারেননি বটে কিন্তু স্বশিক্ষিত। দক্ষিণবঙ্গের মাঠে-ঘাটে, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে ফসলি জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকেও সত্যের সন্ধানে, সৃষ্টির রহস্য খুঁজতে মনের পথে হেঁটেছেন আজীবন। তাঁর প্রকৃত নাম আরজ আলী। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি ‘মাতুব্বর’ নাম ধারণ করেন। গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়ালেখা করেন। যেখানে শুধু কুরআন ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের ওপর শিক্ষা দেওয়া হতো। এখানেই কী একজন জ্ঞানপিপাসুর পৃথিবী সম্পর্কে জানা থেমে যায়? থেমে যায় শিল্প-সাহিত্য চর্চার অগাধ ইচ্ছা?
সবার ক্ষেত্রে তা হয় না। তিনি নিজেকে জানতে, জগতের মানুষদের জানতে, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন। জানার আগ্রহ তাকে ইতিহাসের বিস্ময়কর ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। তিনি একটা কিছু জানতে যারা জানে তাদের জিজ্ঞাসা করতেন। জানার প্রবল ইচ্ছে ছিল তাঁর। তিনি নিজেকে প্রশ্ন করতেন। তিনি কে? আসলে মানুষ কেন পৃথিবীতে আসে? মানুষে মানুষে এত দ্বন্দ্ব কেন? পথ ও মতে এত পার্থক্য কেন? কেন জাতিতে জাতিতে এত ভাগ? তাহলে এত জাতপাতের সৃষ্টিকর্তা কে? মাটির মানুষ তৈরি করে তাতে কে ব্যাটারি যুক্ত করে? মানুষ কেন বাঁচে? ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেই কি তার জীবনাবসান হয়? নানা প্রশ্নে তাঁকে সবসময় জড়জড়িত করতেন। পৃথিবীতে কত মনীষী এসেছেন। যুগে যুগে পৃথিবীতে মনীষীর আগমন ঘটে। কিন্তু মুক্ত-মনা হয় কয়জনা? মনের দিক থেকে যিনি দরিদ্র তিনিই তো প্রকৃত দরিদ্র। ধর্মের দোহাই দিয়ে উত্তেজিত মানুষদের শান্ত করে রাখেন অনেকে। তিনি বলেন, ‘ধর্মের আচার-প্রথারূপী আগাছা-পরগাছাগুলো দোলা দিয়েছেন অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কাররূপী বিষবৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় এবং যুক্তি যাদের কুঠারাঘাত করেছেন তার মূলে; তাঁরা সকলেই হচ্ছেন শক্তিমান পুরুষ, সুযোগ্য ব্যক্তি। তাঁদের খোঁচাটা, চিমটিটা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন শাস্ত্রারণ্যের প্রহরীগণ, হজম করে যাচ্ছেন তাঁদের চপেটাঘাতও।’ বরিশালের চরবাড়িয়ার লামছড়ির সন্তান হয়েও তিনি তাঁর যোগ্যতায় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। ১৯৮২ সালে “AROJ ALI THE INSURRECTIONIST (বিদ্রোহী আরজ আলী)’ শিরনামে নিউইয়র্কের The Icono-clast, Newyork, September সংখ্যায় তাঁকে নিয়ে প্রবন্ধ ছাপা হয়। তিনি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মনের দিক থেকে ধীরে ধীরে ধনী হতে থাকেন। জানার ইচ্ছাই তাঁকে ধনী বনে নিয়ে গেছে। শিক্ষার প্রস্তর শেষ করলেও তাঁকে নিয়ে মানুষ আজ গবেষণা করেন। তাঁকে নিয়ে ভাবেন। দর্শন ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। গ্রামে বা আশপাশে এত দর্শনের বই পাবে কোথায়? দেখা হয়ে যায় ব্রজমোহন কলেজের দর্শনের শিক্ষক কাজী গোলাম কাদিরের সঙ্গে। তিনি আরজ আলী মাতুব্বরকে চিনতে পারেন। তাঁর জ্ঞানের তৃষ্ণায় কাজী গোলাম কাদিরও তৃষ্ণিত হয়ে ওঠেন। গোলাম কাদির স্যার কলেজের পাঠাগার থেকে বই ধার দিতে থাকেন। মাতুব্বর মহাখুশি। আর ধীরে ধীরে মাতুব্বর তার মানসিক আকৃতি বাড়াতে থাকেন। নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। তাঁর মনের জানালার শার্সিতে দাঁড়ায় জ্ঞানের দেবদূত। তাঁকে অনেক বিষয় জানাতে সাহায্য করে। ধর্মজগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী দিক তাঁর লেখায় উঠে আসে। আঞ্চলিক ভূস্বামী, কৃষিকাজের আয়, আমিনি পেশার আয় দিয়ে সংসার চালিয়েও দারিদ্র্যতা দূর করতে পারেননি তিনি। তাই আর্থিক সংকটের কারণে বড় বড় ডিগ্রি নিতে পারেননি। শুধু তাঁর বেলাতেই নয়, বাংলাদেশের এমন অনেক কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক, বাউল, সাধক- ক’জন বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছেন? বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল, লালন ফকির, শাহ আবদুল করিমসহ অনেক গুণীদেরই বড় ডিগ্রি ছিল না। আসলে একাডেমিক পড়ালেখায় কী থাকে? মানব জীবনে চলার পথে কতটুকুই বা কাজে লাগে একাডেমিক শিক্ষা। যে একাডেমিক শিক্ষার সঙ্গে চাকরিজীবীদের কোনো যোগসূত্র নেই। অথচ কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিকদের কথা-ভাবনাগুলোই পাঠ্যসূচিতে লিপিবদ্ধ থাকে। আমরা তাঁদের ভাবনাগুলো খোরাক করে, পড়েই জ্ঞান অর্জন করি।
আরজ আলী মূলত বস্তুবাদী দর্শনে বিশ^াসী ছিলেন। তিনি অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন সবসময়। তাঁর রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। তিনি সম্পাদনায় আগ্রহী ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘সংকলন সম্পাদনা মানেই হলো নকলনবীশী মাত্র।’ তারপরও মাঝেমধ্যে সম্পাদনা করতে হয়। লিখতে হয় ভূমিকা। লেখালেখি করতে গিয়ে তাঁকে ফৌজদারি মামলার আসামিও হতে হয়েছে। তবুও তাঁর দুঃখ ছিল না। প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তায় ফিরে গেছেন যৌবনের প্রথম দিনে। এখানেই একজন লেখক বা দার্শনিকের সার্থকতা। তিনি ‘পুরান শাস্ত্র’পুরীর পর্দাসীমার ভেতরে অনধিকার চর্চার অপরাধে এক প্রহরীর গলা ধাক্কাও খেতে হয়েছিল। সেই ঘটনায় মনোকষ্টে ভোগেন মাতুব্বর। কলম ধরেন। তৈরি করেন ‘সত্যের-সন্ধান’ নামক পাণ্ডুলিপি। প্রকাশ হলো না। আবার নিরন্তর চেষ্টা করা হলো ১৯৭৩ সালে। কিন্তু শাস্ত্রীয় মতবাদের পরিপন্থি বলে পাণ্ডুলিপিটি বই আকারে প্রকাশ করার জন্য প্রকাশক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বইটি ব্রজমোহন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সহায়তায় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের-সন্ধান’ প্রকাশ পেলেই দেশের সুধীমহলে সমাদৃত হয়। এবং বহু পত্রিকায় প্রশংসামূলক সমালোচনা প্রচারিত হয়। বাংলাদেশ লেখক শিবির ‘সত্যের-সন্ধান’ বইটির জন্য আরজ আলীকে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করে ১৯৭৭ সালে। আরজ আলী রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ১৫টি। তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল ৪টি। বইগুলো হলো- সত্যের-সন্ধান (১৯৭৩), সৃষ্টি রহস্য (১৯৭৭), স্মরণিকা (১৯৮২) ও অনুমান (১৯৮৩)। প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও করেন তিনি।
টাকা-পয়সা, দালানকোঠা, শারীরিক যোগ্যতা দিয়ে সবসময় মানুষ মাপা যায় না। জগৎ, জীবন-চেতনা সম্বন্ধে কথা বলার অধিকার অনেকের থাকে না। এমনটাই বলেন সাধারণত জ্ঞানীরা। যারা তাঁদের চিনেন সাদরে গ্রহণ করেন। তাঁদের কর্মের মাঝে নিজেদের মেলে ধরতে চান। আজকের উত্তর আধুনিক সময়ে এসেও কী মানুষ সভ্য হতে পেরেছে? দেশে দেশে স্নায়ুযুদ্ধ, মাঠে মাঠে তর্কযুদ্ধ লেগেই আছে। ক্ষমতার লোভে কত কিছু করছে উচ্চশ্রেণির লোকেরা। নিম্নশ্রেণির লোকেরা মার খেয়েই চলছে। জীবনের গতি প্রতি পদে পদে থেমে যায় যেন। মনের দিক থেকে কতটা শিক্ষিত হতে পেরেছে মানুষ? প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘সংস্কৃতি কথা’য় বলেন, ‘সমাজ মাত্রেই সাধারণত দু’প্রকারের মানুষের বাস দেখতে পাওয়া যায়। এক প্রকার আদেশপন্থি ও আরেক প্রকার অনুপ্রেরণাপন্থি। আদেশপন্থি যারা তাদের জন্য দরকার একটা ধরা-বাঁধা পথ। অন্তরের সহজ উপলব্ধি বিসর্জন দিয়ে তারা একান্ত করে আঁকড়িয়ে ধরে সংস্কার অথবা শাস্ত্রের আদেশকে।’ আরজ আলী তাঁর অসামান্য যুক্তি এবং চিন্তা-ভাবনার সংমিশ্রণে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সত্যসন্ধানী দার্শনিকতায় তাঁর লেখনির কলম চালিয়ে গেছেন। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারক ছিলেন তিনি। ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও সাহসী চিন্তক। আবুল হুসেনের রচনাবলী থেকে জানা যায়, এ জগতে জীবনের ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ ও প্রকৃতি চরিতার্থ যেমন করে হোক করা যেতে পারে। প্রায় সমস্ত ধর্মাবলম্বী মানুষই এইরূপে ধর্মানুষ্ঠান পালন ও অন্য কাজ, দুটি পৃথক করে ফেলেছেন।
মানুষই সেরা। মানুষের জন্যই ধর্ম। ধর্মের জন্য মানুষ নয়। আরজ আলী মনোকষ্টের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছেন। থেমে থাকেননি। সমাজ থেকে অন্ধবিশ্বাস দূর করার জন্য দীর্ঘ এক অভিযান শুরু করেছিলেন। কতটুকু সফল হয়েছেন তার বিচারের ভার তিনি পাঠকের হাতে দিয়ে গেছেন। মানুষ যখন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারে তাহলে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। বিশেষ করে ধর্মব্যবসায়ীর ধর্মের বানে বধ করতে চায় জ্ঞানী-গুণীদের। ধর্মব্যবসায়ীদের বাজার এখন খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে এসেছে।
আরজ আলী মাতুব্বর বলেন, ‘মানুষের আমিত্ববোধ যত আদিম ও প্রবল তত আর কিছু নহে। আমি সুখী, আমি দুঃখী, আমি দেখিতেছি, আমি শুনিতেছি, আমি বাঁচিয়া আছি, আমি মরিব ইত্যাদি হাজার হাজার রূপে আমি আমাকে উপলব্ধি করিতেছি। মৃত্যুর পরে যখন দেহের উপাদানসমূহ পচিয়া-গলিয়া অর্থাৎ রাসায়নিক পরিবর্তনে কতগুলো মৌলিক পদার্থে রূপান্তরিত হইবে, তখন কি আমার আমিত্ব থাকিবে না?’
এই যে তাঁর চিন্তার প্রসারতা, তাঁর ভাবনা- এই ভাবনা তাঁকে নতুন এক জগতে নিয়ে যেত সবসময়। তাই তিনি একাডেমিক শিক্ষার বেশি দূর না গিয়েও তাঁর ভেতরে-বাইরে আরেক নতুন জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আরজ আলী মাতুব্বর প্রথম ও নির্মম যে অন্ধকার সূচির কাল ধরে স্থায়ী আছে এই বাংলাদেশে, তার কথাই বলেছেন তাঁর বইতে। বর্ণনা করে নয়, প্রশ্ন করে।’
তাঁর জীবন খুব সহজ ছিল না। বন্ধুর পথে হেঁটেছেন। সাধনা থেকে সরে দাঁড়াননি কখনো। সাধনার পাশাপাশি গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। একবার সাইক্লোনে কয়েক হাজার বই বিলীন হয়ে যায়। তাতেও তিনি দমে যাননি। দিন দিন তাঁর জানার আগ্রহ আরও বেড়েছে। তাঁর সম্পাদনায় মুক্ত-মন সংকলনে আবুল ফজল ‘মানবতন্ত্র’ (পৃষ্ঠা ৫২-৬৮) গ্রন্থের এক জায়গায় বলেছেন, ‘ঈশ্বরকে আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু ঈশ^রভক্ত পাদ্রিকে দেখতে পাই। তিনি এবং তাঁর অনুরূপ পেশার লোকেরা ঈশ্বরের স্বনির্বাচিত প্রতিনিধি। ঈশ্বরের বিপরীতে শয়তানকে না দাঁড় করালে চিত্রটি পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই ঈশ্বররূপী কল্পমূর্তির স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে বিপরীত কল্পমূর্তি শয়তানের আবির্ভাবও অপরিহার্য।’
আরজ আলী ‘ভিখারীর আত্মকাহিনী’ (দ্বিতীয় খণ্ড, রচনাকাল ৮ শ্রাবণ ১৩৮১-১৯ ভাদ্র ১৩৮২)-তে লিখেছেন, ‘মৎস্য শিকারের আর একটি উত্তম শ্রেণির যন্ত্র ‘ধর্মজাল’। ওটা বুনা আমি শিক্ষা করেছি। চরমোনাই নিবাসী অছিমদ্দিন হাং এর বাড়িতে গিয়ে, তাঁর জামাতা কাজেম আলী কাজী সাবের নিকট হ’তে। তিনি আমাকে ‘ধর্মজাল’ বুনিয়ে বা কোনো পুরনো জাল দেখাতে পারেননি। তবে তিনি বোনার প্রণালীসমূহ বলে দিচ্ছেন এবং তাঁর কথার ভিত্তিতে পরে আমি ধর্মজাল বুনেছিলাম।’ আরজ আলী ধর্মজালের মাধ্যমে অত্যন্ত গভীরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। মানুষরূপী মৎস্য শিকার করতে চেয়েছেন। সন্ধান করতে চেয়েছেন মৎস্যগুলোর ভেতর-বাহির। মানুষ মুখোশের আড়ালে ছদ্মবেশ ধরে সমাজে অপকর্ম করে, তার মোড়ক উন্মোচন করতে চেয়েছেন ধর্মজালের মাধ্যমে মৎস্য শিকার করে।
মাতুব্বর বারবার একটি প্রশ্নই করেছেন- আমি কে? আমরাও যদি এই প্রশ্নটি করি তাহলে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারি। দুটি রূপে একটি মানুষ গড়ে ওঠে। ভালো আর খারাপ । খারাপ-কে বধ করতে না পারলে সত্যিকার মানুষ হওয়া যায় না। এই সত্যটি মনে-প্রাণে ধারণ করেছেন মুক্তমনা মানুষ আরজ আলী মাতুব্বর। তিনি বাঙালি দার্শনিক, মুক্তচিন্তক ও সাদা মনের লেখক ছিলেন। ধরতে গেলে পুরো জীবনটাই ব্যয় করেছেন নিজেকে জানতে, লেখনির মাধ্যমে মানুষদের জানাতে। তাঁর মূল্যবান উক্তিতে বুঝা যায়- ‘বিদ্যা শিক্ষার ডিগ্রি আছে, জ্ঞানের কোনো ডিগ্রি নেই; জ্ঞান ডিগ্রিবিহীন ও সীমাহীন।’ বাংলাসাহিত্যের এই জ্ঞানমনীষা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। রেখে যান মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সুযুক্তির প্রবহমান ধারা...।