
ভিক্টোরিয়ান যুগে জন্ম নেয়া কবি এলিজাবেথ ব্রাইনিং (৬ মার্চ ১৮০৬-২৯ জুন ১৮৬১) এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি ছিলেন একজন সর্বভুক পাঠক যার জানার আগ্রহ ছিল অদম্য। তিনি শৈশবকালে প্রচুর পড়েছেন, গ্রিক ভাষা শিখেছেন। এলিজাবেথ ব্রাইনিং মাত্র তেরো বছর বয়সে অ্যালেক্সান্ডার পোপের ইলিয়াড পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘দ্য ব্যাটেল অফ ম্যারাথন’ লিখেছিলেন, বয়সের তুলনায় যথেষ্ট মুনশিয়ানার ছাপ ছিল সেখানে। এলিজাবেথের বাবা বইটা প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। ছয় বছর পরে, তিনি ‘অ্যান এসে অন মাইন্ড’ প্রকাশ করেন। ১৯২১ সালে পনেরো বয়স যখন তিনি একটি দুর্ঘটনার শিকার হন যার ফলে তার মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শারীরিক কিছুটা অক্ষম হয়ে পড়েন।জীবনের প্রতি তার অসীম উৎসাহ শান্ত হয়ে যায়, কিন্তু কবিতার প্রতি তার প্রচণ্ড ভালোবাসা তাকে সচল রাখে। তিনি ক্রমাগত পড়তেন, লিখতেন, অধ্যয়ন করতেন এবং আলোচনা করতেন।
কবি রবার্ট ব্রাউনিংয়ের সাথে তার হয় ভালোবাসার বিয়ে। এই দুই কবির বিয়ে এলিজাবেথের পরিবারের কাছে গোপন রাখা হয়। বিয়ের পর তারা ইতালিতে অভিবাসন করে যেখানে সুখে ছিলেন ১৫ বছর। বিয়ের পর পাল্টে গেলেন তিনি। তার স্বামী এই কথা বলে তাকে শক্তি যুগিয়েছিলেন যে অসুস্থতা একটা কাল্পনিক বিষয়। তিনি সফর করলেন দীর্ঘ পথ তার স্বামীর হাত ধরে। তাদের পুত্র সন্তান জন্ম নেয় ১৯৪৯ সালে। এলিজাবেথের বাবা এ বিয়ে মেনে নেয়নি ও কোন সম্পর্ক রাখেনি।
‘পর্তুগিজদের সনেট’ ব্যাপকভাবে পাঠকপ্রিয় প্রেমের কবিতা। ব্রাউনিংয়ের সাথে প্রেম করার সময় লেখা এ গুলো। ইংল্যান্ডে তার খ্যাতি তুঙ্গে উঠেছিল। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের মৃত্যুর পর কিছু আলোচনায় তাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।
এলিজাবেথ বহু বছর ধরে ‘অরোরা লেই’ এর উপর কাজ করেন এবং ১৮৫৬ সালে প্রকাশিত হয়। ‘অরোরা লেই’ এলিজাবেথ ব্রাউনিং এর পদ্যে লেখা কাব্যিক উপন্যাস। প্রথম পুরুষের আখ্যানে আছে ১১,০০০ পঙক্তি। ইতালি এবং ইংল্যান্ডে নায়িকার শৈশব এবং যৌবন, তার বাবার লুকানো লাইব্রেরিতে তার স্ব-শিক্ষা এবং সাহিত্যিক পেশার সফল সাধনার কথা এখানে। ভার্জিনিয়া উলফ বলেছেন যে ‘অরোরা লেই’তে ভিক্টোরিয়ান হওয়ার অনুভূতি তিনি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
এলিজাবেথ আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন। রাজনীতি, ধর্ম, প্রেম এবং নারীদের দুর্দশার ওপর প্রাণবন্ত আলোচনায় পরিপূর্ণ তার লেখা। ১৮৬০ সালে তার রাজনৈতিক কবিতা ‘পোয়েমস বিফোর কংগ্রেস’ প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষের দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মারা যান তিনি স্বামীর হাতের ওপর। কবর হয় ফ্লোরেন্সের প্রটেস্টান্ট কবরস্থানে।
ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তার অনেক বোদ্ধা পাঠক আছে। তিনি ছিলেন কবি এমিলি ডিকিনশনের অনুপ্রেরণা। এমিলির ‘সেই বিদেশী মহিলা’ কবিতায় এই কবির ছায়া প্রতিফলিত হয়েছে। তার অন্যতম একটা জনপ্রিয় কবিতা ‘আনন্দের ভেতর কষ্ট’।