ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

চীনের সঙ্গে এই ভূখন্ডের যোগাযোগকে তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ৫ মার্চ ২০২৫

চীনের সঙ্গে এই ভূখন্ডের যোগাযোগকে তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ

বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে চীনে রবীন্দ্রচর্চার অতী, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক বক্তৃতা করেন চীনা অধ্যাপক দং ইউছেন

সাহিত্য সৃষ্টির সমান্তরালে ভ্রমণের প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল বিশেষ আগ্রহ। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কাপ্রাপ্তির পর তার এই আরো বেশি বেড়ে যায়। চষে বেড়িয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। এসব  দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় তিনি বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি স্বকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেছেন।

পাশপাশি নিজের জীবনোপলব্ধি ও দর্শন এবং কবিতার মর্মবাণীর পরিচয় ঘটিয়েছেন বিশ্ববাসীর। সব মিলিয়ে পাঁচ মহাদেশের ৩৩টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সুবাদে ১৯২৪  সালে কবিগুরু চীন সফর করেছিলেন। আর রবীন্দ্রনাথের ৪৯ দিনের সেই চীন ভ্রমণকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হলো  চীনে রবীন্দ্রচর্চার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক একক বক্তৃতা।

এ বিষয়ক বক্তৃতায় চীনা অধ্যাপক দং ইউছেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গভীরতা বুঝতে শিখিয়েছেন। এই আলোচনায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন,  চীনের সঙ্গে এই ভূখন্ডের যোগাযোগকে তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

বুধবার (৫মার্চ) বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে এই বক্তৃতানুুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে একক বক্তৃতা করেন চীনের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজ বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক দং ইউছেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

দং ইউছেন বলেন, আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রেমিক। সম্পূর্ণ রবীন্দ্ররচনা চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছি, রবীন্দ্রনাথের জীবনী লিখেছি। রবীন্দ্রনাথ আমাকে বুঝতে শিখিয়েছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কত গভীর ও গহন। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি আমি শরৎচন্দ্রসহ বাংলা সাহিত্যের আরও মহারথিদের নির্বাচিত রচনা চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছি।

এখন আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী রচনা এবং তাঁর নির্বাচিত কবিতা চীনা অনুবাদ প্রকাশ। আমি যতবার ঢাকায় আসি নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাই। কারণ এই মানুষটির বিদ্রোহী হৃদয়কে আমরা ভালোবাসি। তিনি বলেন, আমি এবার বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা দেখতে বাংলাদেশে এসেছি। মেলা থেকে আমি প্রচুর বই কিনেছি।

বাংলা একাডেমি আমার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। এ প্রতিষ্ঠান থেকে বহু মূল্যবান বই প্রকাশিত হয়ে আসছে; যা যেকোনো ভাষার জ্ঞানপিপাসু মানুষের চাহিদা পূরণ করবে। আমাকে আন্তরিক আতিথেয়তা প্রদানের জন্য আমি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, চীনের সঙ্গে  এই ভূখন্ডের যোগাযোগ বহু প্রাচীন এবং গভীর। রবীন্দ্রনাথ এই যোগাযোগকে আরও তাৎপর্যমন্ডিত করেছেন। বর্তমান সময়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সাহিত্যের অনুবাদগত যোগাযোগ বিশেষ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, চীনের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি নজরুল চর্চাও হচ্ছে। অধ্যাপক দং ইউছেন বাংলা একাডেমির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আমাদের মাঝে বক্তৃতা করে চীনে বাংলা, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলচর্চার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা দান করেছেন। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া।

মনোয়ার/শহীদ

×