ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

মাসুম চিশতির সাহিত্যনির্ভর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘মেঘনাদবধ’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ৩ মার্চ ২০২৫

মাসুম চিশতির সাহিত্যনির্ভর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘মেঘনাদবধ’

লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে মেঘনাদবধ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীদ্বয়

সাহিত্যের সঙ্গে শিল্পের রয়েছে গভীর এক সংযোগ। সেই বাস্তবতায় প্রায়শই সাহিত্যের নির্যাসে নির্মিত হয় শিল্প। আর সাহিত্যের  সৌন্দর্যে আলোড়িত তেমনই এক শিল্পী কবির আহমেদ মাসুম চিশতি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য  অবলম্বনে তিনি শিল্পকর্ম সৃজন করেছেন।  

লেখা ও আঁকার সম্মিলনে  সৃষ্ট সেসব শিল্পকর্ম অবলম্বনে লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে চলছে মেঘনাদবধ শিরোনামের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম।

কবির আহমেদ মাসুম চিশতি লিখিত ভাষা এবং আঁকার ভাষা নিয়ে যেই নতুন দৃশ্যভাষা নির্মাণের চেষ্টা  করেছেন সেটা মেঘনাদবধ নামের এই প্রর্দশনীতে।  ভাষা, বিশেষ করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাষা বিষয়ে মাসুমের আগ্রহ অনেক দিনের। মধুসূদনের মেঘনাদ বধ কাব্যের সাথে তার পরিচয় ঘটে যখন সে উচ্চমাধ্যমিক পর্বের শিক্ষার্থী। মধুসূদনের ব্যতিক্রমধর্মী জীবন, জীবনের ট্র্যাজেডী, বিদ্রোহ, তাকে আলোড়িত করে। মেঘনাদবধ কাব্যে মধুসূদন মেঘনাদকে নায়ক হিসেবে যেভাবে প্রতিষ্ঠা করেন তা প্রচলিত ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। মেঘনাদ এক ধরনের এন্টি-হিরো, যার জন্য মাসুমের সহানুভূতি জন্মায়।

শিল্পায়োজনটি  প্রসঙ্গে কিউরেটর লালা রুখ সেলিম বলেন,   ২০১৪/২০১৫ সাল থেকে মাসুম এই কাব্য নিয়ে ছবি আঁকা শুরু করে। মধুসূদনের বৈপ্লবিক কাব্য বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল; কাব্যে ভাষার বৈভব, বর্ণনায় যে চিত্রকল্পের বিশাল সমাহার ফুটে উঠে সেটা মাসুম গভীরভাবে অনুভব করে। মধুসূদনের কাব্যে বাংলাভাষার বিপুল শব্দের সমৃদ্ধ ভা-ার তাকে বিস্মিত করে। মাসুম মেঘনাদ বধ আঁকার আগে থেকেই লিখিত ভাষা ও অঙ্কন নিয়ে নিজে চর্চা করে আসছিল। তার কিছু নমুনা এই প্রদর্শনীতে আছে। দৃশ্যশিল্পের ছাত্রাবস্থায়ই  মাসুম এনিমেশন নিয়ে কাজ করছে। ছবির বই, কার্টুন, এনিমেশন এসবে লেখা আর ছবি দুই একসাথে ক্রিয়াশীল থেকে রূপায়িত হয়ে নতুন রূপ নির্মাণ করে। ছবি দিয়ে গল্প বলার বিষয়ে তার বরাবরই আগ্রহ।

লিখিত ভাষা আর অঙ্কনের মধ্যে পার্থক্য এটাই যে, লিখিত ভাষা বা অক্ষর (যা অঙ্কনও বটে) সবাই চর্চা করে, যার অর্থ সবাই বুঝে। আর ছবি আঁকা সবাই আয়ত্ত্ব করে না। মাসুম জীবনের অনেকটা সময় এই দুই ধরনের লেখা (অক্ষর ও অঙ্কন) এবং এর পরস্পরের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে দৃশ্যশিল্প নির্মাণ করেছে। লেখা যেখানে আঁকা আর আঁকাও হতে পারে লেখা, সেটা পাঠের মাধ্যমে। মধুসূদনের মেঘনাদ বধ কাব্যের বর্ণনার বিভা যেন মাসুমের গল্প বলার, বর্ণনা করার বিশাল এক ভা-ার খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে মধুসূদনের কল্পিত চিত্ররূপ মাসুমকে তার অঙ্কনের গভীর সংবেদনশীলতা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে।

মাসুম মধুসূদনের লেখার সাথে জুড়ে দিল নিজের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ নানান ছবি। বৃষ্টির রূপায়নে হোকু সাইয়ের ছবি, যুদ্ধের আবহতে আধুনিক বিমান, ট্যাংক ইত্যাদি। তার দেখা করোলা লতা, দেয়ালের টিকটিকি এগুলিও চলে এলো মেঘনাদবধের জটিল ষড়যন্ত্রের অংশ  হিসেবে। এখানে মধুসূদনের মহাকাব্যিক রচনা, বিস্তারিত অতিকথনের কাল্পনিক জগৎ, তাকে সুযোগ করে দিলো বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করে তার নিজের মহাকাব্যিক রচনা নির্মাণে। যেখানে মধুসূদনের লেখা আর মাসুমের নিজের আঁকা ও লেখা দুই রূপান্তরিত হয়ে নির্মাণ করেছে একটা নতুন উপাখ্যান।

কাল মঙ্গলবার শেষ হবে এই প্রদর্শনী। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

আশিক

×