![অচিনবৃক্ষ অচিনবৃক্ষ](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/9-2502131146.jpg)
নীলগুড়ি গাঁয়ে অচেনা গাছের দেখা। কেউ জানে না গাছের পরিচয়। পথেহাঁটা কারো নজরও এড়ায় না; চোখ টিপেটিপে মানুষ দেখে এবং আন্দাজ করে। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে জোর কদমে হাঁটে কিন্তু হিসেব মেলে না। বিরল প্রজাতির গাছ জেনে কেউ নজর এড়ায় না; কড়াচোখে দেখে। হঠাৎ বেড়ে ওঠা গাছ পাখিদের নীড় হয়ে ওঠে। গাঁওজুড়ে বহুগাছ তবুও কেন এই গাছ পাখিদের প্রিয় তা নিয়েও মানুষের মাঝে চলছে বহুমুখী জল্পনা-কল্পনা। কানের কাছে ঘেঁষে কত কথা কয়। মানুষের কত ঢর ও আতঙ্ক। নচেৎ পথিকেরা ভয়ে কাঁপে কেন? পাখির কোনো ভয় নেই। ডালের ওপর পাতালতার ভাঁজে বাস করছে। গাছটি তাদের সুখী নীড়। কিন্তু বহুদিন খাদ্যাভাবে পাখিগুলো অভুখা, খিদের তাড়নায় পেটে মোচড় দেয়। খাবারের বন্দোব্যবস্থা নেই। কৃষি ও আবাদি জমি কমে গেছে, খাঁ খাঁ করছে গাঁয়ের মেটোপথ, ধোঁয়ার মতো ধূলিকণা উড়ছে। উঁচু উঁচু পাহাড় ও বন বাদাড়ের গাছ কেটে নেয় চোরেরদল। জনতা কেউ কোনো শব্দ করে না; কারো কণ্ঠে কোনো জোর স্বর নেই, কারণও আছে। দেশে আর কোনো মানুষ নেই। কদিন আগেও যারা চিৎকার করে করে সারা গাঁয়ে ঘূর্ণি দেয়, তারা এখন পোষা কুকুর, কেউ কেউ হয়ে গেছে বুনোপ্রাণি, যারা ভুল ধরাতে ব্যস্ত ছিল সেইসব সুশীলও বকের দলে নাম লেখে ও পানকৌড়ির মতো প্রকৃতির ভেতর সাঁতার কাটছে। যাদের ঘামেভেজা দেশ সেসব শ্রমজীবী মানুষগুলো হয়ে উঠছে বালিহাঁস, গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো হয়ে গেছে খুদেপাখির ঝাঁক। দেশে এখন মানুষ মানে এক অচেনা ও বিলুপ্তপ্রাণী। হঠাৎ একটা দেশে মানুষ বদলে গিয়ে বহুরুপী প্রাণী হয়ে ওঠায় বিদেশী বহুপর্যটন আসছে, ভিড় করে দেশের পথে পথে। গল্প করে পর্যটকের দল এই কেমন আজিব দেশরে! সব মানুষ বদলে গেছে; একটাও মানুষ নেই।
বিদেশী এক পর্যটক নামে নীলগুড়ি গাঁয়ের ভেতর। তেপ্পান্ন বছর আগে গাঁয়ে বহুলোক মারা যায়। আর যারা প্রাণে বেঁচেছিল তারা দলবেঁধে হাঁটতে থাকে শহরের পথে পথে। লাল পিঁপড়ের কামড়ে গাঁয়ে মানুষ বাস করতে পারছিল না; ভয়ংকর পিঁপড়ে, মরণদশা মানুষের। পিঁপড়েটুলির ওপর আগুন দেয় নীলগুড়ির শখানেক মানুষ। ধীরে ধীরে গাঁয়ে ফেরে শরণার্থীদের অনেকে, গাঁওজুড়ে মানুষের ঢল। তারা জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ে এবং মুক্তির স্বাদ নিতে থাকে।
হঠাৎ সেই গাঁও আবার উজাড় হয়ে গেল। খাঁ খাঁ করছে গাঁয়ের মেঠোপথ, মানুষ নেই। কারণ কী তা অজানা, কোন পিঁপড়ে এসে বসত করেছে মনে হয়। এতোদিন তারা কোথায় ছিল? গাছের গুড়ির ভেতর লুকিয়ে ছিল? কী ভয়ানক বিষপিঁপড়ে, পিঁপড়ের ভয়ে মানুষও উধাও হয়ে গেছে।
মানুষ উধাও গাঁয়ে মাটির ছবি তুলতে থাকে জনসন। কুকুরের ছবি, বিড়ালের ছবি, সাপের ছবি, কাকের ছবি, বাগাড়ের ছবি, যা পায় সেসব ছবি তুলতে তুলতে হাঁপিয়ে ওঠে। মাথা টঙ্কর দেয়। এতো এতো প্রাণির আবাস ছিল। আজ কোথাও মানুষের দেখা নেই। মানুষ ছাড়া প্রকৃতি শোভা পায় না, ছন্নছাড়া লাগে। কত কত মানুষ ছিল, কারো মাথায় টুপি, কারো পরনে ধুতি, কারো কপালে সিঁদুর, কারো ঝটধারী ইয়া লম্ভা চুল, পথে পথে কত কী আজ কিচ্ছু নেই। সোজাকথা তারা কেউ মানুষ নেই। কী অবাক দেশ, এদেশের মানুষগুলো গেল কোথায়? কাকে প্রশ্ন করবে। কে বলবে এই বদলের পেছনে কী হাত, কার হাত? কারণইবা কী? তবে ব্যাপারটা বিষম ভয়ংকর, কেমন অদ্ভুত দেখা গেল! রীতিমতো জনসন ভয়ে থরথর কাঁপছে।
বিরল প্রজাতি গাছের কথা পড়েছে গুগুলের পাতায়, গ্রামবাংলার সৌন্দর্য পাতা বৃক্ষে, লোকমুখে খইফুটছে, বৃক্ষের কথা মুখে মুখে। আজিব বৃক্ষের খোঁজে জনসন ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো। পথে পথে বাড়ি ঘর, মাঠ- ঘাট জলশূন্য ও দু-একটি জলাশয়ের দেখা পায়। একপাশে নদী ও শুকনো খাল। অন্যপাশে ধানক্ষেত দেখে মনে আনন্দ পায়। বহুদূর হাঁটতে হাঁটতে দেখা পায় একটা বড়ো বৃক্ষের। বৃক্ষপাশে পাখিদের ভিড়, ছোটো ছোটো পাখি, জোড় বেঁধে চি চি করে উড়ছে। পাখিগুলোর গায়ে মাংস নেই, পেট পিঠ লেগে আছে, শরীরের হাড়গোড় দেখা যায়। জনসন দাঁড়ায়, মনে মনে আশা তার, একবার যদি মানুষের দেখা পায়।
বৃক্ষ দেখে ভালো লাগে এবং শেকড়ের ওপর হাঁটু থুবড়ে বসে সে। শরীরের পাশ দিয়ে মৃদুবাতাস ছুঁয়ে যায়। শরীরের শিরা-উপশিরা জুড়ে হিমেল হাওয়া, মৃদু স্বস্তিও পায়। দীর্ঘপথ হেঁটে শরীরে ক্লান্তি ভর করেছে। উপচে পড়ছিল সমুদ্রের মতো জলধারা, ঘামেভেজা শরীর, ঘাম নয়, নুনেচিঁটা জল পড়ে পড়ে হিম হয়ে গেল। এখন শরীর কিছুটা ভালো, জোর পায় পায়ে পায়ে। শরীরের পশমগুলো শিশিরভেজা ঘাসের মতো ধপাধপ লাফিয়ে ওঠে। পুটলি থেকে ছোটো গামছাটা নেয় জনসন, ধীরে ধীরে শরীর মুছে নেয় এবং গাছের ডালে সরুদৃষ্টিতে তাকায় এবং বারবার অবাক হয়ে ওঠে। বৃক্ষের পাতাগুলো বেশ গোছগাছ ছিল। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শালিক, ছড়ুই, কবুতর আরও ছোটো ছোটো পাখিগুলো বসে বসে একডাল থেকে আনডালে গিয়ে আনমনে গান গায়-মিষ্টি গান। পাখি আসে পাখি যায়। সুরের মূর্ছনায় রাত দিন ধরা দিতে থাকে। এই বৃক্ষের ফল খেয়ে খেয়ে পাখিদের জীবন বাঁচে এবং দিন চলে যায়।
বৃক্ষের পাশে বসবাস শুরু করে জনসন। গাছের মায়া ধরে যায়। মায়াবৃক্ষের পাশে কোনো মানুষের ছায়া নেই কিন্তু মানুষের দেখা দরকার জনসনের। সেই অপেক্ষায় দিনরাত চারপাশে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। একদিন এক পথচারি এসে হাজির, ঠিক গাছের শেকড়ে। পথচারি একা নয় তার সঙ্গে দ্চুারজন মানুষও আছে। সদলবলে এসেছে। যাদের কথাবার্তা খুব ওজনি, মাপঝোপ করা সহজ খুব কঠিন। তাদের দেখে মনে হচ্ছে দেশের বড়ো বড়ো মাথা। যাঁদের আগমনে বৃক্ষের পাতা নড়েচড়ে। মনে হচ্ছে বৃক্ষের মেলা দরদ, তাদের চোখও স্তব্ধ হয়ে যায়। এ কী দেশ, এতো সুন্দর গাছ, টেরই পাইনি কেউ, ঠিক আমরাও না। পাবে ক্যামনে, হয়তো খোঁজ নেয়নি কেউ কিংবা কেউ কোনোদিন খোঁজ-খবর দেয়নি।
বৃক্ষ, প্রকৃত বৃক্ষ, ফলজ বৃক্ষ মানুষের কত উপকারী গাছ। গাছের চারপাশে উবে উবে বীজ নেয় জনসন। নিজেদের দেশে বৃক্ষরোপণ করবে, ভ্রমণে বের হলে বীজ নিতে ভুলবে না বহুদেশে গাছের বীজ ছড়িয়ে পড়বে। গাছ নিয়ে বহু কথা হবে, মানুষ উপকৃত হবে। বীচিগুলো নিয়ে পুঁটলিবেঁধে দাঁড়াতেই দেখে গাছের নিচে এক টুকরো কাগজ, সাদা কাগজে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা বিষবৃক্ষ।
গুটি কতেক দেশ মানুষশূন্য। সেসব দেশে দেশে আরব বসন্ত শুরু হয়ে গেছে। তাদের চাওয়া মুক্তি, বাক মুক্তি। তা -পূরণ হতে লাগলো। এদেশেও বুনো প্রাণি হয়ে টিকে থাকা ও নানা প্রজাতি প্রাণিগুলো মুখ খুলতে শুরু করেছে। মানুষ হতে শুরু করেছে। মানুষ দেখা দরকার জনসনের,অদ্ভুত মানুষের। নচেৎ বৃক্ষের নাম জানবে ক্যামনে, যদি বিষবৃক্ষ হয়ে থাকে তা কেন? খুব চিন্তায় পড়ে যায়। যদি বিষবৃক্ষ হয়ে বারবার মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কোনোদিন প্রকৃতির শোভা ফুটে উঠবে না, নিরানন্দ বিশ্ব দেখার ইচ্ছে নেই তাঁর। প্রকৃতি হোক আনন্দমাখা ও হইচইয়ের ডেরা। মানুষ পাবে কই? প্রবল ঝড় আসে; ঝড়ের ভেতরে ধূলিকণা, চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। খুব চেষ্টা করে চোখ খোলার কিছুতে খুলতে পারছে না: হাঁটুগেড়ে বসে যায়। চোখ বন্ধ, মুখ বন্ধ, নড়ছে কেবল ঠোঁট, ভয় অনেক ভয় চোখে চোখে। বেঁচে থাকার ভয়। ঝড় থামে একদিন। চোখের পাতাগুলো হঠাৎ নড়ে ওঠে। চারপাশে দেখে, অবাক হয়ে যায়, মানুষ আর মানুষ। হাঁটছে, দৌড়াচ্ছে বসে বসে গল্প করছে। গল্পের মানুষেরা বসে আছে। একজনকে ডেকে নেয় জনসন। তাঁর নাম জিজ্ঞেস করে, লোকটি ধীরকদমে কাছে এসে বলল, আমি নাছের আলি। ইয়েস নাছের আলি! তোমাদের খুঁজছি। বাহ! আজ তোমাদের দেখা পেয়ে পরানের কোষগুলো নড়ে উঠলো। জনসন হাত ধরে জিজ্ঞেস করে বলতো তোমরা কোথায় ছিলে? নাছের আলির চোখজোড়া জলেভরা, ডুবদেওয়া মানুষের মতো চোখের পাতা- কাঁপছে সে। জনসন হাত চেপে বলল, ভয় পেও না; বলো কী হয়েছে? ডুবে ছিলাম, কোথায়? কিভাবে? কেন? কী দুঃখভেজা কান্না নাছের আলির। জল ধরে রাখতে পারেনি। হাতটা ছেড়ে দেয় জনসন। ধীরে ধীরে আরও মানুষের দেখা পায়। মানুষ মানুষের সঙ্গে দীর্ঘযুগ ধরে ডুবে থাকা, গোপন থাকা, প্রাণির বেশে থাকা, কষ্ট হজম করা দুঃসময়ের গল্প করতে থাকে। নাছের আলিকে জনসন বৃক্ষের ধারে নিয়ে যায়, হাত উঁচিয়ে দেখায় এবং জানার চেষ্টা করে তাদের হারানো দিনের গল্পগুলো।
বৃক্ষটি এখন অনেক বড়ো, বিষাক্ত বায়ু ছাড়ছে দেশজুড়ে, বহু পাখি মরে গেছে। যে পাখিগুলো জন্ম নিয়েছে, তাঁদের পালকঝরা। কুকুরগুলো মরে গেছে, বিড়ালগুলো মরে গেছে, দুচারটে বিড়াল বাঘদাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে মরার ভয়ে গর্ত থেকে মাথা উচায় না; গর্ত বলতে গোরস্থান, নিরাপদ ঠিকানা। যেখানে তেপ্পান্ন বছর আগে রক্তাক্ত মানুষের দেহ দাফন করা হয়েছিল।
যারা মানুষের রূপ পেয়ে হন্নে হয়ে চারদিকে প্রতিবেশীর খোঁজে ঘুরছে। তাঁদের দেখা পেতে জনসন হা-পিত্যেশ করছে। মানুষ দেখলেই হাত ইশারা করে, কথা বাড়ায় এবং বৃক্ষের কথাটা কানে পৌঁছে দেয়। দেশজুড়ে বৃক্ষের কথা চাউর হতে থাকে। মুখে মুখে বৃক্ষের কথা। তারা কেউ এখন আর বিষবৃক্ষের কথা শুধায় না; বরং তোয়াজ করতে থকে। রাত গুনতে থাকে, দিন গুনতে থাকে। এবং বৃক্ষের নাম বদলে রাখে বীজবৃক্ষ। দিনে দিনে বদলে গেল বৃক্ষের নামও।
নাম বদলালে দামও বদলায়। দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়ে গেল। বহুলোকের ধারণা বৃক্ষশাখে নতুন পাতা গজাবে একদিন। ছায়া ও ফলের রস খেয়ে শরীরের হিম্মত তৈরি হতে থাকবে আবার। কিন্তু কী শুরু হয়ে গেল। ঝড়... প্রবল ঝড়, ভেঙে গেল গাঁও বসতি, জীব জন্তু, পাখি, মাছ, কাঁচের দেয়াল ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। দেশজুড়ে পঁচা গন্ধ নাকে ডোকে, মাংসপঁচা গন্ধে মানুষ নাক ওঠাতে পারে না; সব পঁচা গন্ধ নাক নেয় কিন্তু মানুষ পঁচা গন্ধ তা নেয় ক্যামনে, নিজ মাংসের গন্ধও নিতে কষ্ট হয়, দারুণ কষ্ট। বৃক্ষের কাছে ঘেঁষে মানুষ, নামী মানুষ, মনভরা আনন্দ হয় সেই মানুষের, ঝড়ের রাত আরও দীর্ঘ হতে থাকে। ভয় কাটে না কারণ বড়ো বৃক্ষ ঝড়ো হাওয়া কমিয়ে দেয়। পথরেখা দমিয়ে রাখে কিন্তু ঝড় থামেনি, নতুন করে আবার বড়ো ঝড় ওঠে, আগে ছিল পুবের ঝড়, এবার পশ্চিমা ঝড়। সামলাবে কে?
মানুষ নানা প্রাণি, পশু- পাখি জীবজন্তু হয়ে ওঠে, কথা বন্ধ হয়ে যায়। প্রবল ঝড়ে ডালপালা ভেঙে পড়তে থাকে মানুষের গাড়ের ওপর। মানুষের বসতি ও স্থাপনা উড়ে যায়। মানুষ এখন আর বীজবৃক্ষের ওপরও ভরসা পায় না; মনে মনে ধরে নেয় অন্য প্রাণি হয়ে বেঁচে থাকাই নেহাৎ ভালো ছিল। তবুও জীবনটা বেঁচে যায় কিন্তু যা ঘটছে তা বৃক্ষের কাজ নয়- এ কেমন বৃক্ষ। কী মনে করেছি, পৃথিবীর বুকে ছায়া দেওয়া গাছ এতো ধূসর হয়ে গেল ক্যামনে, বিবস্ত্র মানুষগুলো পথে বের হয়। আহা কত প্রাণি, কত পশুপাখি, তবুও মানুষ ভালো ছিল। আজ মানুষ আছে কিন্তু হুঁস নেই, বিবেক নেই, মগজ নেই, ঘিলু নেই, এ কী আজিব কারবাররে বাপ! মানুষের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল। কয়জন মানুষ দলমদদে এগিয়ে এলো। তারা পথের কিনারে বসে বসে দক্ষিণে মুখ তুলে দেখতে থাকে। কী সুন্দর প্রকৃতি পাশের বাড়িটি জ্বলছে, কে জ্বালাচ্ছে। নাছের আলি বুক টান করে কয়। ব্রাদার এরা নতুন মানুষ, মানে কী? আগে যারা গর্তে ছিল, এখন তারা আবার মানুষ। তাই নাকি, কী যে বলো। কেউ প্রতিবাদ করেনি? করবে ক্যামনে, বাড়ির লোকগুলো তাদের মতো হয়ে গর্তে চলে গেছে। কী গর্তে, সেই পুরনো গর্তে, গর্ত ঠিক আছে। কেবল খোলস পাল্টাচ্ছে মানুষের খোলস। জনসন জোর কদমে হাঁটতে লাগলো। পেছন থেকে ডাকে নাছের আলি, এবার যেতে নিশ্চয়ই আপনার আপত্তি নেই। হাঁ নেই তবে তুমি কোথায় যাবে। বদলাতে যাবো। কেন? আপনার মাথা খাটো কেন? সহজে ধরা দেয় না কেন? দেখছেন না-দল বদলাচ্ছে; মানুষ বদলে নি। বৃক্ষের নাম বদলে গেলে তাতে অবাক হওয়ার কী আছে? কলিজা ছাড়া কী দাম, দাম বেশি কিসের। বুঝছেন তো নাকি, না বুঝার কী? যেতে আপত্তি নেই তবে কথা আছে। কী কথা, কলিজা হারানোর দহন, তোমার? না বৃক্ষের। নাছের আলি দমমুখ খিঁচে খিঁচে বৃক্ষের পাশে বসে কাঁদতে লাগলো।