ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

ঈগল ও সিংহের ভয়ংকর লড়াই

সাগর আহমেদ

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঈগল ও সিংহের ভয়ংকর লড়াই

ভারতের উত্তর প্রদেশের গহীন, গভীর ভাভর বনাঞ্চল। এ বনে একবার পশু-পাখিদের ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। বনের রাজা সিংহের নেতৃত্বে প্রথম দলটির খেলোয়াড় ছিল সিংহ, বাঘ, জিরাফ, হাতি, বানর, খরগোশ, ভালুক ও হরিণ। পাখির রাজা ঈগলের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দলটির খেলোয়াড় ছিল ঈগল, চিল, বাজ, শকুন, কবুতর, মাছরাঙা ও সারস। যদিও পশুদের শক্তি তুলনামূলকভাবে পাখিদের চেয়ে বেশি ছিলো, পাখিদের তীক্ষ্ম দৃষ্টিশক্তির কারণে তারা খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করলো। প্রথমেই টসে জিতে ঈগল পাখি ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলো। ঈগল, চিল, বাজ, শকুন প্রখর দৃষ্টি দিয়ে স্পিন বল ও পেস বল মোকাবিলা করে রানের পাহাড় গড়ে তুলল। এরপর সিংহ বাহিনী ব্যাট করে অল্প রান করেই সবাই আউট হয়ে গেল। শুধু জিরাফ একশো দুই রানের একটা সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে খেলাটায় কিছুক্ষণের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে এনেছিলো।
যাহোক বিশাল রানের ব্যবধানে বনের রাজা সিংহের দলকে পরাজয় বরণ করতে হলো। অবশেষে মাছের রাজা ইলিশ বিজয়ী ঈগল বাহিনীর ক্যাপ্টেন ঈগল পাখির হাতে বিজয়ের ট্রফিটা তুলে দিলো। এতে বনের রাজা সিংহের খুব রাগ হলো। পরাজিত দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে বিজয়ী দলের ক্যাপ্টেন ঈগল পাখির সাথে যখন সে হ্যান্ডশেক করতে গেলো, তখন রাগের চোটে ঈগল পাখির এক চোখ সে থাবা মেরে কানা করে দিলো। চারিদিকে হৈচৈ, বিশৃঙ্খলা লেগে গেল। পশু-পাখিরা এলোমেলো মারামারি করতে করতে দৌড়ে আর উড়ে যার যার বাসায় চলে গেলো।
তবে পাখির রাজা ঈগল প্রতিজ্ঞা করলো যে, সে এই অন্যায় আঘাতের প্রতিশোধ নেবেই। বনের রাজা সিংহ ঈগলের এই প্রতিজ্ঞার কথা শুনে তার দলবল নিয়ে খুব সতর্ক রইলো। সে লম্বা গলাওয়ালা জিরাফকে প্রহরী নিযুক্ত করলো। আর বানরদেরকে নির্দেশ দিলো যাতে জিরাফ সংকেত দিলেই ওরা পাথর ছুড়ে পাখিদের তাড়িয়ে দেয়। এ কারণে পরপর কয়েকবার চেষ্টা করে পাখির রাজা ঈগল প্রতিশোধ নিতে ব্যর্থ হলো। তবু সে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
একদিন বনে ভীষণ ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়লো। লম্বা গলাওয়ালা জিরাফ ডেঙ্গু জ্বরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পশু হাসপাতালে ভর্তি হলো। এবার পাখির রাজা ঈগল সুযোগ পেলো। সে দলবল নিয়ে পশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কেউ তাদের আগে দেখে সতর্ক করতে পারলো না। শুরু হলো পশু ও পাখির দলের ভয়ংকর লড়াই। বাঘ, হরিণ, চিল, শকুন সবাই যুদ্ধ করতে লাগলো। পশু-পাখিদের মৃতদেহে বন ভরে গেলো। হঠাৎ ঈগল পাখি সিংহকে দেখতে পেয়ে তার দিকে প্রচণ্ড গতিতে উড়ে এলো। সিংহ শেষ মুহূর্তে তাকে দেখতে পেয়ে থাবা ঝাঁকিয়ে তার ডানায় আঘাত করলো। ঈগল পাখি একদিকে সরে গিয়ে ঝটকা মেরে ফিরে এসে বনের রাজা সিংহের বাম চোখে আঘাত হানলো। সিংহ সেই তীব্র আঘাতে কানা হয়ে গেলো। চোখ থেকে রক্ত গড়িয়ে মাটির ওপর ঝরে পড়তে লাগলো।
সিংহ তখন থাবা উঁচিয়ে পাখির রাজা ঈগলকে থামতে ইঙ্গিত করে বলল, আমি তোমাকে অযথা আঘাত করে অন্যায় করেছিলাম। আজ সেই একই আঘাত পেয়ে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর যুদ্ধ নয়। আজ থেকে বনের পশুরা-পাখিরা সবাই মিলেমিশে থাকবো। এতেই আমাদের সবার কল্যাণ। ঈগল পাখি ও শত্রুতা ভুলে বনের রাজা সিংহকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। সেই থেকে ভাভর বনের পশু-পাখিরা খুব মিলেমিশে, পরস্পরকে ভালোবেসে শান্তিতে আছে।

×