ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

বিপ্লবী কবি ডাল্টনের কবিতা

ভূমিকা ও অনুবাদ : তূয়া নূর

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিপ্লবী কবি ডাল্টনের কবিতা

কবি রোগ ডাল্টন (১৪ মে ১৯৩৫-১০ মে ১৯৭৫) সালভাদরের একজন বিপ্লবী কবি যার জীবন এবং কাজ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাকে লাতিন আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রোগ ডাল্টন সালভাদরের কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং কমিউনিস্ট কর্মী। তার কবিতায় যেমন বিপ্লবের কথা এসেছে প্রাণবন্ত হয়ে তেমনই এসেছে বৈষম্য, জীবন, মৃত্যু এবং মানুষের প্রতি আপরিসীম মমতা ও ভালোবাসার কথা।
কবি রোগ ডালটন বিপ্লব ও আন্দোলনের পাশাপাশি লিখেছেন কবিতা। শুকনো রোগা হাড় বের করা অথচ সদাহাস্য কবি। আর্নেস্টো কার্ডিনাল ডাল্টনের ইংরেজিতে অনুবাদ নির্বাচিত কবিতার গ্রন্থ Small Hours of the Night এর ভূমিকায় কবিকে হাসি মুখের বিপ্লবী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই বইয়ের কবিতাগুলো স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ করেছেন জোনাথন কোহেন, জেমস গ্রাহাম, রালফ নেলসন, পল পাইন্স, হার্ডি সেন্ট মার্টিন ও ডেভিড আনজার। সম্পাদনা করেছেন হার্ডি সেন্ট মার্টিন।
তার মৃত্যু ছিলো দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মন্তুদ। সতীর্থদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি। কবি রোগ ডালটন পেয়েছেন লাতিন আমেরকিরার সম্মানজনক পুরস্কার Casa Dela Americas prize of poetry। মৃত্যুর পর সালভেদর সরকার তাকে ‘হিজো মেরিটিসিমো’ (সবচেয়ে মেধাবী ছেলে) এবং ‘পোয়েটা মেরিটিসিমো’ (সবচেয়ে মেধাবী কবি) হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এল সালভেদর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দেয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।
‘ফ্রান্সিসকো সোর্তোর জন্য গাঁথা’ কবিতায় তিনি বলেছেন কারান্তরালের একজন মানুষের কথা। ফ্রান্সিসকো সোর্তো একজন সাধারণ অপরাধী যিনি বন্দি জীবনের কারণে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। নয় নম্বর সেলে ছিলেন তিনি। এমন পাগল হয়েছিলেন যে তিনি বন্দিদের মধ্যে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াতেন আর বিকেল বেলা যখন কারাগারের আঙিনায় আবাবিল ও টিয়া পাখি এসে বসতো তখন তিনি জলভরা চোখে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী আর্জেন্টাইন সংগীত শিল্পী ও সংগীত রচয়িতা কার্লোস গার্ডেলের গান বেসুরো গলায় গাইতেন।

ফ্রান্সিসকো সোর্তোর জন্য গাঁথা

নয় বছর ধরে ফ্রান্সিসকো সোর্তো বন্দি।
সে হত্যা করেছিলো কারণ এ ছাড়া তার উপায় ছিলো না
কারণ তাকে সাহসী এবং কঠোর হতে হয়েছিল এই অনুর্বর গ্রামে যেখানে কেউ কখনও রুটির অধিকারের কথা বলে না
চারদিকে শুরু খরা, শুধু খরা ও দুর্ভিক্ষ
যেখানে অন্ধ হাসির উপর ধূলিকণা একাকী চাপা পড়ে থাকে
এবং আনপাড় মস্তিষ্ক
চিৎকার করে শোনায় পোড়া সঙ্গীত এবং তার সীমাহীন কান্না।
ফ্রান্সিসকো সোর্তোর আছে নির্বাসনের নয়টি চোখ।
আলোর জন্য নয়টা চিৎকার যেখানে শতাব্দীগুলো ছোট বাচ্চাদের মতো নাচে।

নয়টি ‘উনিশ শত এবং অনেক’ ভয়।
নয় বছর ধরে তার উকুন-আক্রান্ত হৃদয়ে আঁচড়,
নয় বছর দাঁতের ডগায় অভিশাপ দিয়ে নিজেকে ভয় দেখায়।

নিস্তব্ধতা এবং বরফ ঠান্ডার নয়টা কালো অশ্রু।

নয়জন লম্বা লেফটেন্যান্ট
যারা আমাদের কাঁদায়
পিস্তল থেকে শূন্যে গুলি ছোড়ে
আমাদের হাসায়,

নদী, নদীর তীরে তাজা কাঠ,
তার পাশে ক্ষেতের কথা বলি
যেখানে এমন কি পাথরের প্রাচীরও নেই
যেখানে তুমি তারার কাছে উদোম হয়ে ঘুমাতে পারো।

নয় বছর, একটা অভিশাপ, নয় বছর ছদ্মবেশ যেন ঘূর্ণি আবর্ত মাথার ভেতর
তোমাকে যখন বেঁধে রাখা হবে;
নয় বছর, নয়,
নয়টা বছর ফেরত আনা যাবে না মহাকালের গহব্বর থেকে,
নয় বছরে যার মধ্যে বলা যেতে পারে যে
ছিলো আটাত্তর হাজার আট শ চল্লিশ ঘণ্টা
যদি তোমার স্কুলের ডেস্ক এবং সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা থাকে।

সুন্দর ফ্রান্সিসকো সোর্তো
তার বানরের মুখ
নিষ্কলুষ
পৃথিবীর ভেজা মাটির মতো যে আমাদের পায়ের শব্দ শুনতে পায়।

ফ্রান্সিসকো সোর্তো একদম একা
আটশো বন্দির মাঝখানে।
রবিবারগুলো দর্শক ছাড়া ফ্রান্সিসকো সোর্তোর
ফ্রান্সিসকো সোর্তো তার ক্ষত নিরাময় করে
মুরগির মলমূত্র দিয়ে।
ফ্রান্সিসকো সোর্তো চার বছর অন্ধকারে হাতকড়া পরা, চার বছর খুব কঠিন একাকী।
ফ্রান্সিসকো সোর্তো
তুমি কত মহান এবং বিস্ময়কর,
তুমি কত মহান একজন মানুষ,
যে এখনো গান গাওয়া ভুলে যায়নি।
(স্প্যানিশ থেকে ইংরেজি অনুবাদ: জোনাথন গ্রাহাম)

×