জন্ম নিয়েছিলেন এই বাংলায়, তবে তা পরাধীন অখণ্ড বাংলায়। এখন থেকে ঠিক দু’শো বছর আগে। ইতোমধ্যে তাঁর মৃত্যুরও দেড়শ’ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু সময়কে উপেক্ষা করে মননশীল পাঠক-গবেষক কিংবা শিক্ষাব্রতি ছাত্র-অধ্যাপক আর ক্লাসিক সাহিত্যের রস আস্বাদনে আগ্রহী পাঠককুলের কাছে আজও কবি মধুসূদন প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পিতার হাত ধরে তিনি নিজ জন্মস্থান যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম ছাড়িয়ে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কবি শ্রী মধুসূদনের যে ছবির সঙ্গে আমরা আবাল্য পরিচিত সেখানে তাঁকে দেখি পাট করে চুল আচড়ানো, শ্মশ্রুধারী, সাহেবী পোশাকের দীর্ঘদেহী একজন মানুষ। নামের শুরুতে ইংরেজি শব্দ মাইকেল। পাঠ্য বইতে যখন তাঁর কবিতার সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়েছে তখনই বুঝেছি এই কবির কবিতা সাধারণ কিংবা খুব সহজবোধ্য কিছু একটা নয়। গুরুগম্ভীর উচ্চারণ, ব্যতিক্রমী ছন্দ, বাণীর দৃঢ়তা সবকিছুতেই এ যেন এক অন্যরকম অনুভব! এরপর পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডি ছাড়িয়ে অনুসন্ধিৎসার ডালপালা যখন আরো সামনে বিস্তৃত হয়েছে তখন তাঁর কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো, চতুর্দশপদি কবিতা, নাটক- প্রহসন ইত্যাদি পড়তে গিয়ে প্রতিক্ষেত্রেই বিস্ময়াভিভূত হয়েছি। জেনেছি তিনি ইংরেজি ভাষায় কবিতা লিখে যশস্বী হতে চেয়েছিলেন, চেষ্টাও করেছিলেন। ওয়ার্সওয়ার্থকে উৎসর্গ করে বিলাতের বিখ্যাত সব পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠাতেন। কিন্তু তাঁর ভেতরের শিল্পীসত্বা একসময় তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে পথ ভ্রান্ত। এটিই তাঁর ভাষায় ‘কুললক্ষ্মী’। যেন স্বপ্নে এই কুললক্ষ্মী তাঁকে জানিয়ে দেয় তাঁকে বাংলাভাষায় লিখেই কবি হতে হবে। ভ্রান্ত পথে চলার আক্ষেপ থেকে তিনি নিজেকে বলেছেন ‘অবোধ আমি’, লিখেছেন- ‘যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে।’ তিনি সত্যিই ফিরেছিলেন, ‘ভিখারীদশা’ থেকে একদম রাজার মতো তাঁর এই প্রত্যাবর্তন। তবে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন ভাষার সেরা রচনাগুলো পড়ে আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর সামনে ছিলেন ইংরেজ কবি জন মিল্টন। যেখান থেকে তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দে মহাকাব্য লেখার ধারণাটা পেয়েছেন। তাঁর মহাকাব্য রচনার আদর্শ হিসেবে ছিলেন স্বয়ং হোমার, যাকে তিনি ইউরোপের একাংশের বাল্মীকি বলে মনে করতেন। মাইকেলের ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যে হোমারের ইলিয়াড মহাকাব্যের প্রভাব মোটেই অস্পষ্ট নয়। এই মহাকাব্যের কাহিনীবিন্যাস ও চরিত্র পরিকল্পনায় মধুসূদন বাল্মীকির আদর্শকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে পাশ্চাত্য মহাকাব্যের আদর্শেই বিশেষতঃ হোমারের ইলিয়াডের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ‘হেক্টর বধ’ নামের একটি রচনায় ইলিয়াডের উপাখ্যানকে তিনি বাংলায় উপস্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ট্রয় নগরীর হেক্টরের মধ্যে লঙ্কার মেঘনাদের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। মধুসূদনের নাটকে শেক্সপিয়ারের প্রভাব রয়েছে, সনেটে পেত্রাকের। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর ‘বাঙালি জাতীয়তায় অবিচল মধুসূদন দত্ত’ শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখছেন ‘সবই সহায়তা, ঋণ নয়। এই সহায়তা তাঁকে মোটেই নত করেনি।’ বলা চলে তাঁর বিপুল মনীষা সেকালের রক্ষণশীলদের তো বটেই, ইয়ং বেঙ্গলের চেতনা আর সংস্কারের সীমানাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলা সাহিত্যের মহাজাগৃতির সূচনা মাইকেলের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। মধুসূদনের আবির্ভাবের ঠিক আগের সময়টা বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি যুগসন্ধিকাল ছিল। বস্তুত সেটা ছিল ভারতচন্দ্র-রামপ্রসাদের পরবর্তী এবং মধুসূদনের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী যুগ। ১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্রের এবং ১৮৫৮ সালে গুপ্তকবি ঈশ^রচন্দ্র গুপ্তের তিরোধান হয়েছিল। এই মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে শুধু ঈশ^র গুপ্তের কবিতাকে বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যে প্রথম শ্রেণির কোন কবিরই আবির্ভাব হয়নি। তবে এ যুগে বিপুলসংখ্যক গীতিকবিতা রচিত হয়েছিল, কিন্তু সেসব গীতিকবিতার মধ্যে ভাবের গাঢ়তা এবং গঠনের মধ্যে উল্লেখ করবার মতো কোনো পরিপাট্য ছিল না। গীতিকবিতা বলতে এখানে কবিয়ালদের গান, টপ্পা রচয়িতাদের গান, ছড়া-পাঁচালীকারদের রচনা কিংবা স্থুল রুচির ব্যঙ্গ-প্রহসন ইত্যাদি মনে করা যেতে পারে। এঁদের গীতিগুলো একশ বছর ধরে বাংলার সাধারণ কিংবা সকল শ্রেণির মানুষকেই বিনোদন দিয়ে এসেছে। বাংলা কবিতা কৃত্রিমতার সাহায্য গ্রহণ করে তখন আপাত মধুর হয়ে উঠেছিল। তখন কাব্যক্ষেত্রে ভাব বা বিষয়ের চেয়ে রূপই প্রধান ছিল এবং কবিরা রূপের প্রকাশ মাধুর্যের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বাংলার সাহিত্যজগতে মধুসূদনের প্রায় সমকালীন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সে যুগের বাংলা সাহিত্যের যুগসমস্যাকে উপলব্ধি করে কাজ শুরু করেছিলেন, তা সত্ত্বেও বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে মধুসূদনের প্রতিভাদীপ্ত দান রঙ্গলালের থেকে বেশি সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। কারণ পাশ্চাত্য কাব্যসাহিত্যের ভাব-কল্পনাকে আত্মসাৎ করবার এবং নিজের ভাষায় এটাকে প্রকাশ করবার কিংবা সার্থকভাবে প্রয়োগের বিস্ময়কর ক্ষমতা কেবলমাত্র মধুসূদনেরই ছিল। হিন্দু কলেজ ও বিশপস্ কলেজে পড়বার সুবাদে হিব্রু, লাতিন, গ্রিক প্রভৃতি পাশ্চাত্য ভাষাসমেত সংস্কৃত ভাষাও তার অধীত ছিল। ফলে সেইসব ভাষার কবিদের শ্রেষ্ঠ কাব্য রচনাসম্ভারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। পরে তিনি যখন ঘটনা চক্রে চালিত হয়ে প্রথমে নাটক ও পরে কাব্য রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন, তখন দেখা গিয়েছিল যে, পাশ্চাত্য কাব্যের শ্রেষ্ঠসম্পদ তার কাব্যের মধ্যে সমাহৃত হয়েছে। আরও দেখা গিয়েছিল যে তাঁর সৃষ্টির ফলে বাংলাসাহিত্যের গতি ভিন্নমুখী হয়ে গিয়েছে ও বাংলা কাব্যের প্রকৃতিও বদলে গিয়েছে। বিদেশী কাব্যের সম্পদ আহরণ করে মধুসূদন বঙ্গসাহিত্যে নতুন একটা আকর্ষণী শক্তির সঞ্চার করেছিলেন। নবযুগের বাঙালি কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম কবি ছিলেন যিনি বাংলা ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথা ভাঙার কাজটি তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন । তাঁর প্রতিভার বিশেষত্ব এই যে, তাঁর ছিল অনন্য সাধারণ মৌলিকতা এবং সেই মৌলিকতা প্রকাশের জন্য অভিনব বাকমূর্তি নির্মাণ। এই শৈলী দিয়ে বাংলা বাণী নির্মিতিকে তিনি মহত্ত্বম গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ড. অসিত কুমার সেনগুপ্ত তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে লিখছেন, ‘মধুসূদনের প্রচণ্ড আঘাতে পাথর জেগে উঠল, আর পাথরের তলায় বন্দিনী মন্দাকিনীও মুক্তি পেল। উনিশ শতকী রেনেসাঁসের প্রতীক হিসেবে তাঁকে ধরা হয়ে থাকে; পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যভূমির যে সংযোগ হল এবং যে সংযোগের বিদ্যুৎস্পর্শ ছড়িয়ে পড়ল প্রধানতঃ সাহিত্যে, মধুসূদন তারই নকিব। এতদিন ধরে আমরা যে জীবনপ্রত্যয় ও কাব্যাদর্শের মধ্যে নিরুদ্বেগ জীবনযাপন করছিলাম, বাণীর বিদ্রোহী সন্তান মধুসূদন সেই শান্তির নীড়ে বজ্রাঘাত করলেন।’
বাল্মীকি কিংবা কীর্ত্তিবাসী রামায়নের ভক্ত পাঠককুলের কাছে ত্রেতাযুগের অবতার দশরথপুত্র রামচন্দ্র বীরপুরুষ, তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম, অন্যদিকে রাবণ ‘দূরাচারী রাক্ষস’। পরস্ত্রী অপহরণের পাপ তাকে চূড়ান্ত পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠায় সে অবশ্যই বধযোগ্য। সাধারণ পাঠককূলের কাছে পূর্বাপর সকল সাহিত্যস্রষ্টা তাদের কবিতা, গান, ছড়া-পাঁচালি ইত্যাদির মাধ্যমে এভাবেই উপস্থাপন করেছেন রামচন্দ্রকে। যা তাদের মানসলোকে স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিয়েছে। সেখানে বাদ সাধলেন দত্তকুলোদ্ভব কবি মধুসূদন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিকযুগ) গ্রন্থে রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখছেন ‘প্রচলিত মূল্যবোধ ও সনাতন ভারতীয় আদর্শের বিরুদ্ধে উনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি তরুণদের বিদ্রোহ ও তার স্বাধীন চিন্তার প্রতিচ্ছায়া এই কাব্যে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। ‘মেঘনাদবধে’ মধুসূদন রাম-লক্ষণ অপেক্ষা রাবণ-মেঘনাদকে বড় করিয়া প্রচলিত আদর্শের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়াছেন; এই কাব্যের রাবণ ও মেঘনাদ অসভ্য রাক্ষস নয়। তাহারা সুসভ্য রাজা ও রাজপুত্র Ñমহত্ব,বীরত্ব, দেশপ্রেম প্রভৃতি স˜গুণে ভূষিত।’
তাই তিনি রামচন্দ্রের বীরত্বের প্রতি অনেক প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিলেন। মেঘনাদবধ কাব্যে তিনি দেখালেন রামের নির্ভরতা তার নিজ শক্তির উপরে নয়। মেঘনাদকে পরাজিত করার জন্য রাম আরাধনা করছেন মহিষমর্দ্দিনি দেবীর। দেবী প্রসন্ন হয়ে বর দিচ্ছেন-‘নগেন্দ্রনন্দিনি, আনন্দে, তথাস্তু, বলি আশীষিলা মাতা’ এভাবেই দেবতাদের অনুগ্রহ, বানর সৈন্য, বীর হনুমান, সর্বোপরি রাবণের সহোদর ভাই বিভীষণের দেশদ্রোহিতা, রাজা হবার বাসনায় শত্রুপক্ষ রামের প্রতি অন্যায় আনুগত্য, যুদ্ধে একের পর এক চাতুর্য এসব বিবেচনায় রামের শ্রেষ্ঠত্ব অগ্রগণ্য নয়। ‘নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে দণ্ডি মেঘনাদে’ এই অভিপ্রায়ে মায়াবলে চাতুর্যের সঙ্গে বিভীষণ লক্ষণকে নিয়ে লঙ্কা নগরীতে প্রবেশ করে। এখানেও দৈবশক্তির সহায়তা- ‘কহ সৌমিত্রিরে তুমি পশিতে নগরে নির্ভয়ে। সন্তুষ্ট হয়ে বর দিনু আমি, সংহারিবে এ সংগ্রামে সুমিত্রানন্দন!’ দেববলে বলিয়ান হয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিরস্ত্র মেঘনাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপস্থিত লক্ষণ তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। অসহায় মেঘনাদ হাতের কাছে থাকা পূজার শঙ্খ, কোষা, পূজার ঘণ্টা, এসব দিয়ে লক্ষণকে আঘাত করছে। কিন্তু সেগুলো তার শরীরে স্পর্শ করছে না। অদৃশ্য মায়াদেবী মায়াবলে সে সব সরিয়ে নিচ্ছে। এক পর্যায়ে লক্ষণের পেছনে বিভীষণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিষাদ আর আত্মগ্লানিতে ভরে উঠে মেঘনাদের মন। পিতৃব্য বিভীষণকে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব আর গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই ভুল পথ থেকে সরে দাঁড়াবার অনুরোধ করছেন। বলছেন ‘হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?’ মধুসূদন মেঘনাদের মুখ দিয়ে লক্ষণকে তস্কর বলেছেন, চন্ডাল বলেছেন, প্রশ্ন করেছেন ‘কে বা সে অধম রাম?’ শেষবারের মতো বিভীষণের কাছে জানতে চেয়েছেন ‘কহ মহারথী একি মহারথী প্রথা? লক্ষণের শরাঘাতে মেঘনাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরে পরতে থাকে। কবি মধুসূদন এক অপূর্ব অথচ মর্মস্পর্শী ভাষায় এর বর্ণনা দিয়েছেন ‘হায় রে, রুধির-ধারা ভূধর শরীরে বহে বরিষার কালে জলশ্রোত :’। মহাকাব্যের ট্রাজিক পরিণতির এক শিল্পীত বর্ণনা। রক্তে ভেসে নিজের আসন্ন মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করে লক্ষণকে উদ্দেশ্যে মেঘনাদ বলছেন ‘বীরকুলগ্লানি, সুমিত্রানন্দন, তুই শতধিক তোরে! রাবণনন্দন আমি না ডরি শমনে! ’ আর এক দৃষ্টান্ত এই কাব্যের শেষাংশে প্রমীলা ও রাবণের বিলাপ! শোকাতুর লঙ্কাবাসী, শোকে স্থবির প্রকৃতির বর্ণনা, সীতা ও সরমার কথোপকথন, বিশেষতঃ সরমার মুখে মেঘনাদের মৃত্যু সংবাদ জেনে মেঘনাদের মৃত্যুতে প্রমীলার দুঃখের সমব্যথী হয়ে সীতা বলছেন ‘কুক্ষণে জনম মম সরমা রাক্ষসী!/ সুখের প্রদীপ, সখি, নিবাই লো সদা/ প্রবেশী যে গৃহে, হায়, অমঙ্গলারূপী/ আমি, পোড়া ভাগ্যে এই লিখিলা বিধাতা!’ এদিকে মেঘনাদের চিতা সাজানো হয়েছে। রণসাজে সজ্জিত হয়ে স্বামীর সঙ্গে সহমরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন প্রমীলা। বার বার শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন রাবণ। চিতায় আরোহণ করলেন প্রমীলা। প্রজ্ব¡লিত চিতায় আগ্নেয় রথ এসে দুজনকেই স্বর্গ অভিমুখে নিয়ে চললো, ‘উঠিল গগনপথে রথবর বেগে;’ এখানেও কবি মেঘনাদকে হেরে যেতে দেননি। শেষ পর্যায়ে এসেও মেঘনাদকে গরীয়ান দেখাতে চেয়েছেন। বিষাদ দিয়ে শেষ হয়েছে এই মহাকাব্য। উপমা প্রয়োগে শারদীয় দুর্গোৎসবের দেবী বিসর্জনের বিষাদ ধ্বনিত হয়েছে কবিতায়- ‘বিসর্জ্জি প্রতিমা যেন দশমী দিবসে/সপ্ত দিবানিশি লঙ্কা কাঁদিলা বিষাদে’। প্রথা বিরোধিতার পাশাপাশি ট্রাজিক পরিণতির মহাকাব্য সৃষ্টিতে অনন্য মধুসূদন। মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত এই নক্ষত্রমানবের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী অতিক্রান্ত বর্ষের স্মরণ ও আনত শ্রদ্ধা।
বাণীর বিদ্রোহী সন্তান
শীর্ষ সংবাদ: