মাইকেল মধুসূদন দত্ত
যশোরের কেশবপুরের কপোতাক্ষ পাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রামে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মধুমেলায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে সাতদিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী।
মেলা ঘিরে এখন বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে মধুপল্লী। মেলার মাঠসহ কপোতাক্ষ নদ, মধুপল্লীতে কবির ভাস্কর্য, প্রসূতিস্থল, কাছারিবাড়ি, কবির স্মৃতিবিজড়িত আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দর্শনার্থীদের দেখানো জন্য মুছে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদপাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জমিদার বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আগামী ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী। কবির ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে মেলা। সপ্তাহব্যাপী চলবে মধুমেলা
বিকেলে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে মেলার ভেতর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মেলা, যাত্রা, সার্কাস, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপ, জাদু প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হস্তশিল্প, কুটির শিল্পসহ হরেক রকমের স্টল ও বিভিন্ন দোকানপাটের পসরা বসেছে। খ্যাতনামা দেশিবিদেশি পর্যটকসহ লাখ লাখ লোকের আনাগোনায় মুখরিত হবে মরা কপোতাক্ষ নদের অববাহিকা। এছাড়া মধুমেলার উন্মুক্তমঞ্চে কবির জীবনের ওপরে প্রতিদিন চলবে আলোচনা সভা, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মধুমেলাকে ঘিরে দেশিবিদেশি পর্যটক ও বনভোজন সদস্যদের আগমনে সাগরদাঁড়িতে এখন বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। পর্যটকরা সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীর মধ্যে কবির জন্মভিটা, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে দেখবেন। কেউ বা পুকুর পাড়ে বসে সময় কাটাবেন। অধিকাংশই আবার নৌকায় করে ঘুরবেন কপোতাক্ষ নদে। কেউ কেউ করবেন রান্নার কাজ। সংস্কৃতিপ্রেমীরা কপোতাক্ষ নদ পাড়ে গোল করে চেয়ারে বসে মধুকবির লেখা কবিতা পাঠ করবেন। পিকনিকের ছেলেমেয়েদের নাচ-গান, নৃত্য ও নারীদের চেয়ার সিটিং বালিশসহ নানা ধরনের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায় সাগরদাঁড়ি হয়ে উঠেবে উৎসবমুখর।
মেলার মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেন খান জানান, মেলার মাঠে আসা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনোদনের জন্য সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের সব আইটেম রাখা হয়েছে এবারের মধুমেলায়।
তিনি বলেন, গত বছর মধুমেলায় মানুষের ভিড় ছিল বেশি। সে কারণে দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে মেলার মাঠের সমপরিমাণ আর একটি জায়গা ৮ লাখ টাকা দিয়ে ৭ দিনের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীতে নিয়োজিত কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, মধুকবির টানে তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে দর্শনার্থী আসা শুরু করেছে। শুক্র, শনিবার সরকারি ছুটিতে ভিড় বাড়বে। এখানে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। তবে জেলা পরিষদ ও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে একটি বাংলো নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে।
কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিপি, আর্মিসহ সকল বাহিনী মেলাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। থাকবে ভ্রাম্যমান আদালতও। সিসি ক্যামোররা আওয়াতায় থাকা মেলায় পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি লাখ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে মধুমেলায়।
সাজিদ