শীতের সকাল। চারদিকে কুয়াশার চাঁদরে আবছা আবছা ঘোর আঁধার। কোথায় জানি সূয্যি মামা উঁকি দিচ্ছে তা বলা খুবই মুশকিল? আমি বাইরে এসে দেখি, শীতের বুড়ি সত্যি যেন অভিমান করেছে। যার ফলে আবহাওয়ার করুণ পরিণতি! এসব দেখে মন খারাপ হলো খুব। এখন বাইরে যাওয়া কষ্টসাধ্য। একটু একটু মনে পড়ল, ‘সূয্যি মামা’ ছড়াটি-
‘সূয্যি মামা এবার শোনো
একটু ধরো হাল
রাগ করেছে শীতের বুড়ি
তাইতো বেসামাল...’
যাই হোক, প্রতি বছরের ন্যায় শীতকালে বাবা গরিব মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করি, ‘আচ্ছা বাবা, শীতের বুড়ির কোনো মায়া-দয়া নেই! তার করুণ দাপটে আমরা সকলেই হতাশ। বিশেষ করে পাড়াগাঁয়ে জামিল চাচার কথা ভাবতে অবাক লাগে? তাদের তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয়...! কিভাবে তারা এই কনকনে শীত তাড়াবে?’
বাবা আমাকে একটু সান্ত¦¦না দিয়ে বলল, ‘শোনো রাফিয়া, ঋতু পরিক্রমায় দুমাস পরপর একটি করে ঋতু বদল হয়। যার মধ্যে শীতকাল অন্যতম। তাছাড়া প্রকৃতির খামখেয়ালি আমাদের মেনে নিতে হয়। এ জন্য মন খারাপের কিছুই নেই!’ তখন বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রই। আর একটা কথা খেয়াল করেছি, মানুষের প্রতি বাবার নীতি-নৈতিকতার অভাব ছিল না। মাঝেমধ্যে বাবা আমাকে উপদেশ দিতেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য!’
ধীরে ধীরে বাবার দেওয়া উপদেশগুলো মনে বাসা বেঁধেছে। মানুষের প্রতি কিছুটা মায়া-মমতা অনুভব করি। আমার মাটির ব্যাংকটা টাকা ভর্তি হতে প্রায় ছুঁই ছুঁই। মনে মনে ভাবলাম, পাড়াগাঁয়ে যারা নিঃস্ব, যাদের শীত তাড়ানোর মতো সাধ্য নেই, তাদেরকে দান করব। তবে যেই কথা, সেই কাজ। শখের মাটির ব্যাংকটা ভেঙে চুরমার। ঘটনাক্রমে বাবা একদিন জানতে পারল। তখন বাবার কাছে যেতে একটু ভয় পাচ্ছি। এবার বাবা আমাকে ডেকে বলল, ‘সাব্বাস, লক্ষ্মী মেয়ে রাফিয়া! ভয় পাবার কিছু নেই, আজ দুষ্টু শীতের বুড়ি তোমার কাছে হার মেনেছে। এখন তুমি জয়ী!’ তাছাড়া মা কিন্তু আমাকে অভিবাদন জানাতে ভুলে যায়নি। তখন নিজেকে ধন্য মনে করলাম। আর একটু স্বস্তি পেলাম।