ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১

ত্রিমাত্রিক ভালোবাসার উপন্যাস

আশরাফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

ত্রিমাত্রিক ভালোবাসার উপন্যাস

ত্রিমাত্রিক ভালোবাসার উপন্যাস ‘অচিন ফুলের সুবাস।’ মাতৃহারা টুশি ও পারমিতা, তৌফিক ও মিনার- এই চারটি চরিত্রের সম্পর্কের কড়ি ও কোমলে তৈরি এই উপন্যাস।কাহিনীর বাঁকে বাঁকে দেখা মেলে আরও অনেক নারী ও পুরুষের।কেন্দ্রীয় চরিত্র টুশির চলতে পথে যাদের সাথে নিবিষ্ট পাঠকের পরিচয় হয়, তারা প্রধান চরিত্র না হলেও স্বভাবে বৈশিষ্টপূর্ণ এবং কিছু সময়ের জন্যে হলেও অপরিহার্য হয়ে উঠেন কাহিনী নির্মিতির মুন্সিয়ানার গুণে।
উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় টুশি যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। পাশের আসনে বসে যাচ্ছেন আরেকজন প্রৌঢ় অধ্যাপক। এই অধ্যাপকের একটাই দৃশ্য। কিন্তু কাহিনীর শুরুতে রাশভারি এই চরিত্রটির উঁকি মারা যেন বা খুব দরকার ছিলো, যদিও তার আর দেখা মেলেনি একবারও। মনিরা পারভিন বাইরে থেকে মমতাময়ী । আসলে স্বার্থপর। মনিরা টুশির সৎমা। তাকে হাড়ে হাড়ে চেনে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া টুশি।হঠাৎ তৌফিক এসে যায় একলা একা টুশির জীবনে। টুশি স্নেহময় পিতা আশরাফ আহমদ ; থাকেন ঠাকুরগাঁওয়ে টুশির সৎমা মনিরার সাথে।তৌফিক টুশির প্রতি খুব কেয়ারিং। মাঝেমধ্যে রোমান্টিক হয়ে গেলেও সীমা ছাড়িয়ে যায় না।
 সাবলেট বাসায় সংসার পাতে টুশি আর তৌফিক। ওদের প্রেমময় সংসারে কাঁটার মতো এসে পড়ে শিশু পারমিতা। পারমিতা তৌফিক ও তার মা-বোনের চোখে কাঁটা হলেও টুশির পরম আরাধ্য। নিষ্পাপ এই মেয়েটির সাথে এক নিবিড় গভীর অনাবিল মমতার বন্ধনে বাঁধা পড়ে টুশি। হঠাৎ পারমিতার মা মারা যাওয়ার পর মাতৃস্নেহে শিশুটিকে বুকে টেনে নেয় টুশি।পারমিতাকে টুশি নিয়ে আসে নিজের কাছে।পারমিতার বাবা মিনার হাফ ছেড়ে বাঁচলেও তৌফিক বিষয়টি স্বাভাকিভাবে নিতে পারেনি।পারমিতাকে নিয়ে বিরক্ত তৌফিকের মা ও বোনও । টুশির প্রতি কৃতজ্ঞ পারমিতার বিপত্নিক পিতা মিনার । প্রতিদিন অফিস শেষে মিনার এ বাড়িতে এসে মেয়েকে দেখে যায়। কিন্তু তার ও মেয়ের জন্যে টুশি-তৌফিকের সংসারে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয় সে ব্যপারেও খুব সাবধান মিনার, যদিও টুশি মিনারকে দেখে বোনের চোখে। মিনারও তা-ই। তারপরেও সাবধানতা। মিনার কখনই তৌফিকের অবর্তমানে মেয়েকে দেখতে আসে না। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। টুশি ও তৌফিকের সংসারে ঝড় উঠলো।তৌফিকের মনে উপ্ত হলো সন্দেহের বীজ। বিষ বৃক্ষের বড় হতে লাগলো সেই সন্দেহ। পারমিতাতে দিয়ে আসতে হলো বাবার কাছে। অসহায় পিতা মেয়েকে নিয়ে চাকরি-বাকরি ছেড়ে পাড়ি জমালেন গ্রামে। টুশি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবে। বাঁধ সাধলো তৌফিক।সংসারে আগুন লাগলো। টুশি একটা কলেজে চাকরি পেলো। কিন্তু টুশির আর তৌফিকের সংসারে ফিরে যাওয়া হলো না। আবার টুশির জার্নি বাই ট্রেন। গন্তব্য ফেনীর মির্জাগঞ্জ – যেখানে পারমিতাকে নিয়ে গেছে মিনার।
টুশি পারমিতাকে ঢাকায় নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাইলো। তখনই ঘটলো কাহিনীর নাটকীয় মোড় পরিবর্তন।কেন কিভাবে ঘটে গেলো সেই পরিবর্তন ; সেটা সত্যিই কৌতূহল উদ্দীপক।টুশি ও মিনারের হৃদয়াবেগের কী নাম দেওয়া যায়! এটাকে প্লেটোনিক লাভের দৃষ্টান্ত বলা যায় কি?মিনারের প্রতি টুশির কিংবা টুশির প্রতি মিনারের হৃদয়াবেগ কি সংগোপনে অবচেতনে দানা বেঁধে উঠেছিলো অনেক আগেই।সন্হে নেই, এই বই পাঠকচিত্ত দোলায়িত করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ইমন চৌধুরীর সাবলীল রচনাভঙ্গি পাঠককে টেনে নিয়ে যায় অবলীলায়। ঝড়ো প্রেমের এই উপন্যাসটি হতে পারে পাঠকের আনন্দপাঠের উপলক্ষ্য । রাজীব হাসানের আঁকা প্রাণবন্ত প্রচ্ছদ ও ঝকেঝকে ছাপা বইটিকে করেছে আরও বেশি আকর্ষণীয়। অচিন ফুলের সুবাস বইটি প্রকাশ করেছেন রতনচন্দ্র পাল গ্রন্থ কুটির, বাংলাবাজার, ঢাকা মূল্য: ৪৩০ টাকা মাত্র।

×