আমার সন্তান
জরিনা আখতার
কেন যে বুঝতে চাস না তুই
তোর সবটাই আমার কল্পনার-
বাস্তবতার বাতাবরণে কোথাও তোর অস্তিত্ব নেই ,
কল্পনার মহাসমুদ্র সিঞ্চন করে তিল তিল ঐশ্বর্যে
তোকে আমি নির্মাণ করেছি-
তুই আমার অনুপম নির্মিতি;
শৈশবে মাকে উল-কাঁটায় বেবিকোট বুনতে দেখেছিলাম আমার জন্য,
আমিও সে রকম স্বপ্নের উল-কাঁটায় তোকে অবিরাম বুনে চলেছি-
তুই আমার শীতের ওম ;
এই যে সেদিন একটি শব্দের প্রতীক্ষায়
মধ্যরাতে কবিতার টেবিলে বসে আছি-
তুই হঠাৎ জেগে উঠলি,
এভাবে চাইনি তোকে
শুধু আমি চাইলেই আসবি তুই,
এই যে তোকে নিয়ে সব জায়গায় যাই
সভা-সমিতি, শপিংমল কোথায় নয়,
এক কবিতা পাঠের আসরে
আমি যখন কবিতা পড়ছিলাম
তুই দর্শক সারিতে বসে জুলজুল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলি-
তোর চোখের দৃষ্টিতে কীযে জাদু !
আমিও তোর চোখের দিকে গভীর আবেগে তাকিয়ে
কখন যে কবিতা পাঠ শেষ করেছিলাম
জানতেও পারিনি;
তোকে আমি জন্ম দিইনি
ভাবনার নিপুণ রেখায় এঁকেছি তোকে-
তুই আমার পৃথিবীর অবিস্মরণীয় শিল্পকর্ম;
তুই আমার শস্যকণা, সারা বছরের সঞ্চিত ফসল
যেমন কৃষক তার পূর্ণ গোলাঘর নিয়ে স্বস্তিতে থাকে
আমিও তেমন শান্তির সম্পূর্ণতায় আনন্দে থাকি,
আমার আনন্দ তুই;
কোনো নাম ধরে ডাকে না তোকে কেউ
কোথাও কোনো জন্মদিন পালিত হয় না তোর,
এই যে দেয়ালে ক্যালেন্ডার ঝুলছে
সেখানে কোথাও তোর জন্মতারিখ নেই,
তোর জন্মতারিখ লেখা আছে শুধু আমার বুকের পাঁজরে-
আর ছোট্ট সুন্দর একটি নাম।
ফুল ফুল ভুল
মাহমুদুজ্জামান জামী
তুই একটা বেদম
বেহুদা স্বপ্নচারী!
তোকে তো বুঝায়ে
কোনো লাভ নাই
তুই আর আসবি না লাইনে।
কী জানি কী তোর মনে
ঘুরতে থাকে সারাদিন?
কী অলীক পাখি ওড়ে
তোর আকাশে!
আর বাতাসে উড়িয়ে ঢের
স্বপ্নের কাহন
কি পেলি আজীবন?
কী একটা এলোমেলো
চরাচ্ছন্ন নদী হয়ে গেলি তুই!
তোকে দেখলে ঠিক মনে পড়ে-
ঝড়ে খাওয়া, পাতাছাড়া
ভাঙা গাছ- ২৯শে এপ্রিল!