ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আবু সালেক। এমন সময় শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। কে ঠেকায় আবু সালেককে! সীমানা পেরিয়ে চলে গেল ভারতের আগরতলায়। সেখানে তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য লোক বাছাই চলছিল। কিন্তু ও তো একদম ছোট, বাচ্চা! ওকে কেউ-ই নিতে চাইল না। আর তাই শুনে ও তো একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ওর কান্না দেখে ওকে আর বাদ দিতে পারলেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখাল ছোট্ট আবু সালেক।
আগরতলা থেকে ওকে নিয়ে যাওয়া হলো মেলাগড় ক্যাম্পে। তারপর বড় যোদ্ধাদের সঙ্গে শুরু করল যুদ্ধ। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধ। এমনি একদিন ওরা যুদ্ধ করছিল চন্দ্রপুর গ্রামে। আবু সালেক সেই যুদ্ধে ছিল বাংকারে। সে এক ভীষণ যুদ্ধ। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। আর পাকবাহিনীও সেদিন ছিল সুবিধাজনক জায়গায়। আবু সালেকের দল তেমন একটা ভালো অবস্থানে নেই। একপর্যায়ে ওদের পক্ষ টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। এখন ওদের সামনে একটাই রাস্তা, পিছু হটতে হবে। কিন্তু চাইলেই কি আর পিছু হটা যায়, একজনকে তো ব্যাকআপ দিতে হবে। নইলে যে সবাই মারা পড়বে। এগিয়ে এলো সবার ছোট আবু সালেক। ছোট্ট কাঁধে তুলে নিল বিশাল এক দায়িত্ব। ক্রমাগত গুলি করতে লাগল পাকবাহিনীর ক্যাম্প লক্ষ্য করে। আর সেই অবসরে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেল অন্যরা। ও কিন্তু গুলি করা থামাল না। এক সময় পাকআর্মিরা মনে করল, মুক্তিযোদ্ধারা মনে হয় খুব সংগঠিতভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে। ফলে ওরাও পিছু হটে গেল। বাংকারে থেকে গেল শুধু আবু সালেক। একসময় রাত শেষ হয়ে সকাল হয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিল, গোলাগুলি যখন থেমেছে, আবু সালেক নিশ্চয়ই শহীদ হয়েছে। কিন্তু বাংকারে গিয়ে তো ওরা অবাক! কিশোর আবু সালেক একা সেখানে বসে আছে। দেখে ওরা যে কী খুশি হলো!
মোহাম্মদ আলী